আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

পীরগঞ্জ গণহত্যা দিবস আজ

সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৭, দুপুর ০২:৪৩

বদ্যনাথ তলায় প্রবাসী সরকার যখন শপথ নিচ্ছে ঠিক সেই সময়ে পাকিস্তানি বর্বর সেনা বাহিনী পীরগঞ্জে মানুষ হত্যায় মেতে ওঠে। ওই দিন বেলা ১১টার দিকে অস্ত্রশস্ত্রে ভর্তি জলপাই রঙের ১৭টি সাঁজোয়া গাড়ি পীরগঞ্জ থানা শহরের পূর্ব চৌরাস্তার একটি পুরাতন বটবৃক্ষের নিচে থামে। পাকিস্তান বাহিনী দেখতে পায় পীরগঞ্জ থানা শহরের প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি অফিসে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ছে। এ দৃশ্য দেখে তারা প্রথমে থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সুজাউদ্দীনের চেম্বারে ঢুকে এবং তাকে স্বাধীন বাংলার পতাকা নামিয়ে পাকিস্তানি পতাকা উড্ডয়ন করার নির্দেশ দিলে তিনি তা করতে অস্বীকার করেন। এ সময় তাকে একজন মেজর রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করে। তাতেও তিনি বিচলিত না হয়ে উচ্চকণ্ঠে জয় বাংলা স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর তার হাত পেছনে রশি দিয়ে বেঁধে সাঁজোয়া গাড়িতে তুলেন। এরপর পীরগঞ্জ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মফিজুল হক, হোটেল ব্যবসায়ী মোজাফ্ফর হোসেন পীরগঞ্জের ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার, কৃষক আতাউর রহমানসহ ৪০/৫০ জনকে সাঁজোয়া গাড়িগুলোতে তোলেন। এ দৃশ্য দেখে মানুষজন আত্মরক্ষার্থে দূরে সরে যায়। বর্বর পাক সেনারা শুরু করে দ্বিতীয় অভিযান। তারা স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম কমিটির অফিসে যায়। সেখানে কাউকে না পেয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়। পীরগঞ্জ বাজার, পশ্চিম চৌরাস্তাসহ তার আশপাশ এলাকার মানিক মিয়ার হোটেলের পাশে বিপুল সংখ্যক নারী দলবদ্ধ হয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা হাতে নিয়ে জয়বাংলা স্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তোলে। এ দৃশ্য দেখে পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা থমকে যায় এবং কয়েকটি রাইফেলের গুলিবর্ষণ করে। গুলিবর্ষণেও নারীরা স্লোগান থামায়নি। বরং বর্জকণ্ঠে জয়বাংলা স্লোগান উচ্চারিত হতে থাকে। ইতোমধ্যে বাড়িঘর দোকানপাট আগুনে ভস্মীভূত হয়। প্রায় ৩ ঘণ্টা অভিযান চালানোর পর আটককৃতদের পাক সেনারা ঠাকুরগাঁও মহকুমা শহরের দিকে নিয়ে চলে যায়। পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও সড়কের জামালপুর ইক্ষু খামারের (ভাতারমারী ফার্ম) তেঁতুল গাছের নিচে ৫০ জনকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পীরগঞ্জে এভাবেই ঘটে গণহত্যা। এই দিবসটি শহীদদের পক্ষ থেকে নানাভাবে পালিত হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ উল্লেখিত শহীদের জন্য একটি স্মরণ সভা বা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের উদ্যোগ ৪৬ বছরেও নেয়নি। থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সুজাউদ্দীন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফাসহ অন্যান্য শহীদদের নামে গড়ে ওঠেনি স্মৃতিসৌধ। তবে পৌরসভার কয়েকটি রাস্তার নাম কয়েক জনের নামকরণ করা হলেও সাইনবোর্ডগুলো হারিয়ে গেছে। এসব দেখা- শোনার কেউ নেই। পীরগঞ্জবাসীর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যাদের রক্তের বিনিময়ে এ স্বাধীন দেশ, তাদের প্রতি এত অবজ্ঞা কেন? বর্তমানে শহীদদের পরিবারের সদস্যরা কে, কীভাবে জীবনযাপন করছে তার খোঁজ কেউ না। কথা হয় শহীদ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তাফার ছেলে আসাদুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি জানান, স্থানীয় ডিএন কলেজে প্রভাষক পদের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু তাকে নিয়োগ না দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের প্রাক্তন এক নেতাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বোমা বানাতে গিয়ে যার হাতের কব্জি উড়ে গেছে। পরবর্তীতে সেই বোমারু আবুল কাশেম পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতের টিকিটে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। শহীদ শিক্ষক মফিজুল হকের ছেলে আজগর আলী একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন। পীরগঞ্জ থানা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে। তিনি পীরগঞ্জ পৌরসভার সবুজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হওয়ার জন্য বহু চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।

ইতোমধ্যে শহীদ পরিবারের সন্তানসহ স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনগণ জোর দাবি জানিয়েছেন ৫০ শহীদের একটি কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ বর্তমান সরকারের আমলে গড়ে তোলার। শহীদ ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বারের ছেলে এনামুল হককে আহ্বায়ক করে প্রজন্ম ৭১ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সমুন্নত রাখতে শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

মন্তব্য করুন


 

Link copied