আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: দিনাজপুরে ছিনতাইকৃত মালামাল উদ্ধারসহ ছিনতাইকারী চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার        জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবাকে কবর দিতে ছেলের বাঁধা ॥ পুলিশের হস্তক্ষেপে দাফন       নীলফামারীতে স্বামীর প্রথম বিয়ের খবরে নববধূ দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মহত্যা ॥ স্বামী গ্রেপ্তার       রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে      

 width=
 

‘আমরা কারো মই হব না’

সোমবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৬, বিকাল ০৬:৪৪

রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটউটে সোমবার দুপুরে জাতীয় পার্টির জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর কমিটির সভাপতি, আহ্বায়ক, সদস্য সচিবদের এ যৌথ সভা হয়। ১ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য দলের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এই সভা।

যৌথসভায় দলের কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, পয়লা জানুয়ারি আমাদের উৎসব হবে। আমি এটাকে উৎসবই বলব। আমরা ২৫-২৬ বছর থেকে ক্ষমতার বাইরে। এতো জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও আমরা ক্ষমতার বাইরে কেন?

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, অনেকেই বলেছেন আমরা আর কাউকে ক্ষমতায় বসানোর মই হব না। কেন হব না? সেই ক্ষমতা কী আমাদের আছে? আমাদের সেই ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

তিনি বলেন, একটি বিশেষ মুহূর্তে জাতীয় পার্টির সৃষ্টি হয়েছিল। জাতীয় পার্টির প্রয়োজন ছিল, আছে। জাতীয় পার্টি যেসকল উন্নয়নমূলক কাজ করেছে সেগুলো প্রচার করতে হবে। যা বেশির ভাগেরাই করেন না। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলেন। আর সেই স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল একমাত্র জাতীয় পার্টি। আর কোনো পার্টি এই উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই।

রওশন এরশাদের বক্তব্য চলাকালে নেতা-কর্মীরা দলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য স্লোগান দিতে থাকেন ‘পল্লী বন্ধুর মিথ্যা মামলা তুলে নাও নিতে হবে’। প্রায় ২০ মিনিটের মতো এ স্লোগান চলে।

দলের নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে রওশন বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার প্রথম কন্ডিশন ছিল আমাদের চেয়ারম্যানের মামলা তুলে নিতে হবে। কিন্তু সে কথা তারা রাখছে না। আমি এটা নিয়ে আবারও সংসদে কথা বলব। আমার কথা শুনুন, কথা না শুনলে বুঝবেন কি করে। আমাদেরকে শক্তি অর্জন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একশবার বলেছি মামলা প্রত্যাহার করেন। তিনি বলেছেন করব, করব। যতবারই মামলার কথা বলেছি, ততবারই বলেছেন এই হচ্ছে, এই হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে রওশন বলেন, মামলা নিয়ে আপনারা যেভাবে হতাশ, তার থেকে বেশি হতাশ তো আমি। সে (এরশাদ) আপনাদের চেয়ারম্যান। আমারতো স্বামী। কোনো চিন্তা করবেন না। সব দায়িত্ব আমি নিয়ে নিয়েছি, কোনো চিন্তা করবেন না।

নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে ভোল পাল্টিয়ে রওশন বলেন, আমরা আর কাউকে ক্ষমতায় বসাতে মই হব না। তাই আমাদেরকে শক্তি অর্জন করতে হবে। জনগণ আমাদেরকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। কিন্তু তার জন্য তো শক্তি অর্জন করতে হবে। এমনি এমনিতো কেউ আমাদেরকে ক্ষমতায় বসাবে না। যেভাবে আমাদের চেয়ারম্যানকে ক্ষমতায় বসানো যায়। সেভাবে আপনারা কাজ করুন।

পরে সভাপতির বক্তব্যে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমাদের ভালোবাসায় আমি আপ্লুত। আমার জন্ম আজ স্বার্থক। দুর্বলের সাথে কেউ হাত মেলায় না। তাই শপথ নিয়ে শক্তিশালী হও। জাতীয় পার্টি ছাড়া এখন আর কোনো দল মাঠে নেই। তোমরা প্রস্তুত হও।

তিনি বলেন, আমি জেল খেটেছি। আমার স্ত্রীও জেল খেটেছে। আমার সন্তানের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। আগামী দিনে ক্ষমতায় যাব শুধু এই স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছি। তোমরাই পারো সেই স্বপ্ন পূরণ করতে।

প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ত্রুটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিমান খারাপ হয়। এর আগে আমি শুনিনি। আমিও অনেক দেশ ভ্রমণ করেছি, বিমান নষ্ট হয় নাই। দুর্নীতির কারণে এসব হয়েছে। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) তাদের বিচার করুন। আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, আপনি মরে গেলে আমরা কোথায় যাব।

এরশাদ বলেন, আমি ক্ষমতায় যেতে চাই। কেউ মারা যাওয়ার পর নয়। নির্বাচন করে সবার ভালোবাসা নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই।

রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিন, ওরাও তো মানুষ। না হয় আমাদের দেশে আরো ৫০ লাখ মানুষ বেশি হবে।

যৌথ সভায় নেতা-কর্মীরা দলের চেয়ারম্যানের মামলা প্রত্যাহার না করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বগুড়া জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওমর বলেন, অনেকের মামলা প্রত্যাহার করা হলেও আমাদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটিমাত্র মামলা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। আমি দ্রুত এ মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, পয়লা জানুয়ারির সম্মেলনে পল্লীবন্ধু আগামীতে এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার রুপকল্প দেবেন। জাতীয় পার্টি আর কাউকে ক্ষমতায় বসানোর মই হবে না।

তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসতে পারত না। সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি জাতিকে আরেকটি ১/১১ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা জাতীয় পার্টির সব অবদানের কথা ভুলে গেছে। সব নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাথে তারা বিমাতাসুলভ আচরণ করছে।

চেয়ারম্যানকে ‍উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, পয়লা জানুয়ারি আপনার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, মেকানিজম সবকিছু নেতাকর্মীদের কাছে প্রকাশ করবেন। এটা আপনাকে করতেই হবে।

দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী বলেন, পল্লী বন্ধুকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। বর্তমানেও দলের এমপি-মন্ত্রী আছে কিন্তু তাতে দলের কোনো কাজ হয় না। পল্লীবন্ধু ক্ষমতায় না এলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন হবে না।

যৌথ সভায় দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু, মশিউর রহমান রাঙা, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, দেলোয়ার হোসেন খান, ফখরুল ইসলাম চৌধুরী, মজিবুর রহমান সেন্টু, হাফিজ উদ্দীন আহমেদ, রত্না আমীন হাওলাদারসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন


 

Link copied