আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আলোর মুখ দেখতে বসেছে

কুড়িগ্রামে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আলোর মুখ দেখতে বসেছে

 width=
 
শিরোনাম: রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা       ২৯ রমজান কি অফিস খোলা?       আজ ঐতিহাসিক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস       লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ হস্তান্তর       কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি      

 width=
 

আইএস-এর উপস্থিতি স্বীকার করাই কি সমাধান?

শুক্রবার, ৮ জুলাই ২০১৬, সকাল ০৯:৫৩

রোকেয়া লিটা

গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় জঙ্গিরা যেভাবে নিজেদের এবং নিজেদের হত্যালীলার ছবি ও তথ্য সরবরাহ করেছে, তাতে করে দেশের একজন সাধারণ মানুষও মানতে বাধ্য হয়েছে যে, এই ঘটনার সঙ্গে আইএস-এর যোগসূত্র রয়েছে। সেখানে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট দফতরে নিয়োজিত মন্ত্রী আইএস-এর উপস্থিতি টের পাচ্ছেন না, এটি ভাবার কোনও কারণ নেই। এরপরও তারা বলেই যাচ্ছেন, এই ঘটনার সঙ্গে আইএস জড়িত নয়, দেশীয় জঙ্গি সংগঠনগুলো এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব বলে যে তারা নিজেরাও খুব স্বস্তিতে আছেন, সেটি ভাবার কোনও কারণ নেই। তারা জেনে বুঝেই জনগণের হাসির পাত্র হয়ে উঠছেন। তাহলে কেন সরকার আইএস-এর উপস্থিতি অস্বীকার করছে? নিশ্চয়ই এর পেছনে জোরালো কোনও কারণ আছে। সমাজের বিপথগামী তরুণদের ব্রেইন ওয়াশ করে জঙ্গি বানানোর জন্য ৯০ শতাংশ মুসলমানের এই বাংলাদেশ যেমন আইএস এর জন্য উর্বর ভূমি, তেমনি ভৌগলিক কারণেই বাংলাদেশ পশ্চিমা ও প্রতিবেশী অনেক দেশেরই রাজনৈতিক স্বার্থ বাস্তবায়ন ও পরিচালনার ঘাঁটি হিসেবে খুবই আকর্ষণীয় এবং লোভনীয় একটি ভুখণ্ড। বাংলাদেশের হয়েছে দুদিকেই বিপদ। না পারছে দেশের জঙ্গি সমস্যা সমাধান করতে, না পারছে অন্য দেশের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নিজেদেরকে উজাড় করে দিতে। যারা দেশ পরিচালনা করছেন, তারাই হয়তো হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন এই দোটানার ভয়াবহতা। প্রতিটি জঙ্গি হামলার পরেই বিদেশি মন্ত্রীরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফোন করে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন। আমরা শুধু জানতে পারি, তারা জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে চান। কিন্তু কী উপায়ে তারা বাংলাদেশকে সহযোগীতা করার জন্য এগিয়ে আসতে চাইছেন, তার কতটুকুই বা আমরা জানতে পারি! তাই বাংলাদেশ সরকার কেন দেশে আইএস-এর উপস্থিতি অস্বীকার করছে তা খুব সচেতনভাবেই ভেবে দেখা দরকার । কেননা যে সব দেশ বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ দমনে সহযোগীতা করতে চায়, তাদের সন্ত্রাস দমনের নমুনাও আমরা দেখেছি। গুলশানে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিবাদ দমনে সাহায্য করার ইচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফোন করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি। এখন আসুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ দমনের নমুনা দেখি। গত শুক্রবার বারাক ওবামার নির্বাহী আদেশে হোয়াইট হাউস বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে টার্গেট কিলিং ও ড্রোন হামলায় গত সাত বছরে পাকিস্তান, ইয়েমেন ও সোমালিয়ায় বেসামরিক মানুষ নিহতের সংখ্যা জানিয়েছে। হোয়াইট হাউসের দেওয়া ওই তথ্য মতে, ১১৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন এসব হামলায়, যদিও মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করছে নিহতের প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে অনেক কম সংখ্যা প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই এ ধরনের সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা করায় সমালোচনার মুখে পড়েছে হোয়াইট হাউস প্রশাসন। এবার আসুন দ্বিতীয়বার ভাবি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশে কিভাবে জঙ্গিবাদ দমনে সাহায্য করতে চায়। বিষয়টি যদি এমন হয়, বাংলাদেশে আইএস এর উপস্থিতি আছে স্বীকার করলেই কোনও দেশ জঙ্গিবাদ দমনের নামে আমাদের দেশে টার্গেট কিলিং বা ড্রোন হামলার নামে সহযোগীতা করার আশ্বাস দেয়, তাহলে আমাদেরও উচিৎ হবে আইএস এর উপস্থিতি অস্বীকার করা। আমরা নিশ্চয়ই চাই না, আমাদের আকাশে উড়ে বেড়াক কোনও চালক বিহীন বিমান, আর তাতে প্রাণ হারাক কোনও নিরপরাধ মানুষ। তারপরও প্রশ্ন থেকেই যায়। যুক্তরাষ্ট্রেও একাধিকবার জঙ্গি হামলা হয়েছে, দেশটি কি নিজেদের ভূখণ্ডে কখনও টার্গেট কিলিং বা ড্রোন হামলা চালিয়েছে? মার্কিন এসব অভিযানে গত সাত বছরে যে পরিমাণ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে, তা যে কোনও সন্ত্রাসী হামলার চেয়ে কোনও অংশেই কম নয়।

বাংলাদেশে আমরা যখন আইএস এর উপস্থিতি-অনুপস্থিতি নিয়ে চুল-চেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় জাপান ও ইতালির জনগণ বাংলাদেশের জঙ্গি হামলার ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে। তারা বলছে, ‘আমরাই কেন বারবার হামলার লক্ষ্য?’। তাদের এই ক্ষোভের কারণ আমাদের অজানা নয়। তাভেল্লা সিজার আর হোশি কুনিও থেকে শুরু করে গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোঁরার হামলায় নিহতরা। আমরা দেখছি, বারবার এসব হামলায় জাপান ও ইতালির নাগরিকরাই টার্গেট হয়েছেন। সংবাদপত্রে দেখতে পাচ্ছি, জাপানি নাগরিকরা এদেশে মেট্রোরেলের পরামর্শক হিসেবে কাজ করতে এসেছিলেন। অন্যদিকে, ইতালিয়ানরা আমাদের দেশের পোশাক শিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারী। অর্থাৎ নিহত বিদেশিরা আমাদের উন্নয়ন অংশীদার। তার মানে, এসব জঙ্গি হামলায় শুধু আইএসকে দোষ দিয়ে, জঙ্গি দমনে পশ্চিমা সাহায্যের আশায় বসে থাকলে আমাদের চলছেও না। হত্যাকাণ্ডের নমুনা দেখে বোঝা যায়, এমন একটি সংঘবদ্ধ শক্তি এদেশে জঙ্গি হামলা চালাচ্ছে যারা বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। আইএস যদি উগ্র ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাসী একটি সংগঠন হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অনুন্নয়নে তাদের কি আসে যায়? খুঁজে-খুঁজে আমাদের উন্নয়ন অংশীদারদেরই আক্রমণ করবে কেন তারা? কাজেই আমাক, দাবিক, সাইট ইন্টেলিজেন্স বা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক যে কোনও ওয়েবসাইট গুলশানে হামলার সাথে আইএস এর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রচার চালালেই যে, বাংলাদেশকে তা মেনে নিতে হবে, বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়। গুলশানের এই জঙ্গি হামলা আমাদের দৃষ্টিকে যেভাবে মাদ্রাসা থেকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে, তেমনি আইএস বা জঙ্গিবাদের উৎস হিসেবে অনেক কিছুই আমাদের দৃষ্টিকে যে কোনও মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পশ্চিমেও ঘুরিয়ে নিতে পারে। মার্কিন অভিযানে পাকিস্তান, ইয়েমেন ও সোমালিয়ায় বেসামরিক নিহতের সংখ্যা আমাদের সেই আশঙ্কাকেই উস্কে দেয়।

তাই প্রশ্ন থেকেই যায়, বাংলাদেশে আইএস-এর উপস্থিতি স্বীকার করাই কি সমাধান? আবার, দেশে মানুষ হত্যা বা জঙ্গিবাদ দমন করতে না পারলে, আইএস-এর উপস্থিতি অস্বীকার করেও কোনও সমাধান নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বারবার বলছেন, জঙ্গিরা দেশীয়। হ্যাঁ, গুলশানের ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে জঙ্গিরা দেশীয় এবং আমাদের রাজনীতিবিদদেরই কারও কারও সন্তান। তাই এখন সময় দোষারোপের সংস্কৃতি পরিহার করে দলমত নির্বিশেষে সকলে মিলে জঙ্গিবাদের মুলোৎপাটন করা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শুধু অপারেশন থান্ডারবোল্টের সফলতা দেখলেই চলবে না। আগে নিবরাস, রোহান বা রওনোকের মতো বিপথগামী তরুণদের মস্তিষ্ক থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করার ব্যবস্থা নিন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে সাংস্কৃতিক আবহ গড়ে তুলুন।

মনে পড়ে, বিটিভির নতুন কুড়ি অনুষ্ঠানের কথা। আমার শৈশবের একটা লম্বা সময় কেটেছে নতুন কুড়ি অনুষ্ঠান দেখে। নিজে নাচ-গান করতাম না, কিন্তু প্রতি শুক্রবার ঠিক সময় মতো টিভির সামনে গিয়ে বসতাম। নতুন কুড়ি বন্ধ হয়ে গেলো, ভালো কথা। নতুন কুড়ির বিকল্প কিছু কি দিয়েছেন আমাদের ছেলে-মেয়েদের হাতে? কী নিয়ে ব্যস্ত থাকবে আমাদের ছেলেমেয়েরা? ভিডিও গেমস আর সোশ্যাল মিডিয়া দখল করে নিচ্ছে তাদের শূন্যতাগুলো। আমাদের একটা রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল আছে, তার যথাযথ ব্যবহার করুন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জঙ্গিবাদ বিরোধী ক্যাম্পেইন গড়ে তুলুন। শুধু অস্ত্র দিয়ে সবকিছু মোকাবেলা করা যায় না। সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি আমাদের তরুণ মস্তিষ্কগুলোর বুদ্ধিবৃত্তিক সুস্থতাও জরুরি, যেন কোনও জঙ্গিবাদের ফাঁদে জড়িয়ে না পড়ে তারা। আগে দেখতাম পাড়ায়-মহল্লায় অনেক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হতো, এখন কি ছেলে-মেয়েরা এসব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে? এদেরকে আলোকিত করার ব্যবস্থা নিন।

লেখক: সাংবাদিক

মন্তব্য করুন


 

Link copied