শনিবার সকালে দুর্গাপুর উপজেলার এ ঘটনা ঘটে। একই দিন রাজশাহী মহানগরীর কুমারপাড়া এলাকার ফারহানা ইয়াসমিন পিংকি (২৪) নামের এক গৃহবধূও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
১৫ নভেম্বর রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ শাহাপুর এলাকায় গলায় ফাঁস দিয়ে দুই বান্ধবী একই সঙ্গে আত্মহত্যা করে। এরা হলেন, নগরীর মতিহার থানার শাহাপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার নাজমুল হক নাজুর মেয়ে বর্না (১৩) ও একই এলাকার মুক্তার আলী মেয়ে উম্মে মারিয়া সম্পা (১২)।
রাজশাহীতে হঠাৎ করেই বেড়ে চলেছে আত্মহত্যার প্রবণতা। সম্প্রতি সময়ে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে তরুণ-তরুনিরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। পুরো সমাজে পারিবারিক বন্ধন ও মুল্যবোধের বিপর্যয়ের কারণে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে জানিয়েছেন মনোবিজ্ঞানিরা।
শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী রাজশাহীতে গত ১০ মাসে ১৪২ জন আত্মহত্যা করেছেন এদের মধ্যে অধিকাংশই স্কুল-কলেজের ছাত্রী। আত্মহত্যা একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে। অকাল মৃত্যু একটি পরিবারকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়।
এদের বেশিরভাগ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, কেউ পরকীয়া আবার কেউ সামান্য অভিমান করেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিদ্যাপিঠে ৬ বছরে ১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়াও এক শিক্ষকও আত্মহত্যা করেছেন।
গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের নিজ কক্ষ থেকে শিক্ষক আকতার জাহান জলির মরদেহ উদ্ধার করে নগরীর মতিহার থানা পুলিশ। পরে ওই কক্ষ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আনোয়ারুল আলম সুফি জানান, পুরো সমাজে পারিবারিক বন্ধন ও মুল্যবোধের বিপর্যয়। এর কারণেই এ ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
তিনি আরো জানান, বর্তমান সময়ে মানুষ তার সমস্যা খুলে বলতে পারছে না। পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। এটাও একটি অন্যতম কারণ। মানুষ পরিবারগত ভাবেই একা হয়ে যাচ্ছে। আগে পরিবারে নানি-দাদির মতো বয়স্ক ব্যক্তিদের কাছে মনের কথা খুলে বলতো ও সমস্যা খুলে বলতো।
মনোবিজ্ঞান বিভাগে যে কাউন্সিলিং সার্ভিস আছে সেখানে গত এক মাসে ১২ জন শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধান করেছে যারা আত্মহত্যার দিকে যাচ্ছিলো।
উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি জানান, ঢাকা থেকে কয়েকদিন আগে এক নারী ফোন দিয়ে জানান যে, তিনি আগামীকাল আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন। এরপরে ওই নারী তার সমস্যার কথা খুলে বলেন। তাকে কাউন্সিলিং করা হয়। চারদিন পর ওই নারী জানান যে, তিনি তার আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। এখন তিনি নিজের ও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করছেন।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আনোয়ারুল আলম সুফি সম্প্রতি রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক জলির আত্মহত্যার ঘটনা টেনে জানান, যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে সে তার প্রিয় জিনিসগুলো দান করে দেয়। রাবি শিক্ষক জলির ক্ষেত্রের এমন ঘটনা ঘটেছে। কেউ যদি এমন ঘটনা ঘটায় তাহলে পরিবারকে সর্তক হতে হবে।