আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

তাই বলে ওরা মেয়েটাকে মেরে ফেলবে?

শনিবার, ২০ আগস্ট ২০১৬, দুপুর ০২:৩১

চিররঞ্জন সরকার

‘মন ভালো নেই, মন ভালো নেই, মন ভালো নেই। কেউ তা বোঝে না, সকলই গোপন, মুখে ছায়া নেই। চোখ খোলা, তবু চোখ বুজে আছি...’ কবির এই লাইনগুলো আজ মনে পড়ছে খুব। মনটা সত্যিই ভালো নেই। কারণ, মনটাই বোধ হয় আর নেই। মন বলে কিছু অবশিষ্ট থাকলে আফসানার সঙ্গে এমনটা ঘটতে পারত আদৌ? বলা হচ্ছে আফসানার সঙ্গে তেজগাঁও কলেজের এক ছাত্র রবীনের মন দেওয়া-নেওয়া নিয়ে মনোমালিন্য চলছিল। তাদের সম্পর্কটা ভেঙে গিয়েছিল। গায়ের জোরে এই সম্পর্ক পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান রবীন। তার আবার ক্ষমতার জোরও আছে। সে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাইতো অনিচ্ছুক আফসানাকে জোর করে ‘মনের মানুষ’ বানাতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত খুন করে নিজের অভিলাষ চরিতার্থ করে! কী নির্মম এই ‘মনের’ খেলা! এখন প্রশ্ন হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি এই হত্যাকারীকে ধরবে? সঠিক তদন্ত ও বিচার হবে? নাকি কুমিল্লার তনুর ঘটনার মতো এটাও অন্ধকার গর্ভে হারিয়ে যাবে? আফসানার ঘটনাটি কে বা কারা ঘটিয়েছে-তা দিবালোকের মতো স্বচ্ছ। হত্যাকারীদের খুঁজে বের করা মোটেও কঠিন কাজ নয়। হত্যাকারীরা ফোন করে আফসানা হত্যার সংবাদ জানিয়েছে পরিবারকে। হাসপাতাল-থানা-হাসপাতাল বারবার ফোন করে রাত তিনটা পর্যন্ত পরিবারকে ঘোরানো হয়েছে। লাশ হাসপাতালে রেখে গেছে দু’জন। তাদের ছবি সিসি ক্যামেরা ফুটেজে আছে। ফোনে আপোষ রফার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। সব ফোন নাম্বারগুলো আছে। বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশনে ফোনগুলো কার বা কাদের, তা বের করা কঠিন হওয়ার কথা নয়। তদন্তের অনেক আলামত প্রাথমিক পর্যায়েই পাওয়া যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন একটাই, অভিযুক্তরা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা। ছাত্রলীগের এই ‘সোনার ছেলেদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ বা প্রশাসন কতটা আগ্রহী হবে, সাহস দেখাবে? তবে সরকারের উচিত এ ব্যাপারে কোনও রকম পক্ষপাত না দেখানো। অপরাধীকে শনাক্ত করা এবং উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করা। মনে রাখা দরকার একজন বা কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ মানে, সমগ্র ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নয়। ছাত্রলীগেরও উচিত তদন্তে সহায়তা করা। এই খুনের ঘটনার প্রতিবাদ করা। পুরো দায় নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে নিলে তারা খুব মারাত্মক ভুল করবে। ইতিমধ্যে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানোয় তেজগাঁও কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ করেছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের উচিত এই আত্মঘাতী অবস্থান থেকে যত দ্রুত সম্ভব সরে আসা। অপরাধ, অপরাধী, আর দলকে গুলিয়ে না ফেলা। পুলিশ সঠিক তদন্ত করে আসামি ধরবে, না আসামিদের ‘পলাতক’ দেখিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেবে, না ভিন্ন খাতে নিয়ে দায় বাড়াবে সেটাও দেখার বিষয়। আমরা চাই পুলিশ সঠিক তদন্ত করে অপরাধী ধরে শাস্তি নিশ্চিত করবে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য মতে, ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীরা গত সাত আট বছরে প্রায় ৫৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগেরই কোনও কূলকিনারা হয়নি। পুলিশ তেমন কিছুই করেনি বা তাদের করতে দেওয়া হয়নি। এখন আফসানা হত্যার তদন্ত কতটা সঠিকভাবে হবে, পুলিশ বদনাম ঘোচাবে, না বাড়াবে-সে সিদ্ধান্ত পুলিশকেই নিতে হবে।

সবচেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে, রবীনের এই অপকর্মকে সহায়তা করেছে তারই বন্ধুবান্ধব বা সতীর্থরা। আফসানার ঘনিষ্ঠজনরা অভিযোগ করেছেন, তাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এমন একটি পৈশাচিক কাণ্ডে বন্ধুবান্ধবদের যেখানে বাধা দেওয়ার কথা, উল্টো তারা সহযোগিতা করেছে! এমনকি নিজেদের দায় এড়াতে হাসপাতালের বারান্দায় আফসানার মৃতদেহ ফেলে রেখে এসেছে।

এ কোনও স্বাভাবিক ঘটনা নয়। আমরা যদি স্বাভাবিক মানসিক স্থিতিতে থাকি, তা হলে একটি মেয়েকে এভাবে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করার ঘটনায় কিছুতেই চুপ থাকতে পারি না। তনু হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু অভিযুক্তরা অনেক বেশি প্রভাবশালী বলে তেমন ফল ফলেনি। তুলনায় আফসানা হত্যার প্রতিবাদ এখনও জোরালো নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে অবশ্যই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকল মানুষকে ফুঁসে উঠতে হবে। আফসানা হত্যার প্রতিবাদে সরব হতে হবে। কারণ আফসানা আমাদের সবার স্বজন, আমাদেরই বোন, সন্তান। তার বাবা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের এমন মৃত্যু স্বাধীন বাংলাদেশে হতে দেওয়া যায় না। দেশপ্রেমিক কোনও মানুষ তা হতে দিতে পারে না। আফসানা হত্যার বিচারে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেবল কোনও গোষ্ঠী বা পরিবারের জন্য সীমিত নয়। এই দেশ সবার। কেবল আমলা, সেনা, ধনী, ক্ষমতাসীন দলের কর্মী সমর্থকদের নয়। এখানে অপরাধকে অপরাধ হিসেবেই দেখতে হবে। অপরাধী তা সে যেই হোক না কেন, তাকে আইনে সোপর্দ করতে হবে। তা না হলে এটা পরিণত হবে বর্বরের দেশে। আমরা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবো, কিন্তু খুনি-ধর্ষকদের ব্যাপারে উদাসীনতা দেখাব-সেটা কোনও সুস্থ প্রবণতা নয়। আর তাহলে শুধু তনু কিংবা আফসানা নয়, বাংলাদেশে কোনও মেয়েসন্তানই নিরাপদ থাকবে না। কারণ অপরাধীর বিচার না হলে অপরাধ কেবলই বিস্তৃত হয়। এক সময় সেই ‘পাপ’ ‘বাপ’কেও ছাড়ে না!

নাগরিক হিসেবে আমাদের নিজেদের ভূমিকাটাও মূল্যায়ন করে দেখার সময় এসেছে। আমরা ক্রমেই যেন প্রতিবাদহীন নিথর আত্মকেন্দ্রিক এক গোষ্ঠীতে রূপান্তরিত হচ্ছি। এতোটাই অধম যে, ঘোরতোর অন্যায়ের বিরুদ্ধেও সরব হতে পারি না। হই না। কোথায় যেন আমাদের হাত-পা বাঁধা। আমাদের মনন বাঁধা।  আমরা যে দিন দিন অস্বাভাবিক হয়ে উঠছি, মনটা যে আর নেই, থাকলেও যে পুরোপুরি ভারসাম্যে নেই, তা কিন্তু আমাদের দেখে বোঝা যায় না। রোজ সকালে নিয়মমতো আমরা হাজারে হাজারে, লাখে লাখে, কোটিতে কোটিতে কর্মস্থলে যাই। কাজ সেরে নিয়ম মতোই বাড়ি ফিরি। জীবন নিয়ে নানা স্বপ্ন দেখি। সপ্তাহান্তে পরিজনদের নিয়ে, ঘনিষ্ঠদের নিয়ে বিলাসী সময়ে ডুব দিতে চাই। আমাদের চালচলন, কথাবার্তা, সাজপোশাক, আচার-আচরণ দেখে সবাই ভাবে আমরা স্বাভাবিক, সুস্থ। কেউ বোঝে না, ভেতরে সাংঘাতিক একটা জিনিস নেই- মনটা আর নেই!

কবি স্বাভাবিক ভাবেই অনেক আগে টের পেয়েছিলেন এই অসুস্থতাটা। বলেছিলেন, ‘...কেউ তা বোঝে না, সকলই গোপন, মুখে ছায়া নেই।’ বলেছিলেন, ‘...চোখ খোলা, তবু চোখ বুজে আছি।’

এই রকমই কি চলতে থাকবে? আশপাশের জগতটা কি ক্রমে এমনই নির্মম, নিষ্ঠুর, উদাসীন হয়ে উঠবে ক্রমে? কেউ কারও বিপদে এগিয়ে যাব না আর? খোলা চোখেও চোখ বুজে থাকব? এর নাম সভ্যতা? এর নাম অগ্রগতি? নিজের জীবনে এত মগ্ন আমরা, এতই আত্মকেন্দ্রিক যে জীবন-মরণের সীমান্তে পড়ে কাতরাতে থাকা সহ-নাগরিকের দিকেও সাহায্যের হাতটা বাড়িয়ে দেব না?

তবু আশা ছাড়ছি না। মনুষ্যত্ব মুছে গিয়েছে এ সভ্যতা থেকে, এমনটা ভাবছি না। মনুষ্যত্বের একটা দারুণ নমুনা শীঘ্রই কোথাও চোখে পড়বে, আশায় আশায় থাকছি। আর কবির পঙ্‌ক্তিগুলো আবার আওড়াচ্ছি মনে মনে-

‘...প্রতি দিন কাটে, দিন কেটে যায়/ আশায় আশায়, আশায় আশায়, আশায় আশায়।/ ...আমিও মানুষ! আমার কী আছে, অথবা কী ছিল?/ আমার কী আছে, অথবা কী ছিল?/ ফুলের ভিতরে, বীজের ভিতরে, খুনের ভিতরে, যেমন আগুন/ আগুন আগুন, আগুন আগুন, আগুন আগুন...মন ভালো নেই মন ভালো নেই মন ভালো নেই/ তবু দিন কাটে দিন কেটে যায় আশায় আশায় আশায় আশায় আশায় আশায়।’

লেখক: কলামিস্ট

মন্তব্য করুন


 

Link copied