এদিকে মামলা দায়েরের আগেই দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করে পুলিশ। অবশ্য পরবর্তীতে মামলার এজাহারে তার নাম আসে। পরে তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শাহাপুর গ্রামের মুক্তার আলীর মেয়ে উম্মে মারিয়া সম্পা (১৪) ও নজরুল ইসলামের মেয়ে তামিমা খাতুন বর্ণা (১৩) গলায় ফাঁস দিয়ে একসঙ্গে আত্মহত্যা করে। তারা একই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। মৃত্যুর আগে তারা দুটি ‘সুইসাইড নোট’ লিখে রেখে যায়। সম্পার সুইসাইড নোটে বিপ্লব হোসেন (২৩) নামে এক যুবকের নাম লেখা আছে। সম্পার হাতে কলম দিয়েও ওই যুবকের নাম লেখা ছিল। এই বিপ্লবকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বিপ্লব শাহাপুর পশ্চিমপাড়ার আবদুর রহিমের ছেলে। তিনি রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজে অর্থনীতিতে প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করেন। পাশাপাশি সম্পার স্কুলের সামনের একটি কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতা করেন।
বর্ণার সুইসাইড নোটেও মুন্না (১৮) নামে অপর এক যুবকের নাম লেখা ছিল। মুন্না তবে তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এলাকাবাসী ও পুলিশ বলছে, ঘটনার পর থেকেই মুন্না পলাতক।
সুইসাইড নোটে কী লেখা আছে তা পুলিশ প্রকাশ না করলেও সম্পার পরিবারের দাবি, বিপ্লব হোসেনের সঙ্গে সম্পার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি সে অন্য এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ কারণে সম্পা তার মৃত্যুর জন্য বিপ্লবকে দায়ী করে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করে।
আর বর্ণার পরিবারের দাবি, বেলঘরিয়া এলাকার আবদুল কাদেরের বখাটে ছেলে মুন্না বর্ণাকে উত্ত্যক্ত করত। বখাটে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে পথ আটকিয়ে বর্ণাকে প্রেমের প্রস্তাব দিত। কখনও কখনও বাড়িতে গিয়েও হাজির হতো। এসব কারণে বর্ণা অতিষ্ঠ ছিল। আর এ কারণে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ দুই বান্ধবী একসঙ্গে আত্মহত্যা করেছে।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর জানান, দুই কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী হয়েছেন সম্পার মা শরিফা বেগম। আরেক মামলার বাদী বর্ণার বাবা নজরুল ইসলাম।
ওসি জানান, দুই মামলায় আলাদা আলাদা করে মুন্না ও বিপ্লবকে আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে বিপ্লবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুন্নাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
নগরীর মতিহার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকতার হোসেন জানান, সুইসাইড নোটে নিজের নাম থাকায় হৈচৈ শুরু হওয়ায় বিপ্লব তার আত্মীয়-স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরে থানায় আসে। এ সময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তবে তাকে তখন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। পরে বিকেলে তার নামে মামলা হলে তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে।