আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

বোরো মৌসুমে তিস্তা সেচ কার্যক্রমে পানি স্বল্পতায় বাদ পড়েছে রংপুর-দিনাজপুর

রবিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৭, রাত ০৮:৪৫

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ১৫ জানুয়ারী॥ উজান হতে নেমে আসা চুয়ানো পানি প্রবাহের ওপর ভর করে আজ রবিবার (১৫ জানুয়ারী) হতে চলতি খরিপ-১ মৌসুমে (বোরো) দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।তিস্তা শুকিয়ে যাওয়ার কারনে  এবার রংপুর ও দিনাজপুর জেলার কমান্ড এলাকাকে সেচ সুবিধা থেকে বাদ রেখে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বোরো আবাদের পিক  সময়ে কমান্ড এলাকায় কি পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা পড়েছে বিপাকে। গত কয়েকদিন আগেও নদীর পানিপ্রবাহ প্রায় আড়াই হাজার কিউসেক থাকলেও তা রবিবার নেমে আসে মাত্র ৮০০ কিউসেকে  বলে জানা যায়। নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, সম্ভাবনা জাগিয়েও বারবার থেমে থাকছে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি। চুক্তি না থাকায় বিগত সময়ের মতো এবারও চলতি মৌসুমে নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। ফলে তিস্তা নদী ধু-ধু বালুচরে পরিণত হচ্ছে। তিস্তাপাড়ের মানুষজন বলছে ভারত উজানের গজলডোবা ব্যারাজের মাধ্যমে তিস্তা নদীর পানি আটকিয়ে তাদের এলাকার জলবিদ্যুৎ ও সেচ কার্যাক্রম পরিচালনা করছে। আর বাংলাদেশ অংশের তিস্তা নদী বালুচরে পরিনত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৪ সালে এই মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৬৫ হাজার হেক্টরে সেচ সুবিধা প্রদানের ল্যমাত্রা ছিল। সেচ দেয়া হয় মাত্র ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে সেচ প্রদান করা হয় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে।   তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ দিন দিন কমতে থাকায় এবার মাত্র ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানে ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে দিনাজপুর ও রংপুরের কমান্ড এলাকা সেচ কার্যক্রম থেকে বাদ দিয়ে শুধু নীলফামারী জেলার ডিমলা, জলঢাকা, নীলফামারী সদর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে সেচের আওতায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারী সদরে ৮০০ হেক্টর, ডিমলা উপজেলার ৫ হাজার হেক্টর, জলঢাকা উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর, কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ২০০ হেক্টর। তবে উজানের প্রবাহ পাওয়া গেলে সেেেত্র সেচের জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করা যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে জানা গেছে। কৃষকরা বলছেন,  জমি তৈরি থেকে চারা রোপণ এবং আবাদ চলমান পর্যন্ত প্রচুর সেচের প্রয়োজন হয়। এখন তিস্তায় পানি নেই। তাই সেচ প্রকল্পের সেচের আশা বাদ দিয়ে নিজেরা সেচযন্ত্র (স্যালো) ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়েছে। ডিমলা উপজেলার নাউতরা ইউনিয়নের সাতজান গ্রামে তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রধান খালের পাশের কৃষক বেলাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, উজানের প্রবাহ না থাকায় তিস্তা সেচ প্রকল্প আগের মতো পানি দিতে পারে না। ফলে নিজস্ব সেচযন্ত্র দিয়ে এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করতে খরচ হবে ৫ হাজার টাকা। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান, চলতি রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে রোববার থেকে সেচ প্রদান শুরু করা হয়। তবে শুরুতে সেচ দেয়া হয়েছে জলঢাকা উপজেলার হরিশচন্দ্র পাট এলাকায়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ল্যমাত্রা অনুযায়ী সেচ প্রদানের চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, উজানের প্রবাহ দিন দিন কমে আসায় তিস্তা নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে তিস্তা ব্যারাজের কমান্ড এলাকায় স¤পূরক সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় পরিমাপ বিভাগের সূত্র মতে, শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি কমবে, বাড়বে এটি স্বাভাবিক ব্যাপার। তারপরও তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড পরিমাণ কমছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখতে তিস্তা ব্যারাজের সেচ প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার কিউসেক পানি প্রয়োজন। শুস্ক মৌসুমে তিস্তা পানি স্বল্পতার কারন অনুসন্ধ্যানে দেখা যায়, ভারত-বাংলাদেশ স¤পর্কের মধ্যে যে কয়টি বিষয় নিয়ে খুব বেশি টানাপোড়েন চলছে, তার মধ্যে তিস্তা ইস্যু একটি। উত্তরাঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন তিস্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশেষ করে   তিস্তা অববাহিকার ৫ হাজার ৪২৭টি গ্রামের মানুষ তাদের জীবিকার জন্য এই নদীর ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। তাই তিস্তার পানির প্রবাহ কমে যাওয়া আমাদের জীবন ও জীবিকায় আঘাতস্বরূপ। তিস্তা অববাহিকার ৮ হাজার ৫১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলের মধ্যে পড়েছে। আর সমতল ভূমিতে তিস্তা অববাহিকার পরিমাণ ৪ হাজার ১০৮ বর্গ কিলোমিটার, যার প্রায় অর্ধেক অংশ পড়েছে বাংলাদেশের সীমানায়। দুই দেশই তিস্তার পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন সময়ে নদীর ওপর ও আশপাশে ব্যাপক অবকাঠামো তৈরি করেছে। ভারত এই মুহূর্তে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচ কার্যক্রমের জন্য তিস্তার পানি ব্যবহার করছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ তিস্তার পানি ব্যবহার করছে শুধু পরিকল্পিত সেচ দেওয়ার কাজে।কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে ভারতের একচেটিয়া পানি প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশ অংশে তিস্তার পানি ক্রমাগত কমে গেছে। এর দরুন তিস্তার পানির ওপর নির্ভরশীল উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ১২টি উপজেলা যেমন: ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ, নীলফামারী সদর, সৈয়দপুর, রংপুর সদর, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, গঙ্গাচরা, পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর ও খানসামা, যারা তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি জমিতে সেচসুবিধা পেয়ে থাকে, তাদের কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এখানে বলা প্রয়োজন, আউশ ও আমন মৌসুমে ভারতের পানি প্রত্যাহারের পরও তিস্তা নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকে, যার ফলে সেচ কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয় না। তিস্তায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ শুধু শুষ্ক মৌসুমে বোরো উৎপাদনের েেত্র মারাতœক ভাবে তিগ্রস্থ হচ্ছে। কারণ শুষ্ক মৌসুমে অন্যান্য সময়ের তুলনায় তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ কম থাকে। ভারত তার ৬৮ মেগাওয়াট মতাস¤পন্ন জলবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির সেচের চাহিদা মিটিয়ে যে পরিমাণ পানি ছাড়ে, তা দিয়ে বোরো মৌসুমে আমাদের সেচ চাহিদার অর্ধেকও পূরণ করা যায় না। ১৯৯৭ সালে বাংলদেশে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানির প্রবাহ ছিল প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কিউসেক, যা ২০০৬ সালে নেমে আসে ১ হাজার ৩৪৮ কিউসেকে এবং ২০১৪ সালে পানির প্রবাহ এসে দাঁড়ায় মাত্র ৭০০ কিউসেক, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এখন আসা যাক শুষ্ক মৌসুমে পানি কম পাওয়ার কারণে আমাদের অর্থনৈতিক তি কতটুকু হচ্ছে তার পরিমাণের ওপর। ১৯৯৩-৯৪ শস্যবছর থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ১২টি উপজেলায় ব্যাপকভাবে আউশ ও আমন উৎপাদনের মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়নের ল্েয তিস্তার পানি দিয়ে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ২০০৬-০৭ শস্যবছর থেকে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ল্েয বোরো মৌসুমেও সেচ কার্যক্রম প্রসারিত করা হয়। আমন মৌসুমে মোট সেচযোগ্য ৭৯ হাজার ৩৭৯ হেক্টর এলাকার প্রায় স¤পূর্ণটাই সেচের আওতায় আনা সম্ভব হলেও বোরোর েেত্র পানির দু®প্রাপ্যতায় সেচ-সাফল্যের চিত্র একেবারেই হতাশাজনক। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৬-০৭, ২০০৮-০৯ ও ২০১৩-১৪ শস্যবছরে সর্বমোট সেচযোগ্য ৭৯ হাজার ৩৭৯ হেক্টর জমির মধ্যে যথাক্রমে মাত্র ১১ হাজার ৩২৩, ২৯ হাজার ৪২৫ ও ২৭ হাজার ৪৮৬ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হয়েছে, যা মোট সেচযোগ্য জমির মাত্র ১৪ শতাংশ, ৩৭ শতাংশ ও ৩৫ শতাংশ। যেহেতু তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকায় নদীর পানি ছাড়া অন্য কোনো সেচের ব্যবস্থা নেই, তাই প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ জমি চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে পানির অভাবে সেচ কার্যক্রম বিঘিœত হওয়ার কারণে ধানগাছ শুকিয়ে মারা যাচ্ছে, এতে করে বীজতলা তৈরি ও উন্নতমানের বীজ ক্রয়ে কৃষকের করা বিনিয়োগ নষ্ট হচ্ছে। ফলে ওই অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষক প্রচুর অর্থনৈতিক তির সম্মুখীন হচ্ছেন, যার প্রত্য প্রভাব পড়ছে তাঁদের জীবনমানে। আমাদের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তিস্তা নদীতে পানির সংকটের কারণে সর্বমোট ৪২ লাখ ৫৪ হাজার ২১৮ মেট্রিক টন বোরো ধান আমরা উৎপাদন করতে পারিনি। চলতি বাজারমূল্যে এর পরিমাণ ৮০০ কোটি টাকার ওপরে, যা নিঃসন্দেহে আমাদের জিডিপিতে উলেখযোগ্য অবদান রাখতে পারত, শক্তিশালী করতে পারত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাদ্যনিরাপত্তা বলয় এবং একইভাবে বাড়াতে পারত অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থকা ওই অঞ্চলের কৃষকদের আয়। তিস্তায় পানির দু®প্রাপ্যতার কারণে অর্থনৈতিক তি ছাড়াও আরেক ধরেনের তির সম্মুখীন হচ্ছি আমরা, যা সচরাচর বলা হয় না, আর হলেও যে ব্যাপকতায় বলা দরকার, সেভাবে বলা হচ্ছে না, আর তা হচ্ছে পরিবেশগত তি। ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই ১০ বছরের মধ্যে পাঁচ বছরই শুকনো মৌসুমে তিস্তা নদীতে কার্যত কোনো পানি ছিল না। আরেকটু পরিষ্কার করে বললে, শুকনো সময়ে যে সামান্য পরিমাণ পানি ভারতের প্রত্যাহারের পর তিস্তা নদীতে পাওয়া যায়, তার সবটুকুই সেচ চাহিদা মেটানোর ল্েয তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েক শ সেচ খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর দরুন ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারাজের পর থেকে ৯৭ কিলোমিটার বিস্তৃত তিস্তা নদীতে এক কিউসেক পানিও থাকছে না। এ কারণে তিস্তা অববাহিকার বাংলাদেশ অংশের এই বিশাল পরিমাণ নদীগর্ভ পরিণত হচ্ছে বালুচরে। তিস্তা ব্যারাজ এলাকার পর শুকনো মৌসুমে এভাবেই নদী মারা যাচ্ছে। যেহেতু তিস্তা নদী উত্তরাঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে, তাই যমুনা নদীর পানির একটি উলেখযোগ্য অংশ তিস্তা নদী থেকেও বাহিত হয়। তিস্তা নদী যখন শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে, তখন যমুনা নদীতেও পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে তিস্তা নদীর যে প্রাকৃতিক কার্যাবলি আছে, শুকনো মৌসুমে নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে তা বিঘিœত হচ্ছে, ব্যাহত হচ্ছে নদী অববাহিকায় প্রতিবেশগত ভারসাম্য এবং সর্বোপরি তিস্তা হারাচ্ছে তার অতীত পরিবেশগত সমতা।এ কথা বলার অপো রাখে না যে তিস্তা নদী যখন শুকিয়ে যায়, তখন নদীকেন্দ্রিক জীববৈচির্ত্যও প্রবল হুমকির সম্মুখীন হয়। এই তিস্তা নদীতে একসময় ইলিশ মাছ পর্যন্ত অহরহ পাওয়া যেত, কিন্তু এখন ইলিশ মাছ তো নয়ই, অন্য প্রজাতির বড় মাছও দুর্লভ হয়ে গেছে। অপর দিকে নদীর পানির প্রবাহ কমে যাওয়া এবং নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও ক্রমান্বয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, রংপুর ও ডালিয়ার আশপাশে যেসব এলাকায় আগে মাটির ৩৫-৪০ ফুট গভীরে ভূগর্ভস্থ পানি পাওয়া যেত, তা এখন ৬০-৬৫ ফুট বা জায়গাভেদে তার চেয়েও নিচে নেমে গেছে। এর দরুন উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য এলাকার কৃষক, যাঁরা সরাসরি তিস্তার পানি পান না এবং সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করেন, তাঁদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আরেকটি কথা না বললেই নয়, যেহেতু উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তিস্তার মতো এত বড় নদী আর নেই, তাই ওই অঞ্চলের জলবায়ুর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তিস্তা নদীর ওপর নির্ভর করে। তাই তিস্তা নদী যদি এভাবে প্রায় প্রতিবছরই পানির অভাবে শুকিয়ে যায়, তাহলে অদূরভবিষ্যতে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জলবায়ুও তিগ্রস্থ হবে। তাই পরিবেশগত কারণেও তিস্তা নদীর অসীম মূল্য রয়েছে, যা নিয়ে আরও বৃহৎ পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন। তিস্তা অববাহিকায় শুষ্ক মৌসুমে পরিবেশগত ভারসাম্য রায় নদীতে সব সময় ৫৫০ থেকে ৭০০ কিউসেক এবং বোরোর চাহিদা পূরণে আমাদের অন্তত চার হাজার কিউসেক পানি দরকার। পরিশেষে যেটা বলতে চাইছি তা হলো, আমাদের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ক্ষতি প্রশমনের জন্য অবিলম্বে স্বচ্ছতা ও সমতার ভিত্তিতে তিস্তার পানি চুক্তি হওয়া প্রয়োজন। তিস্তা চুক্তি যতই প্রলম্বিত হবে, আমাদের তির পরিমাণ ততই বাড়বে এবং বাংলাদেশের তির বিপরীতে ভারতই লাভবান হতে থাকবে। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে যতটুকু অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তার পরিমাণ নিরূপণ করে ভারতের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করা অপরিহার্য। আমরা যদি আমাদের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ক্ষতিপূরণ না চাই, তাহলে ভারত ও তার জনগণ প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারবে না। আলোচনার টেবিলে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার তথ্য উপস্থাপনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরাটা আরও বেশি যুক্তিসংগত ও ফলপ্রসূ হবে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied