পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দায়রা সহকারী রামেশ্বর সাহার (৫০) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার রাত ১০টায় আদালতের সেরেস্তা (কক্ষ) থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠায় পুলিশ।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানায়, প্রতিদিনের মতো অফিস শেষ করে রোববার রাতেও সেরেস্তায় বসে কাজ করছিলেন রামেশ্বর সাহা। পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে তার উপর কাজের অতিরিক্ত চাপ ছিল। এজন্য রাত পৌনে ৯টার দিকে ফিরতে দেরি হওয়ার কথা জানিয়ে বাসায় ছোট মেয়েকে ফোন করেন তিনি। ৯টার কিছু পরে নৈশপ্রহরী আকবর আলী আদালতের তৃতীয় তলার সেরেস্তায় আলো দেখতে পান। তিনি উপরে উঠে ঝুলন্ত মরদেহ দেখে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের খবর দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সেরেস্তা কক্ষের একটি জানালার গ্রিলে ঝুলে ছিল মরদেহটি। কিন্ত গলায় ফাঁস লাগানো লম্বা প্লাস্টিকের রশি থাকলেও মরদেহ একটি চেয়ারে উপর হাঁটু গাড়া অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। অনেকের ধারণা, গলায় ফাঁস লাগানোর পর মরদেহের ভারে প্লাস্টিকের রশি লম্বা হয়ে এমন হতে পারে।
নিহতের ছোট মেয়ে চৈতি রানী সাহা বলেন, বাবা আদালতের সব কাজ একাই করতেন। অনেক রাত পর্যন্ত তাকে কাজ করতে হতো। কয়েক দিন আগে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করার সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে অসুস্থতার কথা বলেও ছুটি পাননি। এজন্য মানষিকভাবে বিপর্যস্থ ছিলেন। মৃত্যুর খবরের আগে তিনি ফোন করে দেরিতে আসার কথা বলেছিলেন। সে বারবার বলছিল, ‘জজ সাহেবের জন্যই আমার বাবা মারা গেছেন’।
"
এরআগেও রাতভর কাজ করতে গিয়ে একাধিকবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এজন্য তাকে আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। অসুস্থতার কারণে তিনি বারবার ছুটি চেয়েও পাননি। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন থেকে মানষিক চাপে ছিলেন রামেশ্বর। মরদেহ উদ্ধারের খবর শুনেই পরিবারের সদস্য এবং প্রতিবেশিদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। আদালতের বিচারকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটে আসেন আদালত প্রাঙ্গনে।
সদর থানার ওসি মমিনুল ইসলাম মমিন জানান, প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
আদালতের পাশেই কায়েতপাড়া মহল্লায় দুই মেয়েসহ চারজনের পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছিলেন রামেশ্বর সাহা। বড় মেয়ে ঋতুপর্ণা রায় সাহার কিছুদিন আগে বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে চৈতি রানী সাহা স্থানীয় একটি স্কুলের অষ্টম শেণির শিক্ষার্থী।