আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

পরিবহন শ্রমিকদের ঔদ্ধত্য আর কত?

বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০১৭, দুপুর ১২:৪৫

চিররঞ্জন সরকার

শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষমাত্রই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু আমাদের দেশে এই পরিবহন শ্রমিকরাই বিরাট একটা ‘দুষ্ট ক্ষতে’ পরিণত হয়েছে। তারা নানা উছিলায় সাধারণ মানুষকে জিম্মি করছে। তাদের ঔদ্ধত্য, অন্যায় আবদার মেটাতে দেশের নিরীহ মানুষকে প্রায়ই সীমাহীন ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। অথচ এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এখানে বলে রাখা ভালো যে, আমাদের দেশের শ্রমিকশ্রেণি একদল ‘টাউট-বাটপার’-এর স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। পরিহাসের বিষয় হলো, যে শ্রমিকরা তাদের নেতারূপী ‘টাউট-বাটপার’দের কথায় নাচছেন, তাদের জীবনের মূল্য কিন্তু অনেকটা মুরগির ডিমের মতো। ক্ষমতাধর নেতারূপী এই ‘টাউট-বাটপার’রা যা ভেঙে ভেঙে প্রতিনিয়ত পোচ করে খাচ্ছেন!

রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ গাড়িচাপা পড়ে মরছে, কোনো সমস্যা নেই। সাধারণ মানুষকে বাসচাপা দিয়ে মারা, লঞ্চে চড়িয়ে ডুবিয়ে মারা, পুড়িয়ে মারার জন্য কেউ দায়ী নয়। তাদের জন্য কথা বলার কেউ নেই। কিন্তু একজন ড্রাইভারের নিঃশর্ত মুক্তির জন্য আজ পুরো দেশ অচল হয়ে যাবার যোগাড়। যে সমস্ত অনভিজ্ঞ লোকদের ধরে ধরে লাইসেন্স দিয়ে গাড়িভর্তি মানুষের জীবনের কর্ণধার বানিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের জীবনের মূল্য আসলেই হয়তো অনেক বেশি! তা না হলে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত একজন ব্যক্তির জন্য এভাবে সারাদেশে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যেত না!

বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তারেক মাসুদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীরকে বহনকারী মাইক্রোবাসকে চাপা দেওয়া বাসচালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন সাজার বিরুদ্ধে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায়। সোমবার ধর্মঘটটি প্রত্যাহার করা হলেও অযৌক্তিক এ ধর্মঘটে কেবল ওই অঞ্চলের মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছিলেন তাই নয়, এ ধর্মঘট আদালত অবমাননারও শামিল। আদালতের যে কোনো রায়ের বিরুদ্ধে বাদী-বিবাদী বা যে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে উচ্চ আদালতে যেতে পারেন, প্রতিকার চাইতে পারেন; কিন্তু রায়ের বিরুদ্ধে ঘোষণা দিয়ে ধর্মঘট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাছাড়া যে দাবিতে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল তা নৈতিকভাবেও সমর্থনযোগ্য নয়। নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলেই সংঘবদ্ধ পেশাজীবী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে সবাইকে।

 অস্বীকার করার উপায় নেই, ওই বাসচালক দোষী সাব্যস্ত হয়েই সাজা পেয়েছেন। তারেক-মিশুককে বহনকারী মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেওয়ার সময় তিনি ঘুমের ঝোঁকে ছিলেন, এমনকি তার বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সও ছিল না। অথচ জামির হোসেনের বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ের পক্ষে না দাঁড়িয়ে চুয়াডাঙ্গা ও খুলনার পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলো রায়ের বিরুদ্ধে ধর্মঘট শুরু করে। রাষ্ট্রের সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দেশের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ধর্মঘট করার স্পর্ধা তারা পেল কীভাবে? কার মদদে? কার সাহসে?

 ওই দশ জেলায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হতে না হতেই মঙ্গলবার সকাল থেকে বিনা নোটিশে রাজধানীসহ সারাদেশে শুরু হয় পরিবহন ধর্মঘট। একজন শ্রমিক নেতা প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘যাবজ্জীবন আর ফাঁসির দায় মাথায় নিয়ে আমরা গাড়ি চালাতে পারব না। যতক্ষণ না আইন বাতিল ও দণ্ডিত চালকদের মুক্তি দেওয়া হবে, ততক্ষণ এ আন্দোলন চলবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের নেতা শাজাহান খান কেবিনেট মন্ত্রী। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললে দুই মিনিটের ব্যাপার।’

পরিবহন শ্রমিকরা বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মানুষ মারবে, কিন্তু তাদের আইনানুগ বিচার করা যাবে না, তাদের জন্য আইন বাতিল করতে হবে- এ যেন মামাবাড়ির আবদার! পরিবহন শ্রমিকদের দাবি যেন মানুষ খুনের লাইসেন্স পাবার অধিকারের জন্য আন্দোলনেরই নামান্তর! প্রশ্ন হলো, এমন অন্যায় দাবিতে আন্দোলন করার দুঃসাহস তারা পেল কোত্থেকে? তাদের খুঁটির জোর কোথায়? কেবিনেট মন্ত্রী শাজাহান খানের জোরেই কি তাদের এই আস্ফালন? শাজাহান খানেরই বা খুঁটির জোর কোথায়? কয়েক দিন পর পর বিভিন্ন ছুঁতো-নাতায় সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট করবে, সব কিছু অচল করে দেবে, শাজাহান খান নেপথ্যে ‘কলকাঠি’ নাড়বেন, আর সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বসে বসে আঙুল চুষবেন? সাধারণ মানুষের স্বার্থ, ন্যায় বলে কি কিছু থাকবে না? যারা আইন মানে না, জনস্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় একজন কেবিনেট মন্ত্রী কি আমৃত্যু সেই গোষ্ঠীর নেতা হয়েই থাকবেন? দেশে আইন-নীতি-নৈতিকতা-বিবেক বলে কি কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না?

সরকারের উচিত আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ধর্মঘটের মতো ক্ষতিকর প্রতিবাদের পথ বেছে নেওয়ায় অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাদের নিবন্ধন বাতিল করা যেতে পারে। অন্যথায় যখন-তখন যাত্রীদের জিম্মি করে অবৈধ সুবিধা আদায়ের সংস্কৃতি চলতেই থাকবে।

পরিবহন ধর্মঘটে মানুষের সীমাহীন ভোগান্তির পাশাপাশি পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিক ইউনিয়নের বাধার কারণে বেনাপোল স্থলবন্দরে পণ্য খালাস হতে পারছে না। এতে আমদানি-রফতানির জন্য বন্দরে নেয়া পচনশীল দ্রব্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি দেরিতে সরবরাহের কারণে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হচ্ছে। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে অন্যায় একটি দাবির কারণে এমন পরিস্থিতি আমরা মেনে নেব কেন? দেশে কি সরকার নেই? তাদের কাজ কি কেবল লুটেপুটে খাওয়া আর গণবিরোধী ভূমিকা পালনকারী বিভিন্ন টাউট-বাটপারের স্বার্থ দেখা? দেশে কি আইন বা আইনের শাসন বলে কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না?

এটা ঠিক, তারেক-মিশুকের মতো গুণী নির্মাতা ও চিত্রগ্রাহককে আমরা আর ফিরে পাব না। তবে আদালতের রায় অনুযায়ী ঘাতক বাসচালকের শাস্তি কার্যকর হলে তাদের হারানোর ব্যথা কিছুটা লাঘব হবে এবং এটা চালকদের সতর্ক করার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। আমাদের প্রত্যাশা, কোনো ধরনের অন্যায় চাপের কাছে মাথানত না করে আদালতের দেওয়া রায় দ্রুত কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। একইসঙ্গে রায়ের বিরুদ্ধে ডাকা ধর্মঘটে আদালত অবমাননা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

সরকারকেও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। কারণ আমরা জানি, যে পরিবহন শ্রমিকরা দেশব্যাপী ধর্মঘট ডেকে মানুষকে জিম্মি করছেন, তাদের নেতা হচ্ছেন একজন মন্ত্রী। পরিবহন মালিকদের নেতাও মন্ত্রী। কাজেই এই অন্যায় ধর্মঘটের দায় সরকারকেই নিতে হবে। হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নির্দেশ দিতে হবে ধর্মঘট প্রত্যাহারের, না হয় কেবিনেট থেকে ওই মন্ত্রীদের বের করে দিতে হবে।

শ্রমিকরা স্পষ্ট করেই বলেছে, মানুষ হত্যা করার জন্যে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া যাবে না। কোন আইনের কোন ধারায় বিচার করতে হবে, কোন ধারায় বিচার করা যাবে না, তাও তারা বাতলে দিচ্ছে। আর এই শ্রমিকদের হয়ে ওকালতি করছেন শ্রমিকনেতারূপী মন্ত্রী! এরপরও তার চাকরি যায় না। এ কেমন সরকার? কার সরকার?

অথচ ‘জনদুর্ভোগ’ নিয়ে আমাদের সদাশয় সরকার কতই না চিন্তিত! রাস্তায় দশজনের একটা মিছিল দেখলেও পুলিশ বাহিনী তেড়ে আসে। টিয়ারগ্যাস-জল কামান পৌঁছে যায় অবিশ্বাস্য দ্রুততায়। কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে লাখ লাখ মানুষকে সীমাহীন বিড়ম্বনায় ফেললেও সরকার চোখ-মুখ বন্ধ করে নির্বিকার বসে থাকে।

জয়তু শ্রমিক ইউনিয়ন, জয়তু সরকার, জয়তু আমাদের নাগরিক অধিকার!

চিররঞ্জন সরকার : লেখক, কলামিস্ট। chiroranjan@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied