আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

বাংলা ভাইয়ের হাত ধরেই জেএমবিতে যোগ দেয় মুসা

বুধবার, ২৯ মার্চ ২০১৭, দুপুর ০১:০০

বলা হচ্ছে, মুসা যে ছবি দিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন, সেই ছবির সঙ্গে পুলিশের কাছে থাকা ছবির মিল দেখে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে আতিয়া মহলে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মুসা নিহত হয়েছেন।

এই মুসার আসল নাম মাইনুল ইসলাম। জেএমবির আতুরঘর হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় তার বাড়ি। ২০০৪ সালের দিকে জেএমবির শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের হাত ধরেই জেএমবিতে যোগ দিয়েছিল সে। বাগমারা থানার তালিকাভুক্ত জেএমবি সদস্য সে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুসা তার সাংগঠনিক নাম। জেএমবির শীর্ষ দুই নেতা বাংলা ভাই ও শায়খ আবদুর রহমানের মৃত্যুদ- কার্যকরের পর মুসা আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল। তবে বছর খানেক আগে সে এলাকায় ফিরেছিল। এরপর প্রায় ৮ মাস আগে সৌদি আরব যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে চলে যায়। তারপরই সে নব্য জেএমবির হাল ধরে।

মুসার বাড়ি বাগমারা উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের বুজ্রুকালা গ্রামে। তার বাবার নাম আবুল কালাম মোল্লা। তিনি স্থানীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন ছিলেন। সম্প্রতি তিনি মারা যান। মুসার মায়ের নাম সুফিয়া বেগম। ২০০৪-০৫ সেশনে মুসা বাগমারার তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে রাজশাহী অঞ্চল তথা বাগমারা, নওগাঁর আত্রাই, রাণীনগর, নাটোরের নলডাঙ্গায় অভিযান শুরু হলে সে জেএমবিতে যোগদান করে।

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, জেএমবির কমান্ডার ছিল মুসা। ওই সময় বাংলা ভাইয়ের সহযোগী হওয়ার সুবাদে এলাকায় দাপট দেখাতো এবং লোকজনকে জেএমবিতে যোগদানের উৎসাহ দিত। যারা তার বিরোধীতা করতো তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করাও ছিল তার কাজ। পরবর্তীতে বাংলা ভাই আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর মুসাও কিছুদিন আত্মগোপনে ছিল। এরপর সে আবার এলাকায় ফিরে আসে।

মুসা এইচএসসি পাশ করার পর রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়। পরে সেখান থেকে রেফার্ড নিয়ে ঢাকা কলেজে চলে যায়। এরপর সেখান থেকে পাশ করার করার পর উত্তরার লাইফ স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করে। কিন্তু শিক্ষকতা করলেও সে জেএমবিতে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। এরই মাঝে প্রায় আড়াই বছর আগে সে বাসুপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঁইপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদের মেয়ে তৃষ্ণা মনিকে বিয়েও করে।

কয়েকদিন আগে মুসার মা সুফিয়া বেগম জানান, বিয়ের পর তার স্ত্রীকে নিয়ে মুসা ঢাকা চলে যায়। সর্বশেষ এপ্রিল মাসের দিকে বাড়ি গিয়েছিল মুসা। এ সময় সে জানায়, সৌদি আরব যাবে, টাকার দরকার। পরে জমি বিক্রি করে ৩ লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। এরপর একদিন কথা হয়েছে। তারপর থেকে আর কোন যোগাযোগ ছিল না।

সুফিয়া বেগম বলেন, ‘মাইনুল (মুসা) বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে তার ছবিসহ সব কাগজপত্র পুড়িয়ে দেয়। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম- এগুলো কেন পোড়াচ্ছিস? ওই সময় সে বলেছিল এগুলোর আর কোন প্রয়োজন নেই।’

এদিকে জঙ্গি মুসাকে ধরতে গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে ৫০ ঢাকার আশকোনার সূর্যভিলায় অভিযান চালায় পুলিশ। ওই অভিযান চলাকালেই মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা মনিসহ দুই নারী পুলিশের কাছে ধরা দেন। আরও একজন নারী তার গায়ে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মাহুতি দেন। আর গুলিতে নিহত হয় সন্দেহভাজন জঙ্গি আফিফ কাদেরী। মুসা ও তৃষ্ণা মনির পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ওই দিনই তারা প্রথম মুসা ও তৃষ্ণার জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার খবর জানতে পারেন।

তৃষ্ণা মনির বাবা আবদুস সামাদ জানান, ৮ মাস থেকে মেয়ের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ ছিল না। আশকোনার অভিযানের দিন রাত সাড়ে ৩টার দিকে অপরিচিত এক নম্বর থেকে তার মোবাইল ফোনে মিসড কল যায়। তিনি ওই নম্বরে ফোন করেন। তখন তৃষ্ণা পরিচয় দিয়ে জানায়, তার বিপদ, তাদের বাসা পুলিশ ঘিরে ফেলেছে। তখন তিনি মেয়েকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এরপর থেকে মেয়ের সঙ্গে আর তার যোগাযোগ নেই।

আবদুস সামাদ বলেন, ‘ওই সময় আমি বুঝিনি। তার আচরণেও কখনও এমন প্রকাশ পায়নি। যদি জানতাম, তাহলে আমি কি আর আমার মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দিতাম। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। আমার মেয়েও আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কিন্তু কি করে তাকে এমন অবস্থার মধ্যে ফেলে দিল আমরা কল্পনা করতে পারিনি।’

বিয়ের পর মুসা উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৬ তলা একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতো। আর এখানেই থাকতো নব্য জেএমবির আরেক নেতা আজিমপুরের অভিযানে আত্মহত্যাকারী সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া মেজর জাহিদ। মেজর জাহিদের মেয়ে মুসার লাইফ স্কুলে পড়তো। এ কারণে তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। মুসার ওই ভাড়া বাসার ছাদেই আরেক নেতা তানভির কাদিরসহ নব্য জেএমবির সমন্বয়ক তামিম চৌধুরী ও জিয়াসহ অন্যান্য নেতাদের নিয়ে মিটিং হতো।

মুসার মা বলেন, ‘আমিও ওই বাসায় কয়েকবার গিয়েছি। ওই বাসায় মেজর জাহিদও থাকতো। সেখানে দেখেছি- আমার ছেলে, মেজর জাহিদসহ আরও অনেকে ছাদের ওপর মিটিং করতো। কি মিটিং করতো তখন বুঝিনি। এখন বুঝতে পারছি আসলেই তারা জঙ্গির মিটিং করতো। আশকোনায় পুলিশের অভিযানের পর পত্রিকা আর টেলিভিশনে দেখে প্রথম জানতে পারি- ছেলে জঙ্গিবাদের পথ ছাড়েনি।’

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট মুসার বিষয়টি প্রথম জানতে পারে গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে অভিযানের পর। আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে তানভীর কাদেরীর কিশোর ছেলে আদালতে দেওয়া তার জবানবন্দিতে মাইনুল ওরফে মুসার কথা বলে। জঙ্গি তানভীরের কিশোর ছেলে তার জবানবন্দিতে বলে, ‘মেজর জাহিদ ও মুসার সঙ্গে আমার বাবার দীর্ঘদিন আগে থেকে পরিচয় ছিল। আমার বাবা, মেজর জাহিদ ও মুসাসহ উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি মসজিদে নামাজ পড়তো। তারা প্রায়ই উত্তরার লাইফ স্কুলের মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে একসঙ্গে জগিং করতো।’

ওই কিশোর বলে, ‘বাবার মাধ্যমেই মেজর জাহিদ ও মুসার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। আমাকে ও আমার ভাইকে মুসা অংক, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের বিষয় পড়াতো। প্রায়ই আমাদের বাসায় জাহিদ আংকেল, আন্টি (জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার), মেয়ে জুনায়রা ওরফে পিংকি এবং মুসা আংকেল আন্টিসহ যাতায়াত করতো। জাহিদ আংকেলের বাসা ছিল উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে। তাদের বাসায় আমরাও যেতাম।’

এসব তথ্যের সূত্র ধরেই মুসাকে খুঁজতে শুরু করে পুলিশ সদস্যরা। সবশেষে সিলেটের আতিয়া মহলে সে সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে বলে বলা হচ্ছে।

এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহমেদ বলেন, ‘সিলেট থেকে আমাদের কাছে কোনো বার্তা আসেনি। তারপরেও মুসার বাড়ি যেহেতু বাগমারায়, তাই আমরা সজাগ রয়েছি। বিশেষ করে মুসার গ্রামের বাড়ির দিকে পুলিশের নজর আছে। মুসা থানার তালিকাভুক্ত জেএমবি সদস্য।’

মন্তব্য করুন


 

Link copied