আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

জিয়ার ফিরে আসা এবং দু’টি প্রত্যাশা

শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০১৭, সকাল ০৮:৫৭

প্রভাষ আমিন

৯ জানুয়ারি রাতে বাসায় ফিরে শুয়েও পড়েছিলাম। হঠাৎ নওরোজ ইমতিয়াজের ফোন, ধরা গলায় যখন জিয়ার দুর্ঘটনার কথা বললেন, দম বন্ধ হয়ে আসলো। দ্রুত তৈরি হতে দেখে আমার স্ত্রী মুক্তি জানতে চাইলো, কী হয়েছে? জিয়ার দুর্ঘটনার খবর শুনে সেও তৈরি। ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখি ততক্ষণে অনেক লোকের ভিড়। সবার মন খারাপ। অনেকেই কাঁদছেন। জোর আশাবাদী অনেকেও দেখলাম হাল ছেড়ে দিয়েছে।

জিয়ার আঘাত এতটাই গুরুতর, আইসিইউর ডাক্তাররা এমনকি তাকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের ঝুকি নিতেও রাজি ছিলেন না। পা ভেঙ্গেছে, পাঁজরের হাড় ভেঙ্গেছে; কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা মাথা থেতলে গেছে। সেই জিয়াকে পরদিন অ্যাপোলোতে নেয়া হলো। ১৩ জানুয়ারি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উড়িয়ে নেয়া হলো সিঙ্গাপুরে। সেই উড়াল ছিল আমাদের একরাশ আশার উড়াল। এমনিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শুনলেই আমার ভয় লাগে। আর ৯ জানুয়ারি রাতভর ঢাকা মেডিকেলে থাকার অভিজ্ঞতা থেকে ভয়টা আরো বেশি ছিল।

তাই জিয়ার ফিরে আসাটা এত আনন্দের, এত স্বস্তির। তবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আমাদের সার্কেলের অভিজ্ঞতা খুব মধুর। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে চড়েছেন, এমন দুজনকে আমি চিনি- শাহানা হুদা রঞ্জনা এবং জিয়া ইসলাম। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, রঞ্জনা আপা এখন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে চড়া নিয়ে ফেসবুকে ফান করতে পারেন। কদিন পর হয়তো জিয়াও পারবেন।

কাজল (কাজল রশীদ শাহীন) বললেন, আপনি যখন প্রথম আলোতে ছিলেন, তখন কি জিয়াও ছিলেন? শুনে আমি হাসি। আহা, আমার স্মৃতির ঝাঁপি খুলে যায়। জিয়াকে ছাড়া আমি প্রথম আলো ভাবতেই পারি না। আমাদের একমাত্র সন্তান প্রসূনের প্রথম ছবি জিয়ার তোলা। প্রসূনের জন্মের দিন হরতাল ছিল। আমি যখন জিয়াকে ফোন করে বললাম, জরুরি, দ্রুত চলে আসেন। বড় কিছু মনে করে জিয়া উড়ে চলে এলো।

প্রসূনের ছেলে বেলার সব ছবিও জিয়ারই তোলা। তখন মোবাইল ক্যামেরা তো ছিলই না, ডিজিটাল ক্যামেরাও ছিল না। তাই ছবি তুলতে ফিল্মের ক্যামেরাই ভরসা। কদিন আগে প্রেসক্লাবে জিয়াকে বলেছিলাম, প্রসূনের ছেলেবেলার ছবির ফিল্ম পাওয়া সম্ভব কিনা। জিয়া বলেছিল, খুঁজে দেখবে। কিন্তু আমি জানি, এটা খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজার মত হবে। জিয়ার মজাটাই এমন, কোনো কিছু না করে না। কিন্তু এত ব্যস্ত, এত চঞ্চল, এত ছটফটে; অনেক কথাই ভুলে যায়।

তাই আমি জিয়াকে ডাকি ভুয়া। জিয়াকে নিয়ে আমি কেন লিখছি?  জিয়া আসলে সত্যিকার অর্থে একটা ভালো মানুষ। জিয়ার ওপর আমি অনেকবার খেপেছি। কিন্তু যখনই সামনে এসে হাসি দিতো, আমি যে রাগ করেছিলাম সেটাই ভুলে যাই। সত্যি বলছি, জিয়ার মত এমন প্রাণবন্ত হাসিখুশি মানুষ আমি খুব বেশি দেখিনি। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, জিয়ার কোনো শত্রু ছিল না, আসলে থাকা সম্ভব নয়।

এত যে ব্যস্ততার কথা বললাম। কিন্তু জিয়ার মত পরোপকারী বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে তার জুড়ি নেই। আমি নিজেই একাধিকবার উপকৃত হয়েছি। জিয়া নিজেই আমার কাছে কখনো কোনো তদ্বির করেনি, বন্ধুর জন্য করেছে। ২১ আগস্টের হামলার সময়, আমি ছিলাম জিয়ার চিফ রিপোর্টার। কিন্তু বাস্তবে আমি কখনোই জিয়ার চিফ রিপোর্টার বা বস ছিলাম না। জিয়া ছিল এবং আছে আমার ছোট ভাই, আমার প্রিয় বন্ধু হয়ে।

জিয়ার দুর্ঘটনা নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা হয়েছে, এখনও হচ্ছে। কারণ দুর্ঘটনাটির নানামাত্রা আছে। অভিনেতা কল্যাণ কোরাইয়ার বেপরোয়া গতির গাড়ি জিয়াকে চাপা দিয়েছে। অভিযোগ আছে, তখন তিনি মাতাল ছিলেন। এ অভিযোগে কল্যাণ কোরাইয়াকে আটকও করা হয়েছিল। পরে তিনি জামিন পেয়েছেন। তখন মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি হয়।

আরেকটি বিষয় হলো, কল্যাণ কোরাইয়া গাড়িটি চালাচ্ছিলেন কিনা, তা নির্ধারণ করবে আদালত। তবে বিষয়টি অত জটিল নয়। জিয়ার মোটর সাইকেলটিও পুলিশের কাছে, কল্যাণের গাড়িটিও। দুটি বাহন পরীক্ষা করলেই প্রমাণ হয়ে যাবে, কল্যাণ দুর্ঘটনাটির জন্য দায়ী কী না। কিন্তু কল্যাণকে গ্রেপ্তারের পর শিল্পীরা যেভাবে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা একই সঙ্গে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক। ইতিবাচক এ কারণে যে বন্ধু-সহকর্মীর বিপদে ছুটে যাওয়া ভালো। যেমন আমরা জিয়ার দুর্ঘটনার খবরে ছুটে গিয়েছিলাম।

কিন্তু শিল্পীরা যেভাবে নির্দোষ প্রমাণে উঠে পড়ে লেগেছেন, তা নেতিবাচক। যে অপরাধ করে, সে অপরাধী, এমনকি আপনার বন্ধু বা সহকর্মী হলেও। কোনো সাংবাদিক অন্যায় করলে আমি তার পাশে দাঁড়াবো না। আপনি শিল্পী হোন আর যেই হোন, আপনাকে ন্যায়ের পাশে দাঁড়াতে হবে। বরং শিল্পী সমাজের দায়িত্ব বেশি। মাতাল অবস্থায় গাড়ি না চালানোর যে প্রচারণা তাতে শিল্পীদের উচিত ছিল বেশি করে এগিয়ে আসা, সচেতনতা তৈরি করা।

এই দুর্ঘটনাকে ঘিরে ‘প্রথম আলো’র সঙ্গে শিল্পীদের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। শিল্পীদের কেউ কেউ ‘প্রথম আলো’র অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন। পরে আবার শুনলাম, ‘প্রথম আলো’র সঙ্গে শিল্পীদের সমঝোতা হয়ে গেছে। ‘প্রথম আলো’র কার্যালয়েই সমঝোতা বৈঠক হয়েছে। তার মানে এ মামলা আর এগুবে না। এটা ঠিক হয়নি। আদালতের বিষয় অফিসে সমঝোতা করা অন্যায়।

