উত্তরবাংলা ডটকম এর অনুসন্ধানে জানাগেছে, আগামী ৩ এপ্রিল সম্মেলনকে ঘিরে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ এবং হলের কমিটি করে যাচ্ছে।
বর্তমান সভাপতি মেহেদী হাসান শিশির এবং সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মাহমুদ হাসান ঢাকায় বসে মোবাইলে নাম সংগ্রহ করে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো কমিটি অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে। এসব কমিটিতে অনেক হাইব্রিড ছাত্রলীগ পদবী পেয়েছে। যাদের কখনও মিছিল মিটিং এ দেখা যায়নি তাদের অনেকেই বিভিন্ন বিভাগ এবং হলের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা-পড়া শেষ হওয়া এবং বিবাহিত হওয়ার পরও ইসমাইল হোসেন কে করা হয়েছে শহীদ মুকতার ইলাহী হলের সাধারণ সম্পাদক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হলের সভাপতি শাহিনুর ইসলামের লেখা-পড়াও শেষ হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে ভিতরে ভিতরে ক্ষোভ ফুঁসে উঠছে অনেকে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শিশির এবং সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মাহমুদ হাসান তাদের পছন্দের দুই প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সেই লক্ষ্যে কাউন্সিলের ঠিক আগ মূহুর্তে নিজেদের পছন্দের লোকদের নিয়ে একের পর এক হল এবং বিভিন্ন বিভাগের কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
জানাগেছে, কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটি নির্বাচনের দাবী জানানো হবে। আর সেটা সম্ভব হলে বিভিন্ন বিভাগ ও হলের নতুন কমিটির সদস্যদের ভোটে শিশির এবং মাহমুদ হাসানের পছন্দের প্রার্থীদের জয়ী করা সহজ হবে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে আগামী ৩ এপ্রিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন হল এবং বিভাগের কমিটি করা শুরু করে।
গত ১৯ মার্চ শহীদ মুকতার ইলাহী হলের কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ২৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হল, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ, দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা, ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ এবং লোক প্রশাসন বিভাগের কমিটি অনুমোদন করা হয়।
২০১৪ সালের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের পর হল এবং বিভাগগুলোর কমিটি করতে পারেনি। শেষ মূহুর্তে সম্মেলনের কয়েকদিন আগে একের পর এক কমিটি অনুমোদনের পিছনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর যেসব হল এবং বিভাগের কমিটি করা হয়েছে সেসব কমিটির সদস্যরা সম্মেলনের কাউন্সিলর হতে পারবেন কি-না সে বিষয়ে সন্দেহ আছে।
জানাগেছে, এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে গত ২৫ মার্চ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি এক জরুরী সিদ্ধান্তে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর অনুমোদিত সকল কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক দেলোয়ার শাহজাদার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি আলাদা। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু বর্তমানে কমিটি বহাল আছে সেহেতু হল ও বিভাগের কমিটি করতে বাধা নেই।
এদিকে সম্মেলনের আর মাত্র ৫ দিন বাকি থাকলেও সম্মেলনের কোন ধরণের প্রস্তুতি নেই। এখন পর্যন্ত বর্তমান কমিটি বর্ধিত সভা পর্যন্ত করতে পারেনি। সম্মেলনে কারা অতিথি হিসাবে থাকবেন তাও জানে না অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মধ্যম সারির এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ছাড়া আর কেউ কিছু জানে না। সবাই অন্ধকারে। আদৌ সম্মেলন হবে কিনা বলা মুশকিল।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মাহমুদ হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাউকে জয়ী করার জন্য নয়। যেহেতু আমাদের মেয়াদ প্রায় শেষ তাই আমরা বিভাগ এবং হলের কমিটিগুলো করে দিচ্ছি।
সম্মেলনের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি। সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ।