লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার আলোচিত কাঠ মিস্ত্রী শফিকুল হত্যা মামলার ফরেনসিক রিপোর্ট প্রত্যক্ষান করেছে নিহতে পরিবার।
নিহতের স্ত্রী শাহিনা বেগম লাশ পুনরায় ময়না তদন্তের দাবি জানিয়ে এক মাস পর লালমনিরহাট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরনে জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের শালমারা গ্রামের মৃত রইচ উদ্দিনের ছেলে কাঠ মিস্ত্রী শফিকুল ইসলামকে(৪২) ২২ জুলাই সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে ডেকে নেন ওই গ্রামের প্রভাবশালী আব্দুল মান্নানের ছেলে হুমায়ুন কবির(৪০)। ওই দিন রাতে অনেক খোজা-খুজির পর তার কোন খোজ মিলাতে পারেন নি তার পরিবার।
পরদিন ২৩ জুলাই সকালে কবিরের বাড়ির পার্শ্বে রাতেই নদীর পাশে একটি গাছে ঝুলন্ত শফিকুলের মরদেহ উদ্ধার করে আদিতমারী থানা পুলিশ। শফিকুলের মরদেহ লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে থানা পুলিশ একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।
নিহতের স্ত্রী হত্যা মামলা দায়ের জন্য চাপ দিলে থানা পুলিশ ফরেনসিক রিপোর্ট নিয়ে মামলার প্রতিশ্রুতি দেন। নিহতের স্ত্রী শাহিনার দাবি পাওনা টাকার পরিবর্তে শাহিনাকে বিয়ের করার কু-প্রস্তাব দিলে শফিকুল কবিরকে গালমন্দ করেন। এরই জের ধরে তার স্বামীকে শ্বসরোধে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে ঘাতক কবির।
এদিকে গলায় রশি পেচিয়ে শফিকুলের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. আজমল হক। কিন্তু ফরেনসিক বিভাগের এ মনগড়া রিপোর্ট মানতে রাজি নন নিহতের স্ত্রী ও স্বজনরা।
নিরুপায় হয়ে নিহতের স্ত্রী শাহিনা বেগম নিহত শফিকুলের মরদেহ পুনরায় ময়না তদন্তের দাবি করে ২১ আগষ্ট লালমনিরহাট আদালতে একটি হত্যা মামলা(মামলা নং ১৪২/১৬) দায়ের করেন।
এ ঘটনার পর ঘাতকরা শফিকুলের লাশ কবর থেকে চুরি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে রাত জেগে কবর পাহারা দিচ্ছেন নিহতের স্বজনরা।
কবর পাহাড়ারত নিহতের ভাই ফজল, রেজাউলসহ অনেকেই জানান, শফিকুলের হত্যাকারীরা তার লাশ কবর থেকে চুরি করে আলামত গায়েব করার চেষ্টা করছে। তাই রাত জেগে পালাক্রমে তারা পাহারা দিচ্ছেন নিহত শফিকুলের কবর।
নিহতের স্ত্রী শাহিনা বেগম জানান, তাকে বিয়ের করার কু-প্রস্তাব প্রত্যক্ষন করায় ঘাতক হুমায়ুন কবির তার স্বামীকে নির্যাতন করে শ^াসরোধে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়েছে। মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহের জন্য মোটা অংকে সবাইকে ম্যানেজ করে নিয়েছে ঘাতকরা। এ ঘটনা নিয়ে বেশী দুর এগুলে পুরো পরিবারকে হত্যা করারও হুমকী দিচ্ছে ঘাতক কবির ও তার লোকজন।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. আজমল হক আসামী পক্ষের কাছে সুবিধা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সিভিল সার্জনসহ দুই সদস্যের তদস্ত বোর্ড এটি আত্মহত্যার আলামত হিসেবে নিশ্চিত হয়েছেন। তাই সংশ্লিষ্ট থানায় এ ঘটনার ফরেনসিক রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) হরেশ^র রায় বলেন, নিহত শফিকুল আত্মহত্যা করেছেন বলে ফরেনসিক রিপোর্ট দিয়েছেন চিকিৎসকরা। অপর দিকে নিহতের স্ত্রীর আদালতে দায়ের করা মামলাটিও তদন্তাধিন রয়েছে।