প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্র“য়ারি সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে সেখানে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং ৪ পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া সুন্দরগঞ্জের গংসারহাটে আওয়ামী লীগ সমর্থক রিক্সাচালক শরিফুলকে জিহবা কেটে হত্যা, একই উপজেলার ডোমেরহাটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা খলিলুর রহমান মামুন হত্যা, সাঘাটার বুরুঙ্গিতে রেলে সহিংসতা চালিয়ে ৪ যাত্রী হত্যা, পরবর্তীতে যাত্রীবাহি বাসে পেট্টোল বোমা নিক্ষেপ করে গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের তুলসীঘাটে ৯ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা, গোবিন্দগঞ্জে ব্যবসায়ি তরুণ দত্ত ও মহিমাগঞ্জের দেবেশ প্রামানিককে হত্যা এবং সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর এমপি লিটন হত্যাসহ ২২টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। যার ফলশ্র“তিতে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণে এমপি লিটনের এই মর্মান্তিক হত্যা।
মোবাইল ট্র্যাকিং প্রযুক্তির ব্যবহার: এমপি লিটন হত্যার ঘটনায় পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা বিভাগের চৌকশ এবং মেধাবী বিশেষায়িত একাধিক তদন্ত টিম সর্বাধিক গুরুত্বসহ তদন্ত করছে। পুলিশের পক্ষ থেকে এ কথাটি একাধিকবার বলা হয়েছে কিন্তু এখনও তারা হত্যার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে সক্ষম হয়নি বলে জানানো হচ্ছে। গ্রেফতারও হয়নি প্রকৃত খুনি। অথচ এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন যে ২১ জন জামায়াত-শিবিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সুন্দরগঞ্জের পুলিশ হত্যা মামলাসহ একাধিক নাশকতা মামলার আসামি বলে জানা গেছে। তবে পুলিশ তাদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তাদের মোবাইল ফোনগুলো ট্র্যাকিং করে এই হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নির্ণয় করার চেষ্টা করছে। শুধু তাই নয়, লিটন, তার স্ত্রী, তার ও কর্মচারিদের মধ্যে হত্যাকান্ডের দিন বা আগের দিন যারা মোবাইল ফোনে যারা কথাবার্তা বলেছেন সেগুলো অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে। এমনকি হত্যার আগের দিন থেকে হত্যার দিন যারা এমপি লিটনের সাথে দেখা করেছেন তাদের সম্পর্কেও পুলিশ খোঁজ খবর নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
জামায়াত-শিবিরের সন্দেহভাজনদের সাথে লিটন বিরোধী আওয়ামী লীগ গ্রুপের সখ্যতা: জামায়াত-শিবিরের সন্দেহভাজনদের সাথে সুন্দরগঞ্জের আওয়ামী লীগের শক্তিশালী লিটন বিরোধী গ্রুপটির সখ্যতার বিষয়টি পুলিশ গোপনে তদন্ত করে দেখছে বলে বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গেছে। প্রসঙ্গত উলে¬খ্য যে, উপজেলা পরিষদের জামায়াতের উপজেলা চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সোলায়মান ইসলাম সাজা এবং জামায়াত নেতা হুরাঘাট মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল সাখোয়াত কাজীর সাথে লিটন বিরোধী গ্র“পটির বিশেষ সখ্যতা বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। এমনকি একজন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রচারণায় গত ১২ ডিসেম্বর রামজীবন ইউনিয়নের রাঙ্গা মিয়ার বাড়িতে তাদের একত্রিত কাজ করতেও দেখা গেছে। তদুপরি কট্টর লিটন বিরোধী মাসুদ, লোকমানের যে দলটি বিগত উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় লিটনের উপর দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা চালিয়েছিল তাদের সাথেও জামায়াতের ওই গ্র“পটির সখ্যতা পরিলক্ষিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লিটন হত্যার তদন্তে এ বিষয়গুলো গুরুত্বসহ বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন।
শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর সুন্দরগঞ্জের সকল মসজিদে লিটনের রূহের মাগফেরাত কামনা: শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সকল মসজিদে এমপি লিটনের রূহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত এবং মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে লিটনের এই বিশাল বাড়িতে এখন শুধু তার চাচি শিমু এবং মামাতো বোন স্মৃতি এবং কেয়ারটেকাররা ছাড়া আর কেউ নেই। যে বাড়িটি দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ভীড়ে সব সময় মুখর হয়ে থাকতো সেই বাড়িটি এখন খাঁ খাঁ করছে এবং চারদিকে বিরাজ করছে সুনসান নিরবতা। তবে ওই বাড়িতে এবং সংলগ্ন এলাকায় পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজনরা তাদের পদচারণা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া এখনও অনেক দলীয় নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে এমপি লিটনের কবর জিয়ারত করছে এবং পুষ্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।