আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

কারমাইকেল কলেজের ৬ শিক্ষক হত্যার ভয়ানক সেই দিন আজ

শনিবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৬, দুপুর ১২:৩৭

রিয়াদ আনোয়ার শুভ

কিছুক্ষণের মধ্যেই এক এক করে ধরে নিয়ে আসা হলো অধ্যাপক সুনীল বরণ চক্রবর্তী, অধ্যাপক রামকৃষ্ণ অধিকারী, অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন রায় এবং অধ্যাপক কালাচাঁদ রায়কে। শুরু হলো রাইফেলের বাট দিয়ে বেধড়ক পিটুনি। অধ্যাপক কালাচাঁদ রায়ের সহধর্মিণী মঞ্জুশ্রী রায় সহ্য করতে পারলেন না তাঁর পতিসহ অন্যান্য শিক্ষকদের উপরে এমন অমানুষিক নির্যাতন। এক ছুটে তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং সাথে সাথে ঘাতকের দল তাঁকেও রেহাই দিলো না। রাইফেলের বাট দিয়ে মারধোর, বুট পড়া পায়ের লাথি মারতে মারতে সবাইকে টেনে হিঁচড়ে তোলা হলো গাড়িতে। রাতের নিস্তব্ধতায় আবারও গাড়ির ইঞ্জিন চালুর শব্দ ভেসে আসতে লাগলো। এবং এক সময় সেই শব্দ আর শোনা গেলো না। পাক হানাদার বাহিনীর কনভয় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছে। এদিকে শিক্ষকদের বাড়িগুলো থেকে ভেসে আসতে থাকলো মরা কান্না। আস্তে আস্তে এক জন এক জন করে বের হয়ে আসলো ঐ সব বাসার বাসিন্দারা। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আবারও কান্না। যেন একজন আর একজন সাহস দিয়ে যাচ্ছেন।

কারমাইকেল কলেজের ক্যাম্পাস থেকে মিলিটারিদের গাড়ির কনভয় বের হয়ে এগিয়ে চললো রংপুর-বগুড়া মহাসড়ক ধরে। প্রায় দেড় মাইল যাওয়ার পরে দমদমা ব্রীজ এর কাছে গিয়ে হানাদারদের কনভয় থামলো। রাস্তা সংলগ্ন একটি বাঁশের ঝাঁরে নিয়ে যাওয়া হলো হাত পিছ মোরা করে বাঁধা শিক্ষকদের। দাড় করিয়ে দেওয়া হলো সারিবদ্ধভাবে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই গর্জে উঠলো হানাদারদের রাইফেল। মুহূর্তের মধ্যে লুটিয়ে পড়লেন কারমাইকেল কলেজের শিক্ষক অধ্যাপক সুনীল বরণ চক্রবর্তী, অধ্যাপক রামকৃষ্ণ অধিকারী, অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন রায়, অধ্যাপক কালাচাঁদ রায় এবং তাঁর সহধর্মিণী মঞ্জুশ্রী রায়। মৃতদেহগুলি সেখানেই রেখে চলে গেলো পাক বাহিনীর গাড়ি বহর।

পরদিন সকালে তাঁরা বাইরে বেরিয়ে আসলেন। বাঁশের ঝাড়ের কাছে গিয়েই থমকে দাঁড়ালেন তাঁরা। একজনের উপরে আর একজন এমনভাবে পড়ে রয়েছে কয়েকটি লাশ। কারোরই আর বুঝতে বাকি থাকলো না, দেশের শিক্ষিত কোন বাঙ্গালীকেই রেহাই দেবে না হানাদারের দল।

domdomaসপ্তাহ খানেকের মধ্যে ৭ জুন তারিখে ঐ এলাকার মানুষ আবারও রাতের নিস্তব্ধতার মধ্যে হটাত করে শুনতে পারলেন গুলির শব্দ। একটি দুইটি নয়, থেমে থেমে সারা রাত ধরেই শোনা গেলো গুলির শব্দ এবং মৃত্যুর মুখে দাঁড়ানো একদল মানুষের আহাজারি। কয়েকজন দুঃসাহসী মানুষ চুপি চুপি ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থেকে দেখলেন পাক হানাদারদের কনভয়ের সাথে তিনটি ট্রাক এসে থামলো দমদমা ব্রীজের পশ্চিম পাশে। ট্রাকগুলো থেকে নামিয়ে আনা হলো দুই শতাধিক সাধারণ মানুষকে। লাইন করিয়ে দাঁড় করিয়ে খুনের নেশার অমানুষ বনে যাওয়া পাক হানাদার বাহিনীর হাতের অস্ত্রগুলো গর্জে উঠলো। অজস্র মানুষের আহাজারি এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢলে পরা। এমন করে প্রায় দেড় ঘণ্টা ব্যাপী চললো নির্মম ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। অবশেষে চলতে শুরু করলো মিলিটারিদের গাড়িগুলো। একদল নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে হত্যা করে যেন বিজয়ী বীরের বেশে ফিরে গেলো হানাদারেরা। চোখে মুখে তাদের পৈশাচিক উল্লাস।

স্থানীয় লোকজনের কাছে পরে জানা যায়, স্বাধীনতার বেশ কিছুদিন পরে ঐ বাঁশ ঝাড় সংলগ্ন একটি পার্কের মতো করা হয়েছিল। নব্বই এর দশকের মাঝের দিকে এসে ঐ পার্ক ভেঙ্গে ফেলা হয়।

রংপুরের অসংখ্য বধ্যভূমির মধ্যে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের দমদমা ব্রীজ সংলগ্ন এই বধ্যভূমিতে কয়েক বছর আগে একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু অবহেলায় অযত্নে এখনও সার্বজনীন হয়ে উঠতে পারেনি এই বধ্যভূমি।

মন্তব্য করুন


 

Link copied