আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

হাজী দানেশের মৃত্যুবার্ষিকীতে নেই কোনো কর্মসূচি !

মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০১৬, দুপুর ০৪:৪৩

তার মৃত্যুবার্ষিকীতে কোথাও কোনো কর্মসূচি নেই। এমনকি এই কৃষক নেতার নামে প্রতিষ্ঠিত হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও নেই কোনো কর্মসুচি।

অপরদিকে, দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে অবহেলা আর অযতেœ পড়ে আছে এই ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশের মাজারটি। মাজার চত্বরে নেই কোনো সাইনবোর্ড কিংবা নাম ফলক। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে মাজার চত্বরটি। যেখানে রাতের আধারে বিচরণ করে অপরাধীরা।

রাজনীতিক এই প্রাণ পুরুষের এক ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে ছেলে ফারুক দানেশ ও দুই মেয়ে ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। এক মেয়ে সুলতানা রেদওয়ানা রানু (৭২) শারীরিকভাবে অসুস্থ।

জানা গেছে, দিনাজপুর তথা বাংলাদেশর রাজনীতিক গৌরব, পাক-ভারত উপমহাদেশের বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা, ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হাজী মো. দানেশ। যে নামটি মেহনতি, মুক্তিকামী, শোষিত মানুষের অনুপ্রেরণার প্রতীক। সেই কিংবদন্তি তুল্য এই মানুষটি শুধু দিনাজপুর নয়, দিনাজপুরের গন্ডি পেরিয়ে সারাদেশ তথা সারা উপমহাদেশে শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের মুক্তির প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হোন। এই রাজনৈতিক নেতার নামে দিনাজপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল। গ্রামের বাড়ি বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে রয়েছে একটি কলেজ। এতোটুকুতে সন্তুষ্ট নয়, তার পরিবারের সদস্যরা ও দিনাজপুরের মানুষ। এই জেলার মানুষের দাবি এই মহান নেতার মুরাল স্থাপন করার। দিনাজপুর সরকারী মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর এম.এ জব্বার বলেন, এই মহান নেতার নামে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযক্তি বিশ্ববিদ্যাল প্রতিষ্ঠিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেশ বরেণ্য এই নেতার জন্ম কিংবা মৃত্যুবাষির্কী কোনোটাই পালন করে না । বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নেই কোনো ভার্স্কয।তিনি আরো বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পিএইচডি করছেন অনেকে। কিন্তু যার নামে এই প্রতিষ্ঠান তাকে নিয়ে কেউ কোনো গবেষণা করছে না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রাজনীতিক এই পুরুষের ভার্স্কয স্থাপনের দাবি জানান। হাজী মোহাম্মদ দানেশের নাতি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সুলতান ফেরদৌসও কথা রাখেননি। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশের পর তিনি কথা দিয়েছিলেন, এক মাসের মধ্যে মাজার চত্বরে একটি সাইনবোর্ড স্থাপনের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। আফ্রো-এশিয়ার আরেক নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন স্রষ্টা মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাষানীর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর হাজী মোহাম্মদ দানেশের জন্ম বৃটিশ ভারতের প্রাচীনতম জেলা দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে ১৯০৩ সালে। বাবার নাম ছিল মৌলভী সালামত উদ্দীন।

১৯২৩ সালে তিনি প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর তিনি এক বছর দিনাজপুর জুনিয়র মাদরাসায় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে আলীগড় গমন করেন। সেখানকার মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে এমএ ও ১৯৩২ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩৩ সালে দিনাজপুর জজ কোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৩৮ সালে হাজী মোহাম্মদ দানেশ সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেণ। ওই বছর তিনি ন্যাপ এর প্রথম সহ-সভাপতি ও পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হোন। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি ও রাজনৈতিক তৎপরতায় গ্রেফতার করা হয় তাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে (লেলিন বাদী) যোগদান করেন। তিনি পূর্বেও কমিউনিস্ট আন্দোলনকে মনে প্রাণে ধারণ করেছিলেন। ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি অন্যান্য বামপন্থীদের একত্রিত করে জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন গঠন করেন এবং এই সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে দেশে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল গঠন করা হলে তিনি বাকশালে যোগদান করেন। এর আগে হাজী দানেশ যখন প্রথম সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন তখন তিনি কমিউনিস্ট পার্টি’র উদ্যোগে গঠিত জেলা কৃষক সমিতির সদস্য হন। ভারতের কমিউনিষস্ট পার্টি’র প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মুজাফফর আহাম্মদ এর দ্বারা তিনি গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১৯৩৮ ও ১৯৪২ সালে কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলার অপরাধে ২ বার তাকে কারাবন্দি করা হয়। এই সময় হাট বাজারে টোল আদায় করে ও জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের দাবিতে তিনি তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৪২ সালে রংপুরের (বর্তমান নীলফামারী) ডোমারে বঙ্গীয় কিষাণ সম্মেলন অনুষ্ঠানের তিনি ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা। এই সম্মেলনে তিনি নিখিল ভারত কিষাণ সভার সভাপতি নির্বাচিত হোন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হাজী মোহাম্মদ দানেশ দিনাজপুর-রংপুর ও জলপাইগুড়িসহ সারা উত্তরাঞ্চলে কৃষকদের এক জঙ্গি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। উপমহাদেশে এই আন্দোলন ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন নামে পরিচিত। এর আগে ১৯৪৫ সালে হাজী দানেশ মুসলিম লীগে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৪৬ সালে তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে মুসলিম লীগ থেকে বহিস্কৃত হন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৭ সালে তিনি মুক্তি পান। ওই বছরই তিনি দিনাজপুর এসএন কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক দল গঠিত হলে তিনি ওই দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। এ কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরে তিনি মুক্তি পান।ওই বছরই তিনি দিনাজপুর এসএন কলেজে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের অংশীদার হিসেবে তার দল পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে ১৪টি আসন লাভ করে। তিনি নিজেও নির্বাচিত হোন। পরর্তীতে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা ভেঙে দিলে অন্যান্যদের সঙ্গে তাকেও গ্রেফতার করা হয়। ১৯৫৬ সালে তিনি মুক্তি লাভ করেন এবং ১৯৫৭ সালে মাওলানা ভাষানীর ন্যাপ এ যোগ দেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপ এর সভাপতি নির্বাচিত হোন। ১৯৭৫ সালে বাকশাল সরকারের পতন হলে জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন পুনরুজ্জীবিত করেন। তিনি গণতান্ত্রিক পার্টি’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা । গণতান্ত্রিক পার্টি জাতীয় ফ্রন্টের শরিক ছিল। এই ফ্রন্ট পরে জাতীয় পার্টিতে রূপান্তরিত হলে তিনি জাতীয় কৃষক পার্টি’র প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত হয়। একবার তিনি জাতীয় পার্টি’র কিটে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। হাজী মোহাম্মদ দানেশ সারাটা জীবনই শোষিত ও মেহনতি মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। দিনাজপুরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রথমে হাজী মোহাম্মদ দানেশের নামে দহাজী মোহাম্মদ দানেশ কৃষি কলেজদ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে তার নামেই বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়াও তার নামে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুরে একটি কলেজও রয়েছে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied