আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

১৬ দুর্নীতির প্রমাণ বেরোবি’র ভিসির বিরুদ্ধে

বুধবার, ৩ মে ২০১৭, বিকাল ০৭:৩১

বুধবার ইউজিসি থেকে এ তথ্য জানানো হয়। ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বের থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর একেএম নূর-উন-নবীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তের কাজ শুরু করে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

নিচে উত্তরবাংলা ডটকম এর পাঠকদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিবেদনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো:

অভিযোগ-১: উপাচার্যের ধারাবাহিক অনুপস্থিতি

গত তিন বছর এক মাসে ৪৯৫ দিন (২০১৩ সালে ১১৬ দিন, ২০১৪ সালে ১৫৯ দিন, ২০১৫ সালে ১৪৬ দিন, ২০১৬ সালের ছয় মাসে ৭৪ দিন) কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছেন।

অভিযোগ-২: উপাচার্য একাই ১৪ পদে

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী একজন উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও এ ব্যাপারে তার কোন উদ্যোগ নেই। ১৭.০৮.২০১৩ তারিখে ট্রেজারার পদ শূন্য হলেও তিনি সে পদ পূরণে উদ্যোগ না নিয়ে নিজেই পদ আঁকড়ে পরে আছেন। এছাড়া ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ই-লার্নিং সেন্টার, সাইবার সেন্টার, বহিরাঙ্গন ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, ৩ টি অনুষদের ডিন, ৩ টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।

অভিযোগ-৩: ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অকার্যকর

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন, ২০৯ এর ২৭(১) ধারা মোতাবেক ২০০৯ সালে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ১৫ জন এমফিল ও ৮ জন পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হন। এসব গবেষকদের শিক্ষাছুটি প্রায় শেষ হলেও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটে এদের গবেষণা কার্যক্রম এখনও শুরুই হয়নি। এ ইনস্টিটিউটে ৮ জন কর্মকর্তা ও ৫ জন কর্মচারী থাকলেও তাদের কোন কাজ নেই।

অভিযোগ-৪: পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় শিক্ষক ও কর্মচারীদের হয়রানী

 বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর একেএম নূর-উন-নবীর স্বেচ্চাচারিতা ও অনিয়মের বিরুদ্ধে (নভেম্বর ২০১৪- মার্চ ২-১৫) আন্দোলনরত অনশন মঞ্চে ০৩.০৩.২০১৫ তারিখে ভিসির আর্শিবাদপুষ্টরা হামলা চালিয়ে শিক্ষক কর্মচারীদের লাঞ্ছিত  করে এবং ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় শিক্ষক নেতা ড. আরএম হাফিজুর রহমানের সংশ্লিষ্টতা আছে মর্মে তার পদোন্নতি স্থগিত রাখা হয়। ঐ সিন্ডিকেটে ২ জন কর্মকর্তা, ৫ জন কর্মচারীকে একই কারণে পদায়ন করা হয়নি। ৪৫ তম সিন্ডিকেটে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক তাবিউর রহমান এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোঃ সাইদুর রহমানের পদোন্নতি স্থগিত রাখা হয়।

অভিযোগ-৫: জাণ সনদধারীকে নিয়োগ

ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক পদে আনার্স ও মাস্টার্সের জাল সনদখারী আবু জাফর মোঃ ইমরান নামে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিষয়টি জানাজানির পর এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভিসি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

 অভিযোগ-৬: নির্বাহী প্রকৌশলীর বাতিল আবেদনে নিয়োগ

এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত মোঃ জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়োগের উদ্দেশ্যে ১৩.০৩.২০১৫ তারিখে নিয়োগবিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় এসময় মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এর আবেদনটি বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে আবার পুনঃনিয়োগ দিয়ে সেই বাতিল আবেদনেই মোঃ জাহাঙ্গীর আলমকে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

 অভিযোগ-৭: উপাচার্যের ৩৪ মাসে রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে ৫ জন

উপাচার্য রেজিষ্ট্রার পদে স্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে একের পর একজনকে রেজিস্ট্রার পদে দায়িত্ব দেয়। ২০১৪ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রারকে নিয়ম বহির্ভুতভাবে নিয়োগ দিলে ৪০ তম সিন্ডিকেট সভায় তা বাতিল করে দেয়। ভিসি নিজের সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত করতে না পেরে উদ্দেশ্যেমূলক ভাবে জুনিয়র সহকারী রেজিস্ট্রার মোর্শেদুল আলম রনিকে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দিয়ে সে পদটিও প্রকারান্তে নিজের কবজায় রাখেন। পরে সার্চ কমিটি করে ইউজিসির একজন কর্মকর্তাকে অবসরে যাওয়ার মাত্র একদিন আগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

 অভিযোগ-৮: বন্ধ ক্যাফেটেরিয়া ও ডরমেটরি

ক্যাফেটেরিয়া ও ডরমেটরি নির্মাণ কাজ ( প্রকল্পের মেয়াদ শেষ ৩০ জুন ২০১৪) শেষ হলেও তা উন্মুক্ত করা হচ্ছে না।

অভিযোগ-৯: পদায়ন ও বেতন ভাতা প্রদানে অনিয়ম

অননুমোদিত পদে নিয়োগকৃত ৩৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ইউজিসির অনুমোদিত পদে উপাচার্য প্রফেসর একেএম নূর-উন-নবী জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদায়ন ও বেতন প্রদান করেছেন। জনসংযোগ অধিদপ্তরের মোঃ আমিনুল ইসলাম ২৭ মাস ধরে অনুপস্থিত থেকেও পদায়ন পেয়েছেন এবং ২৭ মাসের বকেয়া বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন এবং যথারীতি অনুপস্থিত রয়েছেন। অজ্ঞাত নামা মামলার অজুহাতে উপাচার্য অনেককে পদায়ন না করণেও ধর্ষণ মামলার আসামি মোঃ আবদুল মজিদকে পদায়ন করেছেন।

অভিযোগ-১০: ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপা

২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির বিষয় ধরা পরলেও  উপাচার্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

অভিযোগ-১১: বিচারহীনতার সংস্কৃতি

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হামলা, মারামারি, সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, জালিয়াতি ও ভাঙচুরের মতো ঘটনার কোন বিচার হয় না। চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি এসব ঘটনা ঘটালেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উপাচার্য নিজেই এগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। বর্তমান ভিসি দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় ৩৫ টির মতো ঘটান ঘটেছে। কয়েকটির ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কমিটি হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

অভিযোগ-১২: সংবিধি ও প্রবিধি

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন ২০০৯ এর তফসিলে বর্ণিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সংবিধি ব্যতিত প্রতিষ্ঠার ৮ বছরে কোন সংবিধি ও প্রবিধি প্রণীত হয়নি।

অভিযোগ-১৩: আপ্যায়ন ভাতা

উপাচার্য দপ্তর আপ্যায়ন বাবদ ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ৪,৮০,৫১১/- টাকা, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৪,৯৩,৯৮৪/- টাকা, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে (৩ মাসে) ৭৮,৯৭০/- টাকা ব্যয় করে। সেই সাথে ট্রেজারারের দপ্তর ( উপাচার্য নিজেই ট্রেজারারের দায়িত্বে) জুলাই, অক্টোবর, ডিসেম্বর ২০১৫ এবং জুন, জুলাই, সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে ২,১৯,০৩৩/- আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় করেন। এসব টাকার কোন ভাউচার অর্থ ও হিসাব শাখায় সংরক্ষণ করা হয়নি।

অভিযোগ-১৪: গাড়ী ব্যবসহারে স্বেচ্ছাচারিতা

উপাচার্য মহোদয় রংপুরে ২ টি এবং ঢাকায় ১ টি গাড়ী ব্যবহার করেন।  প্রাধিকার অনুযায়ী তিনি ১ টি গাড়ী ব্যবহার করতে পাবেন।

অভিযোগ-১৫: প্রশাসনিক অচলাবস্থা

মালি থেকে রেজিস্ট্রার পর্যন্ত সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর ব্যক্তিগত নথি ভিসির কাস্টডিতে থাকে। কারও নথি প্রশাসনিক প্রয়োজন হলে ভিসেকে চাহিদাপত্র দিয়ে আনতে হয়।

অভিযোগ-১৬: ভর্তি পরীক্ষার সম্মানী সংক্রান্ত

উপাচার্য মহোদয় বিভিন্ন ক্যাপাসিটিতে ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্ব পালনের জন্য ১ম বছর ৫,৪৭,০০০/- ২য় বছরে ৫,৮৮,০০০/- এবং ৩য় বছরে ৫,৩০,০০০/- টাকা গ্রহণ করেছেন।  প্রাপ্ত এসব সম্মানীর অর্থ ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন’ শীর্ষক ফান্ডে জমা করেছেন বলে জানান। তবে এ ধরণের ফান্ড গঠনের কোন প্রমান পাওয়া যায়নি।

উল্লেখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ইউজিসির তদন্ত দল ৬ টি সুপারিশ করেছেন। সুপারিশ গুলো হলো: 

এক: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য শিক্ষা ও গবেষণা কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত নেতৃত্ব প্রদানে উপাচার্য সফল হননি।

দুই: উপাচার্যের অব্যাহত অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

তিন: বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ রক্ষায় উপাচার্য সচেষ্ট ছিলেন না।

চার: বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নথিপত্রপত্র তিনি নিজ দপ্তরে ও নিজ তত্তাবধানে সংরক্ষণ করার ফলে প্রশাসনের সকল পর্যায়ে আস্থাহীনতা  ও প্রশাসনিক বন্ধ্যাত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।

পাঁচ: যেখানে যানবাহনের স্বল্পতা রয়েছে সেখানে উপাচার্যের তিনটি গাড়ী ব্যবহার করা অনৈতিক এবং এতে সরকারের যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সে দায়িত্ব উপাচার্যের উপর বর্তায়।

ছয়: আপ্যায়ন ভাতার নামে উপাচার্য বিভিন্ন সময় যে বিপুল পরিমান অর্থ উঠিয়েছেন তা দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে। ছাত্রভর্তির জন্য উপাচার্য বিপুল পরিমান অর্থ গ্রহণ করেছেন। এর ফলে বিশ^বিদ্যালয়ে আর্থিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক যার দায় উপাচার্যের উপর বর্তায় বলে তদন্ত কমিটি মনে করে।

উল্লেখ্য, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. আর এম হাফিজুর রহমান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান উপাচার্যের বিভিন্ন অনিয়ম উল্লেখ করে তদন্তের দাবি জানালে ইউজিসি সদস্য আখতার হোসেনকে আহবায়ক ও রাবির সাবেক উপাচার্য মিজানুর রহমান ও ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক ফখরুল ইসলামের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি। তদন্ত কমিটি গত বছরের ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তদন্ত কার্যক্রম চালায়। যার ধারাবাহিকতায় এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

মন্তব্য করুন


 

Link copied