রাজশাহী ব্যুরো: ছাগল চুরির অপরাধে দুই কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য ও তার সহযোগিরা।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আন্দুয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।
ওই দুই কিশোর উপজেলার আমগাছী সাহার বাণু উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। আন্দুয়া গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেব ওই দুই কিশোরকে শুধু পিটিয়েই ক্ষান্ত হননি, তাদের পরিবারের কাছ থেকে আদায় করেছেন ১৬ হাজার টাকা জরিমানা। তবে এ টাকা তিনি নিজের তিনি পকেটেই পুরেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কথিত ওই গ্রাম্য সালিশে উপস্থিত ছিলেন ঝালুকা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী ম-ল ও ইউপি সদস্য মির্জা আব্দুল লতিবও উপস্থিত ছিলেন। সালিশে ওই দুই কিশোরকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ফুটেজ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ ঘটনার কিছুই জানে না থানা পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলার হাড়িয়াপাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে জার্জিস হোসেন (১৬) ও পলাশবাড়ি গ্রামের সেকু আলীর ছেলে রতন আলী (১৫) মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আন্দুয়া গ্রামের রেজাউল করিম নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে একটি ছাগল চুরি করে নিয়ে যায়।
ভোর রাতের দিকে মতিহারের হরিয়ান বাজার দিয়ে যাওয়ার সময় বাজারের নৈশ্য্য প্রহরীরা ছাগলসহ তাদের যেতে দেখে সন্দেহ হলে ওই দুই কিশোরকে আটক করে। পরে ওই দুই কিশোরের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে আন্দুয়া গ্রামে খবর দিলে সকালে ইউপি সদস্য আব্দুল মোতলেব তাদের নিজ জিম্মায় ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
এরপর বেলা ১১টার দিকে ছাগল মালিক রেজাউলের বাড়ির পাশে সালিশ বসানো হয়। সালিশী বৈঠকে ওই দুই কিশোরকে গাছে বেঁধে বেধড়ক পেটানো হয়। পরবর্তিতে তাদের পরিবারের লোকজনকে ডেকে পাঠানো হয়। এরপর তাদের কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
জরিমানার এ টাকার মধ্যে আড়াই হাজার টাকা ছাগল মালিককে দেয়া হয়। বাকি টাকা নিজের কাছেই রেখে দেন ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেব। এরপর ওই দুই কিশোরকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নির্যাতিত ওই দুই কিশোরের পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয়রা বলছেন, অল্প বয়সী ওই কিশোরেরা ভুল করতেই পারে। তাই বলে তাদের গাছে বেঁধে নির্মমভাবে পেটানো ঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে ওই কিশোরদের পরিবারের সদস্যরা আইনের আশ্রয় নিবেন বলেও তারা জানিয়েছেন।
নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেব বলেন, ছাগল চুরির কথা প্রথমে তারা স্বীকার না করায় তাদের গাছে বেঁধে রাখা হয়। তবে তাদের নির্যাতন করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
জরিমানার ১৬ হাজার টাকা কার কাছে আছেÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, আড়াই হাজার টাকা ছাগল মালিককে দেয়া হয়েছে। আর বাকি টাকার মধ্যে কিছু টাকা দেয়া হয়েছে তাদেরকে, যারা ওই দুই কিশোরকে ধরতে সহযোগীতা করেছিলেন। কিছু টাকা গ্রামের মসজিদেও দান করা হয়েছে। সালিশে উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী ম-লের সঙ্গে পরামর্শ করেই এসব করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
যোগাযোগ করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী ম-ল বলেন, তিনি ব্যস্ত আছেন। এ ব্যাপারে কথা বলতে পারবেন না।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আলম জানান, এ ব্যাপারে তার কিছু জানা নাই। কেউ এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।