গণমাধ্যমে শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) স্থানীয়রা রাজধানীতে আগের রাতে বন্দুকযুদ্ধে তার মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। একইভাবে সাদ্দামের নিহত হওয়ার খবর পান তার পরিবার। আট মাস ধরে ‘নিখোঁজ’ সাদ্দামের হদিস এভাবেই পাওয়ার পর এখন তার লাশ নিতে চায় তার পরিবার। সাদ্দামের মায়ের আকুতি, থাকেন, ‘সরকারক কন লাশটা দেউক, বাবাক নিয়া আমি মাটি দেই।’
আনন্দ বাজার গ্রামের দরিদ্র কৃষক তাজুল আলমের সাত সন্তানের পঞ্চম সন্তান নিহত জেএমবি সদস্য সাদ্দাম হোসেন। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) গভীর রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সাদ্দাম নিহত হলেও তার পরিবারের কাছে খবর পৌঁছে শুক্রবার দুপুরে।
সাদ্দামের পরিবার জানায়, শুক্রবার দুপুরে সাদ্দামের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকের কাছে প্রথম ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শোনেন তারা।
সাদ্দামের মা সুফিয়া বেগম ও বড় ভাই মিজানুর রহমান দাবি করেন, গত বছর এপ্রিলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে শ্বশুর বাড়ি থেকে সাদ্দামকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর থেকে তারা অনেক চেষ্টা করেও আর সাদ্দামের খোঁজ পাননি।
বড় ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ‘সাদ্দামকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার চার মাস পর সাদ্দামের স্ত্রী ফারজানা একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।’ তবে সাদ্দামের স্ত্রী ও পুত্র কোথায় এখন আছে তা জানাতে পারেননি মিজানুর।
এদিকে, উপস্থিত গ্রামবাসী ও সাদ্দামের মা সুফিয়া বেগম বারবার জানতে চাচ্ছিলেন, সরকার কি লাশ ফেরত দেবে? ‘লাশ আনতে গেলে আবার কোনও ঝামেলা হবে না তো?’, প্রশ্ন তাদের।
সাদ্দামের মা সুফিয়া বেগম ছেলেকে চিরতরে দাফন করার আগে একবার শেষবারের মতো দেখতে চান তিনি। সরকার নিহত সাদ্দামের লাশ দিলে গ্রহণ করতে চান তিনি ও তার পরিবার।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, সাদ্দাম হেসেনের জন্ম ১৯৯৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে। ছোটবেলা থেকেই গ্রামে শান্ত, মার্জিত ও ভদ্র ছেলে বলে পরিচিত ছিল সে। দাখিল ও আলিম পাস করার পর লালমনিরহাট সরকারি কলেজে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক (সম্মান) কোর্সে ভর্তি হয়। প্রথম বর্ষ পরীক্ষা দিলেও দ্বিতীয় বর্ষ থেকে আর কলেজে উপস্থিত ছিল না সে। গত বছরের ২২ মার্চ কুড়িগ্রামে ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামী সে।