আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

‘গণতন্ত্রের বিজয়’ বনাম ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস

বুধবার, ৪ জানুয়ারী ২০১৭, রাত ১০:৪৮

আবদুল লতিফ মন্ডল

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি রাজধানীতে দলীয় এক সভায় দলটির পক্ষে এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ওই দিনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিজয় পেয়েছে। তাই গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উপলক্ষে ৫ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা-উপজেলায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

অন্যদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী জাতীয় সংসদের বাইরে প্রধান বিরোধী দল এবং দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস হিসেবে পালন করার কর্মসূচি নিয়েছে। দলীয় সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, একতরফাভাবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিএনপি দু’দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে বিএনপি ৫ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকা ছাড়া সারা দেশে কালো পতাকা মিছিল, মুখে কালো কাপড় পরিধান ও বুকে কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালন এবং ৭ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে। তবে ৩০ ডিসেম্বর দলীয় এক সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের হুশিয়ারি ‘৫ জানুয়ারি বিএনপিকে রাজপথে নামতে দেয়া হবে না’ এবং ওই দিনই এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী আহমেদের ‘৫ জানুয়ারি কালো পতাকা মিছিল’ করার পাল্টা ঘোষণা জনমনে ভীতি ও আতংক সৃষ্টি করেছে।

গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, বিকাশ ও উন্নয়নে দেশের বড় দলগুলোর কতটা দরদ বা ‘কমিটমেন্ট’ রয়েছে, স্বাধীনতার পর থেকে জনগণ তা দেখে আসছে। গত ৩০ নভেম্বর যুগান্তরে প্রকাশিত আমার এক নিবন্ধে বলেছিলাম, গণতন্ত্র অতীতেও বিপদে পড়েছে, এখনও বিপদে আছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এ সত্যটি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে জনগণ স্বাধীন বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাদের সে স্বপ্ন স্বাধীনতার ঊষালগ্নেই ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়। স্বাধীন বাংলাদেশ বাস্তব রূপ পরিগ্রহণের পর তিন বছর পার হতে না হতেই ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রের কণ্ঠ রোধ করার উদ্যোগ নেয় তৎকালীন শাসক দল আওয়ামী লীগ। বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের স্থলে প্রতিষ্ঠিত হয় একদলীয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা। মূল সংবিধানে স্বীকৃত সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হয়। ওই বছরের জুনে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা চারটি সংবাদপত্র বাদে বাকি সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়। এর আগে ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে পত্রপত্রিকা, রাষ্ট্রীয় রেডিও-টেলিভিশন, যানবাহনসহ পুরো প্রশাসনযন্ত্রকে ব্যবহার, ভয়ভীতি দেখিয়ে বিরোধী দলের প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করা ইত্যাদি অভিযোগ ওঠে। ফলে ১১টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। নির্বাচন কমিশন প্রতিকারমূলক কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়। কমিশন জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের ২৯৩টিতে শাসক দল আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর ১৫ বছর দু’জন জেনারেল সামরিক ও বেসামরিক পোশাকে দেশ শাসন করেন। তবে এদের মধ্যে প্রথমজন জেনারেল জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়ে সব রাজনৈতিক দলের পুনরুজ্জীবন ঘটান এবং ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। অন্যজন জেনারেল এইচএম এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতায় আসার প্রায় চার বছর পর ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এ দু’জনের শাসনামলে তিনটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এসব নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দেশে বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেলেও বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হিংসাত্মক কার্যকলাপের কারণে গণতন্ত্রের অগ্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করলে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অনিয়ম ও ভোট কারচুপির অভিযোগ আনে এবং অন্য দুটি বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। দাবির মুখে বিএনপি সরকার ১৯৯৬ সালের মার্চে সংবিধান সংশোধন করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৯১-২০০৮ সময়কালে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রায় পালাক্রমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে। এ সময়কালে এ দুটি দলের যে দলই নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে, সে দলই নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি ইত্যাদি অভিযোগ এনে সংসদ বর্জন, হরতাল পালনসহ নানা ধরনের হিংসাত্মক কার্যকলাপের আশ্রয় গ্রহণ করেছে। তাদের এ ধরনের কার্যকলাপের ফলে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় গণপ্রত্যাশার কেন্দ্রস্থল জাতীয় সংসদ প্রায় অকার্যকর থেকে যায়। সংসদের অকার্যকারিতা এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সহিংস রাজনীতি গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দেয়। বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তনের জন্য আন্দোলন শুরু করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানোর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা, অনুরোধ সব ব্যর্থ হয়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোট এবং সমমনা আরও কয়েকটি দল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে এগিয়ে যায়। সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী গুটিকয়েক দলের অংশগ্রহণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ভোটারবিহীন প্রহসনমূলক নির্বাচন। শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নয়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান যথা- উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০১৪, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০১৫, পৌরসভা নির্বাচন ২০১৫ এবং গত বছরের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, ভোট কেন্দ্র থেকে বিরোধী দলগুলোর এজেন্টদের তাড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি অনিয়মের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ মনোনীত/সমর্থিত প্রার্থীদের অধিকাংশের জয় নিশ্চিত করা হয়। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের মডেলে ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আপাতত সমাপ্ত হয়েছে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন। কেবল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নির্বাচনের বিধান করায় বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিরোধী দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করে। ফলে ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো দেশের প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচন সরকারি দলের অংশগ্রহণে একদলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়। উপরের বর্ণনার মাধ্যমে যা বলতে চাওয়া হয়েছে তা হল, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, প্রসার ও উন্নয়ন সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন বড় দলগুলো এ পর্যন্ত যে বক্তব্য দিয়েছে এবং এখনও দিচ্ছে, তা গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না বৈ আর কিছু নয়। এখন ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আগামী ৫ জানুয়ারির কর্মসূচি প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। আওয়ামী লীগ বলেছে, ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিজয় পেয়েছে।’ তাই গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উপলক্ষে ওই দিন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা-উপজেলায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দেখা যাক, বাস্তবে তাদের এ দাবি কতটা যৌক্তিক। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ২৮টি দল ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বয়কট করায় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের ১৫৩টিতে সরকারি ও তাদের সহযোগী গুটিকয়েক দল সমর্থিত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্যপদ লাভ করেন। বিশ্বে গণতন্ত্রের ইতিহাসে পার্লামেন্টের মোট সদস্যের অর্ধেকের বেশি সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার নজির নেই। তাহলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক বলা যায় কি? দ্বিতীয়ত, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় এবং এতে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিফলন না ঘটায় দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। গণতন্ত্রকামী বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন করে নির্বাচন দেয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এমনকি ভারত দশম সংসদ নির্বাচন সমর্থন করলেও তারা একই সঙ্গে দেশে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে আরেকটি সংসদ নির্বাচনের জন্য দ্রুত প্রস্তুতি নিতে শেখ হাসিনার সরকারকে পরামর্শ দেয়। ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের পর ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র পচে গেছে’ বলে বিদেশের কোনো কোনো পত্রিকায় মন্তব্য করা হয়। ৭ জানুয়ারি (২০১৪) দেশে একটি দৈনিকের (মানবজমিন) প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘জিতেছে আওয়ামী লীগ, হেরেছে গণতন্ত্র’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করে নির্বাচনোত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি ও অন্যসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেন, যদিও তিনি কয়েক মাসের মধ্যেই তার সে প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেন। প্রশ্ন হল, ১৫ জানুয়ারির নির্বাচনে গণতন্ত্রের বিজয় হলে প্রধানমন্ত্রী নতুন করে নির্বাচন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কেন? তৃতীয়ত, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় যে কোনো রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রয়েছে। আমাদের সংবিধানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কথা বললেও তাদের ‘৫ জানুয়ারি রাজপথে নামতে দেয়া হবে না’ মর্মে সরকারি দল হুমকি দিচ্ছে কেন? এতে কি গণতন্ত্রের পথ সুগম হওয়ার পরিবর্তে আরও দুর্গম হয়ে উঠবে না? চতুর্থত, ‘আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র’- এ তত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে ওঠার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ কি গণতন্ত্রের বিকাশ ও উন্নয়নের পথকে বাধাগ্রস্ত করছে না? নির্ভেজাল গণতন্ত্র অনুসরণ করে যে উন্নয়ন করা যায়, পশ্চিমা দেশগুলো এবং পাশের দেশ ভারতের দিকে তাকালে তার অকাট্য প্রমাণ মেলে। একদিকে উন্নয়নের নামে গণতন্ত্রকে দাবিয়ে রাখা, অন্যদিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ দিবস পালন করা কি সাংঘর্ষিক নয়? ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন প্রায় একদলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার দায়ভার কিছুটা হলেও বিএনপির ঘাড়ে চাপে। এ কথা বললে হয়তো বাড়িয়ে বলা হবে না যে, দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির পক্ষে যে জনসমর্থন সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে বিএনপির জয়লাভ অনেকটা নিশ্চিত ছিল। সুশীল সমাজ, প্রখ্যাত আইনজীবীসহ অনেকে বিএনপিকে যে কোনো পরিস্থিতিতে দশম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সৃষ্ট প্রতিকূলতার মুখে নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংসদ সদস্য না পেলেও শক্তিশালী বিরোধী দল গঠনে সংসদ সদস্য পেতে তাদের মোটেই অসুবিধে হতো না। শাসক দল আওয়ামী লীগের ‘পাতা’ ফাঁদে পা দিয়ে বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছে। এর ফলে সৃষ্ট ‘দুর্ভোগ’ এখন তাদের পোহাতে হচ্ছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও এর বিকাশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই- সে নির্বাচন জাতীয় বা স্থানীয় যে পর্যায়েই অনুষ্ঠিত হোক। ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ এবং ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস পালনের অর্থ হচ্ছে দুটি পরস্পরবিরোধী কর্মসূচি পালন। এতে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটার সমূহ আশংকা থেকে যায়। এরূপ কোনো ঘটনা ঘটলে তা গণতন্ত্র বিকাশের পথকে আরও দুর্গম করে তুলবে। এ ধরনের পরস্পরবিরোধী কর্মসূচি পালনের চেয়ে এ মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের বিকাশের পথ সুগম করে তোলা। এ জন্য সরকারি দলকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। লেখক : সাবেক সচিব, কলাম লেখক latifm43@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied