আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

 width=
 
শিরোনাম: কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা       ২৯ রমজান কি অফিস খোলা?       আজ ঐতিহাসিক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস       লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ হস্তান্তর      

 width=
 

কাঁটাতারের এপারে ভারতের ৭ গ্রাম

বৃহস্পতিবার, ৯ জুন ২০১৬, দুপুর ১২:৪৬

মোমিনপাড়া থেকে সোজা পূর্বে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া। ৭টি গ্রাম বাদ দিয়েই কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। বেড়া থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ভেতরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের বেরুবাড়ী এলাকার ৭টি গ্রাম। হঠাৎ করে কেউ এখানে বেড়াতে এলে বুঝতেই পারবে না তারা কোন দেশের মাটিতে অবস্থান করছেন। যে যার মতো করে যাওয়া- আসা করছে উভয় দেশের নাগরিক। তাদের আচার-আচরণ, চলাফেরা ও বেশভূষা দেখে বোঝার উপায় নেই, তারা বাংলাদেশী না ভারতীয়।

সরজমিন গিয়ে জানা যায়, কাঁটাতারের বেড়ার এপাশে ভারতের সিপাইপাড়া, অন্তুপাড়া, খুদিপাড়া, খেকির ডাঙ্গা, বাঙ্গালপাড়া, নতুনপাড়া ও হিন্দুপাড়া নামে ৭ গ্রাম। এর মধ্যে শুধু হিন্দুপাড়াতে হিন্দুদের বসবাস। বাকি ৬ গ্রামের সবাই মুসলমান। জলপাইগুড়ি জেলার নিয়ন্ত্রণে ওই ৭ গ্রাম। কাঁটাতারের বেড়ার গেট দিয়ে তাদের ভারতে যাতায়াত করতে হয়। বাজারঘাট করেন বেরুবাড়ী বাজারে। যা এখান থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে। রেশন কার্ডের পণ্যও আনতে যেতে হয় বেরুবাড়ীতে। বেরুবাড়ী বাজার পঞ্চগড় জেলা শহরের মতো। সবকিছু পাওয়া যায় সেখানে। বেরুবাড়ী থেকে জলপাইগুড়ির দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। মোমিনপাড়ায় সাব সীমানা পিলারের কাছে গিয়ে দেখা হয় ভারতীয় নাগরিক নবিউল ইসলাম প্রধানের। তার বাড়ি ভারতের সিপাইপাড়া গ্রামে। তিনি বাংলাদেশী সীমানায় ঢুকে বাংলাদেশী নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।

ভারতীয় নাগরিক হয়ে বাংলাদেশের সীমানায় কেন প্রশ্ন করা হলে প্রধান বলেন, ভাই আমি ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু আমাদের এখানে কোন সীমানা-টিমানা নেই। আমরা যখন তখন চলে আসি বাংলাদেশি এলাকায়। আর বাংলাদেশি এলাকার সবাই আমাদের এলাকায় যায়। আমাদের কোনো নিয়ম-বাঁধা নেই। আমাদের দেখে কেউ বুঝতেও পারবে না আমরা কোন্‌ দেশের নাগরিক। মাসে দুই-তিনবার আমি বাংলাদেশের হাড়িভাসা বাজারে যাই। আমাদের গ্রামের অনেক মানুষ হাড়িভাসায় যায়। তবে বাংলাদেশের মানুষ বেরুবাড়ী যেতে পারে না। কারণ কাঁটাতারের বেড়ার গেটে বিএসএফ চেক করে। আমাদের এখানে ৭টি গ্রামে ভোটার আছে দেড় হাজারের বেশি। আমাদের প্রতিটি বাড়ির লোকের হিসাব আছে বিএসএফ’র কাছে। তাই আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশীদের গেট দিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে তাদের প্রয়োজনীয় সকল জিনিস আমরাই এনে দেই। আমাদের সিপাইপাড়ার জনপ্রিয় পল্লী চিকিৎসক দেলোয়ার ডাক্তার। বেরুবাড়ী বাজারে তার ওষুধের দোকান আছে। ৭ গ্রামে তিনি চিকিৎসা করেন।

প্রধানের সঙ্গে কথা বলার সময় পাশ দিয়ে মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশের মোমিনপাড়া গ্রামের হামিদুল ইসলাম। তিনি জানান, এখানে আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। আমার বয়স এখন ৬০ বছর। বাপ-দাদার কাছ থেকে শুনেছি এখানে কোনোদিন দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে কোনো ঝগড়া-বিবাদ হয়নি। দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে আমাদের রয়েছে সমপ্রীতির অটুট বন্ধন। তাদের সকল অনুষ্ঠানে আমরা যাই। তারাও আমাদের অনুষ্ঠানে আসে। বাংলাদেশের হকাররা চলে যায় ভারতের ভেতরে। তাদের হকাররাও আমাদের এখানে আসে। আমাদের অনেকের আত্মীয়-স্বজন আছে তাদের ওখানে। বিএসএফ কাঁটাতাদের বেড়া পার হয়ে দিনে দু’-একবার এদিকে আসে। আমরা তাদের ওখানে থাকলে একটু সতর্ক থাকি। পারতপক্ষে ঘরের ভেতর থেকে বের হই না। বিএসএফ চলে গেলে আবারও স্বাভাবিকভাবে তাদের এলাকায় চলাফেরা করি। শান্তিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় আমাদের বিজিবি খুব বেশি একটা এখানে আসে না। এলেও তারা ঘুরে চলে যায়।

ফেরার পথে দেখা যায়, দুপুরের কড়া রোদে সীমানা পিলারের কাছে ভারতের একটি ছোট্ট চা বাগানে পাতা তুলছিল দুই যুবক। এদের একজনের নাম বাবু আলম। তার বাড়িও সিপাইপাড়ায়। সে ভারতের হলদিবাড়ী কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বাবু জানায়, তার বাবা এই চা বাগানের মালিক। শ্রমিক না পাওয়ায় সে নিজেই লোক নিয়ে পাতা তুলছে। আমাদের এখানে শ্রমিক পাওয়া যায় না। বাংলাদেশী শ্রমিকরাই আমাদের এখানে এসে সব কাজ করে। হাইব্রিড টমেটো ও ভুট্টা তোলার কারণে বাংলাদেশী শ্রমিকরা এখন আসছে না। এ কারণে নিজেদেরকেই কাজ করতে হচ্ছে। বাবু বলেন, আমাদের এখানে রেশন কার্ডের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়ায় কেউ শ্রমিকের কাজ করতে চায় না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের সীমান্ত এলাকায় দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে না। উভয় দেশের সীমান্তবাসী খুবই শান্ত। বাংলাদেশের মোমিনপাড়া আর ভারতের সিপাইপাড়ার মানুষদের চলাফেরা দেখলে কেউ বুঝতেও পারবে না তারা কোন্‌ দেশের নাগরিক। আমরাও চাই উভয়দেশের সীমান্তবাসী সহাবস্থানে থাকুক।

মন্তব্য করুন


 

Link copied