রনজিত দাস॥ হাসপাতালে পা রাখতেই এক মহিলার স্বামীকে বাাঁচানোর আকুতি মিনতি। হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন স্বামী রতন। তাকে দেখিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলেন মহিলা। তারপর পুরো হাসপাতাল জুড়ে কান্নার হাহাজারি।
ঘটনাটি, রংপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ও ইনচার্জ মনিরুজ্জামানের দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রাণ গেলো কুড়িগ্রাম কারাগারের এক আসামীর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রংপুর সদর হাসপাতালটিতে চিকিৎসা ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা। চিকিৎসা নিতে আসা রোগি ও রোগিদের অভিভাবকরা দিশে হার হয়ে ঘুরছে কর্তব্যরত নার্সদের পিছে পিছে।
বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম কারাগার থেকে আসা তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলার আসামী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রায়হান কবীর রতন (৩৪) নামের একজন রোগীকে নিয়ে চিকিৎসকের অভাবে আহাজারী করছে দুই কারারক্ষি, নিহতের বড় ভাই, স্ত্রী ও এক মাত্র সন্তান।
এ ব্যাপারে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স মিনতি বোস ও আম্বিয়া খাতুন এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, রংপুর সদর হাসপাতালে এ মূহুর্তে কোন চিকিৎসক নেই। হাসপাতালের দায়িত্বে রয়েছেন ডাঃ মনিরুজ্জামান নামের এক চিকিৎসক। তিনিও বাহিরে আছেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ রংপুর সদর হাসপাতালের ইনচার্জ ডাঃ মনিরুজ্জামান সাথে যোগাযোগের জন্য তার মুঠো ফোনের নম্বরটি চাইলে তারা নম্বর দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন স্যারের নম্বর দেয়া যাবে না। স্যার জানতে পারলে আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে।
এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের সাথে তার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স যোগে রায়হান কবীরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং ভর্তির এক ঘন্টা পর তার মৃত্যু হয়।
এ সময় কর্তব্যরত নার্সরা জানান, রংপুর সদর হাসপাতালে কোন সীপ্টে কোন ডাক্তার রয়েছে তা আমাদের জানা নেই। কারণ ডাক্তারদের রোষ্টার প্রতি মাসে দেয়া থাকলেও ৭দিন অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত কোন প্রকার রোষ্টার আমাদের হাতে পৌছেনি।
এব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আ.স.ম বরকত উল্ল্যাহ সাথে যোগা যোগ করা হলে তিনি পরিবেশগত বিষয় নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, রোগীটি মেডিসিন বিভাগে ভর্তি পর মারা গেছে। প্রথমে রোগী পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে রংপুর সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছেন কর্তব্যরত ইএমও। কিন্তু সদর হাসপাতালটিকে ঘিরে বহু বার ডিজিকে বলা হয়েছে সংক্রামক ব্যধি ওয়ার্ড টাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাসের পাশাপাশী কোথাও নিয়ে আনা যায় কি না। ওখানে ডাক্তারদের থাকার মত কোন পরিবেশ নেই, তবে এখানে হলে হয় তো রোগিটাকে বাচানো যেত।
রংপুর সদর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের ডিউটির রোষ্টার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা তো ডিউটির একটা রোষ্টার করে দেই, কিন্তু ওখানে ডাক্তারদের জোড় করে পাঠাতে হয়। এমনকি ইন্টার্নি ডাক্তারদেরকেও পাঠানো হয়। তারাও যেতে চান না। এ বিষয়ে তাদেরকে কিছু বললে তারা বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়।
তিনি আরোও বলেন, আমরা অনেক ক্ষেত্রে অসহায়, রাজনীতির, প্রশাসন এমন কি ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের কাছে আমরা জিম্মি।
রংপুর সদর হাসপাতালের ইনচার্জের দায়িত্ব অবহেলার ব্যাপারে তিনি জানান, একটা দু’টা ঘটনার কারনে তো পুরো হাসপাতাল জিম্মি হতে পারে না। আমাদের ও তো সম্পর্ন্ন ব্যবস্থা নেয়ার মত ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু তা পারি না। মৃত্যু রায়হান কবীর রতন কুড়িগ্রাম জেলার পানশাবাড়ী এলাকার তৈয়ব আলীর পুত্র।