বাবা চলে যাওয়ার পরেই অভাব নামের দৈত্যটা হামলে পড়ে সংসারে। মায়ের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বাকি ভাইদের মতোই শৈশব-কৈশোরকে গলা টিপে হত্যা করে হাল ধরে সংসারের।
শিশুশ্রমিক রাকিবের সঙ্গে কথা হয় ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুল বড় মাঠে। মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সমাবেশে যোগ দিয়েছিল সে। সেখানেই তার সঙ্গে কথা হয়। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দক্ষিণ সালন্দর ইউনিয়নের মিলননগর গ্রামে।
রাকিব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ‘একদিন না একদিন তো মোক সংসারের হাল ধরিবায় হবে। তয় সুযোগ পাইলে আরো পড়ালেখা করতে চাই।
রাকিব জানায়, টাকা পয়সার অভাবে ২০১৫ সালে সে পড়ালেখা ছেড়ে দেয়। সে বছরই বড় ভাইয়ের সহায়তায় সাহায্যকারী সংস্থা ইকো স্যোশাল ডেভলাপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) অধীনে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শেখে। এক বছর কেটে যায়। কিন্তু অর্থাভাবে দোকান দেয়া হয়ে ওঠে না রাকিবের।
নিরূপায় হয়ে ২০১৬ সালের জুনে ভাড়ায় অটোরিকশা চালানো শুরু করে। দিন শেষে মালিককে ৪০০ টাকা তুলে দেয়ার পরে ১০০-১৫০ টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরে।
আলাপচারিতার এক পর্যায়ে রাকিবের দুই বন্ধু পাশে এসে দাঁড়ায়। নিজেদের জীবনের দুর্দশার কথা তুলে তারা। কালবেলা ঘুম থেকে উঠে বাড়ির পাশের বন্ধুরা যখন স্কুলের দিকে ছোটে, রাকিবকে তখন দু'মুঠো অন্ন জোগানোর জন্য জীবিকার তাগিদে বের হতে হয়।
চতুর্থ শ্রেণি পাস করে ২০১৫ সালে সে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। এরপরই অভাব নামের দৈত্য এসে তার পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়। এখন তার খুব ইচ্ছে করে স্কুলে যেতে। তাই সে মনের মধ্যে লেখাপড়া করার গোপন ইচ্ছে পুষে রেখেছে। সে তাই বলে, ‘সুযোগ পাইলে আরো পড়ালেখা করতে চাই।
বন্ধুরা যখন চোখের সামনে দিয়ে সুন্দর পোশাক পরে স্কুলের দিকে যায়, দৃশ্যটি দেখতে রাকিবের খুব কষ্ট হয়। কিন্তু সেই পাহাড়সম কষ্টকে বুকে চেপে রেখেই কাজে বের হতে হয় রাকিবকে। শুধু রাকিব? এভাবে শৈশবকালেই ঝরে পড়ে হাজারো রাকিব।