আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

বিপথগামী তারুণ্য : দায় কার?

শনিবার, ২৩ জুলাই ২০১৬, দুপুর ০১:০১

জয়নাল আবদিন

এ দেশের যত বড় বড় অর্জন- ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ২ মার্চ স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন, মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান- আমাদের এতসব ঐতিহাসিক দুনিয়া কাঁপানো অর্জন তারুণ্যের গৌরবদীপ্ত অভিযানের বীরত্বগাথা ইতিহাস। হেলাল হাফিজের কবিতার মতো একটা সময় ছিল যখন তরুণরা উচ্চারণ করেছে, ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। সেদিনের তরুণরা ভাষার জন্য, দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, আদর্শের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিল।

আজকের তরুণ সমাজের দিকে তাকালে আমরা কোনো স্বপ্ন দেখি না, হতাশায় ভুগি। আজকের তারুণ্য যেন পরিবার, দেশ, জাতি ও সমাজকে অন্ধকার গহ্বরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কবিগুরুর সেই আহ্বান আয়রে তরুণ আয়রে আমার কাঁচা, আধ মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা- আজকের তারুণ্য আমাদের বাঁচাচ্ছে না, আমাদের সর্বনাশ করছে, নিজেরাও সর্বনাশের পথে হাঁটছে। গুলশান হত্যাকাণ্ডে নিহত বিপথগামী তরুণ রোহান ইমতিয়াজের বাবা, ইমতিয়াজ খান বাবুল টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং দেশের প্রত্যেক মা-বাবার প্রতি অনুরোধ করেছেন সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখতে। তার মতো অভাগা পিতা যেন আর কেউ না হন। আমাদের তরুণ সমাজ এমন ভয়ংকর বিপথগামিতার, আদর্শহীনতার, দেশ, জাতি, সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মরীচিকার পেছনে ধাবিত হয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার যে মরণ খেলায় মেতে উঠেছে, তা সীমাহীন কষ্টের, বেদনার, দেশের জন্য তো ভয়ানক বিপদ-সংকট নিঃসন্দেহে।

তারুণ্যের এ বিপথগামিতার জন্য দায়ী কে, আমাদের সর্বপ্রথম চিহ্নিত করতে হবে। দেখতে হবে তারুণ্যের এ অধঃগতির জন্য সমাজের মধ্যে কী কী কারণ বিদ্যমান আছে। প্রথমেই দেখি পারিবারিক সম্পর্কের স্বরূপ কেমন ছিল নিহত তরুণ জঙ্গিদের। এসব তরুণের বেশিরভাগই ছিল অভিজাত পরিবারের সন্তান। ইংরেজি মাধ্যমে পড়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র। অঢেল অর্থ-বিত্তের কারণে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা, আধুনিক প্রযুক্তি ছিল তাদের হাতের মুঠোয়। পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তারা ছিল মুক্ত আকাশের পাখির মতো, যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারত। পারিবারিক অনুশাসন ছিল এখানে খুবই দুর্বল, বন্ধন ছিল শিথিল। যে কারণে অন্য কোনো মোহ তাদের হাতছানি দিয়ে মরণ পথে ঝাঁপিয়ে পড়া থেকে ধরে রাখতে পারেনি।

মা-বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল নিতান্তই দেয়া-নেয়ার, হৃদ্যতা আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল না। সেজন্যই ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ঘর বা পরিবারের স্নেহ-ভালোবাসা, আদর-সোহাগ তাকে ঘরে ফেরাতে পারেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন আর আমাদের ছাত্রছাত্রীদের দেশপ্রেম শেখায় না, ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পড়ে ঠেকাই মাথা’-এর মর্মার্থ বোঝায় না। বোঝায় আমার কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় পাস করা যাবে না। আমার কোচিংয়ে ভর্তি না হলে পরীক্ষায় গোল্লা পাবে। আমার মতবাদের অনুসারী না হলে ভালো নম্বর পাবে না, হলে সিট পাবে না। ভিন্নমতের অনুসারী হলে তোমার দিকে টেরা চোখ থাকবে সব সময়। সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বিদ্যাদানকে ব্যবসায় পরিণতি করেছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা তারুণ্যকে আদর্শ শিক্ষায় উজ্জীবিত করে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববান করে গড়তে পারছে না। শুধু ব্যক্তি স্বার্থের সীমানায় আবদ্ধ করে সমাজের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থার হাল-হকিকত আরও করুণ। বহু মতবাদে বিভক্ত ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা, আমাদের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের না শেখাচ্ছে ইসলাম ধর্মের প্রকৃত মর্ম, না শেখাচ্ছে দেশপ্রেম, না শেখাচ্ছে মানব প্রেম।