জিয়ার দুর্ঘটনায় আরেকটি বিষয় আছে আলোচনার। জিয়াকে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সিঙ্গাপুর নেয়া গিয়েছিল বলেই জিয়াকে বাঁচানো গেছে। এ জন্য ‘প্রথম আলো’ কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে লতিফুর রহমানকে বিশেষ ধন্যবাদ দিতেই হবে। জিয়ার চিকিৎসা ব্যয়ের কথা আমি জানি না। কিন্তু এয়ার অ্যা্ম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া, সিঙ্গাপুরে আড়াই মাসের চিকিৎসা ব্যয় কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা।

আমরা জেনেছি, অন্য আর সবার মত লতিফুর রহমানও জিয়াকে খুবই পছন্দ করেন। তাই তার চিকিৎসা ব্যয়ের পুরোটাই বহন করেছে ‘প্রথম আলো’। নিশ্চয়ই ‘প্রথম আলো’র সব কর্মীর ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। আমি ভাবছি অন্য কথা, আমি বা আমার মত কেউ যদি এ ধরনের দুর্ঘটনায় পড়ি, আমাদের হয়তো ঢাকা মেডিকেলেই মরতে হবে।

বড় জোর বন্ধুরা ফান্ড কালেকশন করে অ্যাপোলো বা স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাবে। তবে আমার ধারণা ফান্ড জোগাড় হতে হতেই আমি বা আমরা মরে যাবো। তবু ধরে নিচ্ছি, অ্যাপোলো বা স্কয়ার পর্যন্ত যেতে পারলাম। তাতেও কিন্তু বাঁচবো না। স্কয়ার আশা ছেড়ে দেয়ার পর শাহানা হুদা রঞ্জনাকে দিল্লী নেয়া হয়েছিল। জিয়াকেও অ্যাপোলো থেকে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়েছিল।

দেশের সেরা দুই হাসপাতাল থেকে তাদের বিদেশে নিতে হয়েছিল। এমন সামর্থ্য তো সবার নেই। তারপরও শুধু এই দু’জন নয়, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, নিদেনপক্ষে ভারত যায়। অনেক মধ্যবিত্তও জমিজমা বিক্রি করে চিকিৎসার জন্য বাইরে যায়। যান, কারণ তারা জানেন, দেশের বাইরে গেলে ভালো চিকিৎসা পাবেন।

কখনো কখনো দেশের বাইরে গেলে খরচ কম পড়ে। কারণ, বাংলাদেশে পদে পদে ঘুরতে ঘুরতে যে হয়রানি হয় এবং স্বাস্থ্যহানী হয়, বিদেশে গেলে ওয়ান স্টপ সেবা পান তারা। বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকরাও কিছু হলেই সিঙ্গাপুরে উড়াল দেন। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ভাবা দরকার। বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে অনেক এগিয়েছে। নানা ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে।

আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু বানাচ্ছি। আর একটা ভালো হাসপাতাল বানাতে পারবো না কেন? একটা মাউন্ট এলিজাবেথ বা বামরুনগ্রাদ বানানোর সামর্থ্য আমাদের আছে। কথা হলো ইচ্ছা আছে কিনা, চেষ্টা আছে কিনা। একটা ভালো হাসপাতাল বানানো গেলে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচবে, সবচেয়ে বড় কথা অনেক মূল্যবান জীবন বাঁচবে।

জিয়ার দুর্ঘটনা এবং ফিরে আসার পর দুটি প্রত্যাশা থাকলো। এক. বাংলাদেশে একটি ভালো হাসপাতাল। দুই. শিল্পী হোক আর যেই হোক, অপরাধীর পাশে কেউ দাঁড়াবেন না, ন্যায়ের পাশে দাঁড়াবেন।

প্রভাষ আমিন : সাংবাদিক, কলাম লেখক; বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ। probhash2000@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied