আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ● ৫ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা

শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, দুপুর ০১:৫০

গ্রেফতারকৃত শীতেন্দ্রনাথ পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের মাঠ কর্মী হিসেবে তেঁতুলিয়া উপজেলায় কর্মরত ছিলেন।

পুলিশ জানায়, গত ২৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টায় জেলার সদর উপজেলার অমরখানা-সাড়ে নয়মাইল এলাকায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে একটি মোটরসাইকেলসহ জয়ন্তী রানী ও তার শিশুপুত্র নারায়ণের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে পথচারীরা। এ সময় তাদের মৃতদেহের সামান্য দূরে শীতেন্দ্রনাথকেও পড়ে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা। পরে স্থানীদের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাপাতালের মর্গে এবং শীতেন্দ্রনাথকে আহত ভেবে হাসপাতালে ভর্তি করে।

বিষয়টি নিয়ে নিহত জয়ন্তী রানীর বাবার বাড়ির লোকজনের সন্দেহ হলে তার ছোট ভাই পরিমলচন্দ্র রায় বাদি হয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি শীতেন্দ্রনাথ, তার ভাই পরিমলচন্দ্র, দ্বিতীয় স্ত্রী পলি রানী ও ভগ্নিপতি উমেশচন্দ্র রায়কে আসামি করে পঞ্চগড় আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশকে নথিভূক্ত করে তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের তদন্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি পরিষ্কার হলে ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে শীতেন্দ্রনাথকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শীতেন্দ্রনাথের দেওয়া তথ্যানুযায়ী ওই রাতেই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া আব্দুর রাজ্জাক ও রয়েল রানা নামে আরও দুইজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের তেলীপাড়া এলাকার নবকুমার রায়ের মেয়ে জয়ন্তী রানীর সাথে জেলার বোদা উপজেলার বেংহারি ইউনিয়নের পুটিমাড়ি এলাকার হেমকুমার বর্মণের ছেলে শীতেন্দ্র নাথ রায়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই শীতেন্দ্র নাথ যৌতুকের জন্য প্রায়ই নির্যাতন করত জয়ন্তীকে। জয়ন্তীকে বিয়ের মাত্র তিন মাসের মাথায় মোবাইল ফোনে পরিচয়ের মাধ্যমে লালমনিরহাট জেলার পলি রানী নামের আরও এক মেয়েকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসে শীতেন্দ্র নাথ। এরপর পারিবারিক কলহ আরও বেড়ে গেলে প্রথম স্ত্রী জয়ন্তীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় শীতেন্দ্র। বাবার বাড়িতে চলে এসে জয়ন্তী রানী তার স্বামী শীতেন্দ্র নাথের নামে একটি নির্যাতন মামলা দায়ের করেন। পরে দুই পক্ষের পারিবারিক সমঝোতার মাধ্যমে মামলাটি তুলে নেয় জয়ন্তী। পরে শীতেন্দ্র নাথের কর্মস্থল তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরে একটি ভাড়া বাসায় শিশুপুত্র নারায়ণকে নিয়ে সংসার করতে থাকেন ওই দম্পতি। এর মধ্যে দ্বিতীয় স্ত্রী পলি রানীর সাথেও যোগাযোগ রাখতেন শীতেন্দ্র।

গত ২৩ জানুয়ারি রাতে বাবার বাড়িতে নিয়ে আসার কথা বলে মোটরসাইকেল যোগে তেঁতুলিয়া থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন শীতেন্দ্রনাথ। পরে ভাড়া করা লোকের মাধ্যমে পথিমধ্যে স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করে তা সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজান শীতেন্দ্র নাথ।

মামলার বাদি ও নিহত জয়ন্তী রানীর ছোট ভাই পরিমল চন্দ্র রায় বলেন, শীতেন্দ্র নাথ আমার বোন ও ভাগিনাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমরা তো আর আমার বোনকে ফিরে পাব না, আমি এই পাষণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল হাসান সরকার বলেন, ‘আমরা নিহতের স্বামীকে প্রথমে গ্রেফতার করি। এরপর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া রয়েল রানা ও আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করতে পেরেছি। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী আরও দুইজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া গ্রেফতারকৃতদের দুইজনকে শীতেন্দ্রনাথ ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন তারা। আসামিদের আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হবে।’

মন্তব্য করুন


 

Link copied