‘জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে, সে জাতির নাম মানুষ জাতি’, ‘কালো আর ধলো বাহিরে যত ভেতরে সবারই সমান রাঙা’- এই চিরঅম্লান, চির সত্যগুলো কি ধর্মীয় শিক্ষায় পড়ানো হয়? সেখানে পড়ানো হয় আমরাই শ্রেষ্ঠ, বাকিরা নিকৃষ্ট। আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণই ধর্মীয় শিক্ষার উপযোগী পাঠ্যক্রম।

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও সরকারগুলো ধর্মীয় শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে পারেনি। তারা না পারছে সমাজকে ভালো কিছু দিতে, আর সমাজও না পারছে তাদের গ্রহণ করতে। সমাজ, দেশ ও পরিবারের সঙ্গে তারুণ্যের বৈরী সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে দিন দিন। দূরত্ব তৈরি হচ্ছে আকাশ-পাতাল। সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা আর সুন্দর স্বপ্নের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে তারুণ্য। তারুণ্যের এ অধঃপতনের জন্য সবকিছুর ওপর দায়ী আমাদের অসুস্থ রাজনীতি। যে রাজনীতি তারুণ্যের হাতে বই আর কলমের বদলে অস্ত্র তুলে দিয়েছে, সে অস্ত্র দিয়ে প্রতিপক্ষকে হত্যা করছে, নিজেরা নিজেরা খুনোখুনি করছে। টেন্ডারে কাজ পেতে গোলাগুলি করছে। দখল করতে মানুষ হত্যা করছে। আদর্শহীন দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি তারুণ্যের স্বপ্নকে ছোবল মেরে বিবর্ণ করে দিচ্ছে। সমাজকে ক্ষতবিক্ষত করছে। আমরা সবাই সাক্ষিগোপাল হয়ে সেসব দেখছি। চোখের সামনে আমাদের সন্তানরা আগ্নেয়গিরির লাভাতে পুড়তে যাচ্ছে, তাদের সে পথ থেকে ফেরানোর কোনো পন্থা উদ্ভাবন না করে পরস্পরকে দোষারোপ করছি। ক্ষমতার স্বার্থে তারুণ্যকে ব্যবহার করে অসুস্থ রাজনীতির প্রতিযোগিতায় নিজেদের জয়ী করার খেলায় মেতে উঠছি। যে তারুণ্য পরিবার, দেশ ও সমাজকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার কথা যাদের, সে তারুণ্যের জন্য আমরা বিশ্বদরবারে লজ্জিত হচ্ছি। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। হল কেন? এর দায় কার? দায় একা কারও নয়।

আধুনিক প্রযুক্তি যেমন মোবাইল, ইন্টারনেট, কম্পিউটারের অবাধ ব্যবহার তরুণ ও যুবসমাজকে এক অজানা অন্ধকার জগতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সে অজানা অন্ধকার জগতে কী আছে আমরা জানি না। তারুণ্য সে অন্ধকার জগতের খোঁজে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। পিতা-মাতা সন্তানের খবর রাখেন না। কিশোর, তরুণ, যুবক, সন্তান-সন্ততি সারারাত জেগে মোবাইলে কম্পিউটারে কী করছে পিতা-মাতা জানেন না। অনেক পিতা-মাতা কর্মব্যস্ততার কারণে ছেলেমেয়েদের সময় দিতে পারেন না। অবৈধ অর্থ-বিত্তের কারণে বহু পরিবার সন্তানদের বেপরোয়া জীবনযাপনে বাধা দেয় না, পিতা-মাতা ও সন্তান যে যার ইচ্ছামতো চলছে। অসচ্ছল, দরিদ্র ও নিুবিত্ত পরিবারের সন্তানদের বিপথগামী করতে আমাদের অসুস্থ রাজনীতি ফাঁদ পেতে রেখেছে। সে ফাঁদে পা দিচ্ছে তরুণ সমাজ। কায়েমি স্বার্থবাদী আর অসুস্থ রাজনীতির মোড়লদের কথায় ভোটের বাক্স ছিনতাই করছে, সহপাঠীকে খুন করছে, চাঁদাবাজি-দখলবাজি করছে, রাজনীতির নামে, ছাত্র রাজনীতির নামে এ দেশে এখন যা চলছে তা আমাদের দেশ, সমাজ, তারুণ্যকে বিপন্ন করে তুলছে। তারুণ্যের এ বিপথগামিতার জন্য অনেক কিছুর দায় থাকলেও সর্বাজ্ঞে এর দায় আমাদের রাজনীতির, একথা মানতেই হবে।

লেখক : আইনজীবী

মন্তব্য করুন


 

Link copied