আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবাকে কবর দিতে ছেলের বাঁধা ॥ পুলিশের হস্তক্ষেপে দাফন সম্পন্ন       নীলফামারীতে স্বামীর প্রথম বিয়ের খবরে নববধূ দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মহত্যা ॥ স্বামী গ্রেপ্তার       রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা      

 width=
 

দূরন্তপনার শৈশব থেকে স্বাধীনতার স্থপতি

শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০১৭, রাত ১২:৪৭

 ডেস্ক: আজ ১৭ মার্চ, ২০১৭। আজ থেকে ঠিক ৯৭ বছর আগে ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার যোগ্য নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতার কারণেই আমরা পেয়েছিলাম একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। টুঙ্গিপাড়ার সবুজ-শ্যামল পরিবেশে দূরন্তপনার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর শৈশব কেটে যায়। পরিবার-পরিজনের কাছে ‘খোকা’(বঙ্গবন্ধুর ডাকনাম) নামেই তিনি বেড়ে উঠতে থাকেন। মধুমতি নদীর ঘোলাজলে গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে সাঁতার কাটা, দল বেঁধে হা-ডু-ডু, ফুটবল, হকি আর ভলিবল খেলায় তার অংশগ্রহণ ছিলো ঈর্ষণীয়। খেলার পাশাপাশি দলের নেতৃত্বেও তিনি দক্ষতার পরিচয় দিতেন। এরপর ধীরে ধীরে ‘মিয়া ভাই’ হিসেবে নিজ এলাকায় পরিচিত হতে শুরু করলেন। গৃহ শিক্ষক মৌলবি সাখাওয়াত উল্লাহর কাছে তার শিক্ষার হাতেখড়ি। ১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে তিনি গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৩১ সালে বাবা লুৎফর রহমান পরিবারবর্গ নিয়ে আসেন তার কর্মস্থল গোপালগঞ্জে। খোকা’কে ভর্তি করে দেন গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীতে। রাতে বাবার সঙ্গেই ঘুমাতেন তিনি। বাবার গলা ধরে রাতে না ঘুমালে খোকা’র ঘুম আসত না। এখানে বছর দেড়েক যেতে না যেতেই তিনি আক্রান্ত হলেন ‘বেরিবেরি’ রোগে। তার চিকিৎসা করেন ডাঃ শিবপদ ভট্টাচার্য ও ডাঃ এ কে রায় চৌধুরী। পরবর্তীতে বেরিবেরি রোগ থেকেই তার চোখে জটিল অসুখ দেখা দেয়। যার নাম ‘গ্লুকোমা’। খোকা’র অসুস্থতা দেখে পিতা লুৎফর রহমান অস্থির হয়ে পড়লেন। ডাক্তাররা খোকাকে চিকিৎসার জন্য কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। কলকাতা তখন ছিল বাংলার রাজধানী। সেখানে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ টি আহমেদ তার চোখের সার্জারি করে তাকে সুস্থ করে তোলেন। গ্লুকোমা থেকে সুস্থ হলেও ডাক্তার তাকে চোখে চশমা ব্যবহারের পরামর্শ দেন। চোখে অসুখের কারণে ১৯৩৪ থেকে চার বছর স্কুল পাঠ বন্ধ থাকে। সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ মিশনারি স্কুলের সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হন। এই স্কুলে থাকাকালীন সময়েই তার প্রতিভা আর নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। এমনিতেই ক্লাসের অন্যান্য সহপাঠিদের চেয়ে কিছুটা বয়সে বড়, সেই সাথে তার ছিল চারিত্রিক দৃঢ়তা; যা সকলকে মুগ্ধ করে। সকলের প্রিয় পাত্রে পরিণত হন তিনি। পরিচিত হন ‘মুজিব ভাই’ হিসেবে। ১৯৩৭ সালে কাজী আবদুল হামিদ এমএসসি মাস্টার সাহেবের কাছে তিনি পড়ালেখা শুরু করেন। গরিব ছেলেদের সাহায্য করার জন্য আবদুল হামিদ গোপালগঞ্জে ‘মুসলিম সেবা সমিতি’ গঠন করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ যক্ষ্মা রোগে তার মৃত্যুর পর খোকা সেই সেবা সমিতির সম্পাদকের ভার নেন এবং ১৭ বছর বয়সেই মুষ্টি ভিক্ষার চাল সংগ্রহ করে গরিব ছেলেদের সাহায্য করতে শুরু করেন। ১৯৩৮ সালে অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ মিশনারি স্কুল পরিদর্শনে আসেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন তৎকালীন শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী। এই বিশিষ্টজনদের আগমণ উপলক্ষে স্কুলে খোকা’র নেতৃত্বে দলমত নির্বিশেষে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলা হয়। তৎকালীন সময়ে হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ থাকলেও খোকার চোখে হিন্দু-মুসলমান বলে পৃথক কিছু ছিলো না। হিন্দু ছেলেদের সঙ্গে তার খুব বন্ধুত্ব ছিলো। একসাথে গান-বাজনা, খেলাধুলা, বেড়ান- তার সবই চলতো। স্কুল পরিদর্শন শেষে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ডাকবাংলোর দিকে হেঁটে যেতে লাগলেন। এমন সময় একদল ছাত্র এসে হঠাৎ তাদের পথ আগলে দাঁড়ালো। তারপর পাতলা লম্বা ছিপছিপে মাথায় ঘন কালো চুল ব্যাক ব্রাশ করা মুজিব (বঙ্গবন্ধু) একেবারে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালেন। মন্ত্রী মহোদয় জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি চাও?’ বুকে সাহস নিয়ে নির্ভয়ে মুজিব উত্তর দিলেন, ‘ আমরা এই স্কুলেরই ছাত্র। স্কুলের ছাদে ফাটল ধরেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই সেখান থেকে বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ে। আমাদের বই-খাতা ভিজে যায়। ক্লাস করতে অসুবিধা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার এ ব্যাপারে বলা হলেও কোন ফল হয়নি। ছাদ সংস্কারের আর্থিক সাহায্য না দিলে রাস্তা মুক্ত করা হবে না’। কিশোর ছাত্রের এমন বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সৎ সাহস আর স্পষ্টবাদীতায় মুগ্ধ হয়ে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক জানতে চাইলেন, “ছাদ সংস্কার করতে তোমাদের কত টাকা প্রয়োজন?” সাহসী কন্ঠে মুজিব জানালেন, “বারোশত টাকা। ফজলুল হক প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘ঠিক আছে, তোমরা যাও। আমি তোমাদের ছাদ সংস্কারের ব্যবস্থা করছি’। এরপর তিনি তার তহবিল থেকে উক্ত টাকা মঞ্জুর করে অবিলম্বে ছাদ সংস্কারের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিলেন। এ ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধু মাত্র অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। এভাবেই দুরন্তপনার শৈশব থেকে নিজের নেতৃত্ব গুণ, সাহায্য পরায়ণতা, ধর্ম-বর্ণহীন মানসিকতা আর দাবী আদায়ের দৃঢ়চেতা এক মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠলেন তিনি। যার সফলতম অধ্যায় হিসেবে তার সুযোগ্য নেতৃত্ব আমাদেরকে উপহার দিয়েছিলো একটি স্বাধীন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই স্থপতি নিয়ে কবি অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছিলেন, ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/গৌরী মেঘনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার/ শেখ মুজিবুর রহমান।’ (তথ্য সূত্র : অসমাপ্ত আত্মজীবনী; শেখ মুজিবুর রহমান)

মন্তব্য করুন


 

Link copied