সালিশে গ্রাম্য মাতব্বরেরা ওই নারীর মাথা নেড়া করে তাকে হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে বাঁশডলা দিয়েছে। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের উপস্থিতিতে সালিশে ওই নারীর যৌনাঙ্গে মরিচের গুড়া ঢেলে দেয়া হয়েছে। এ সময় যন্ত্রণায় ওই নারী অজ্ঞান হয়ে পড়লেও কারো দয়া হয়নি। তবে নিজের উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
বর্বরতার এ ঘটনাটি ঘটেছে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ডিমাগছ গ্রামে। বিচারের নামে নির্যাতনের এ ঘটনাটি গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঘটলেও স্থানীয় সমাজপতিরা তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে। এমনকি বিচারের পর থেকেই নির্যাতনের শিকার নারীকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি ঘটনাটি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে।
খবর নিয়ে জানা যায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ডিমাগছ গ্রামের হজিবুল ইসলামের স্ত্রী আমেনা খাতুনের উপর পরকিয়ার অভিযোগ এনে তার স্বামী ও এলাকাবাসী বিচারের জন্য তাকে ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মকসেদ আলীর কাছে নিয়ে যায়। ওই দিন রাতে সালিশের নামে ইউপি ভবনে মহিলাটিকে শত শত মানুষের সামনে হাতুরি দিয়ে বেধরক মারপিট এবং বাঁশডলা দেয়া হয়। এমনকি গ্রাম্য পুলিশের নারী সদস্যদের নিয়ে ওই নারীর যৌনাঙ্গে মরিচের গুড়া ঢেলে দেয়। এ সময় ওই নারী যন্ত্রণায় বার অজ্ঞান হয়ে পড়লেও কারো কোন দয়া হয়নি। পরে ওই গ্রামের কেসারুল, বশিরুল ও আশরাফুলসহ ২০ থেকে ২৫ জন গ্রামবাসী ওই নারীকে জোরপূর্বক মাথা নেড়া করে দেয়। তবে এ ঘটনার পরপরই ওই নারীকে লুকিয়ে রাখা হয়। কিন্তু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাকে কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছেনা বলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় অধিবাসী নিশ্চিত করেছেন।
নির্যাতনের শিকার আমেনা খাতুন জানান, ওরা আমাকে যেভাবে নির্যাতন করেছে তা কোন মানুষ করতে পারেনা। আমাকে রশি দিয়ে বেঁধে হাতুরি দিয়ে পিটিয়েছে, বাঁশডলা দিয়েছে। এমনকি আমার যৌনাঙ্গে মরিচের গুড়া ঢেলে দিয়েছে। পরে গ্রামের মানুষেরা আমার কোন কথা না শুনে আমার মাথা নেড়া করে দিয়েছে। আমি তাদের কাছে বার বার হাত জোড় করে মিনতি করেছি কিন্তু তাদের কারো দয়া হয়নি। এর চেয়ে আমাকে মেরে ফেললেই ভাল হতো। কিন্তু আমি এর প্রতিবাদ করতেও পরছিনা তারা আমাকে কারো সামনে যেতে মানা করেছে। আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে আইনের আশ্রয়ও নিতে পারছিনা।
এ বিষয়ে ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকসেদ আলী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার কাছে ওই নারীর পরকিয়ার অভিযোগে বিচারের জন্য নিয়ে আসলে তাকে হালকা মারধর করে বিষয়টি মিমাংসা করে দেয়া হয়। কিন্তু পরে আমি শুনেছি গ্রামের মানুষেরা ওই নারীকে মাথা নেড়া করে নিয়ে আরও নির্যাতন করেছে। তারা এটা অমানবিক কাজ করেছে। বিষয়টি আমি তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।