আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

 width=
 
শিরোনাম: কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা       ২৯ রমজান কি অফিস খোলা?       আজ ঐতিহাসিক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস       লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ হস্তান্তর      

 width=
 

মিঠাপুকুরে অরক্ষিত ইকো পার্ক; ৬৬ বছর মাটির ঘরে!

বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০১৭, দুপুর ১২:৩৮

জানা যায়, রংপুর অঞ্চলে কোনো ইকো পার্ক না থাকায় শাল্টিগোপালপুুর রেঞ্জের আওতায় বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকা ২২৬ একর জমির ওপর স্থাপন করা হয় মিঠাপুকুর ইকো পার্ক। ২০১৪ সালের ২ আগস্ট পার্কের উদ্বোধন করেন রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনের সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান। ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক রতন কুমার মজুমদার ‘ইকো পার্ক অফিস ভবন’ উদ্বোধন করেন।

কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছিল দ্রুত জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, পশু-পাখিসহ অন্যান্য প্রাণী সংরক্ষণ করা। পর্যটক আকর্ষণে ইকো পার্কে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো। কিন্তু চার বছরে সেখানে শুধু তিনটি অজগর সাপ ছাড়া হয়েছে। অন্য কোনো পশু-পাখি কিংবা অন্য কোনো প্রাণিকুল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। উপরন্তু, বনাঞ্চলের ভেতর থেকে দুর্লভ প্রজাতির মূল্যবান শালগাছ কেটে সাবাড় করছে বনদস্যুরা। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে যেতে সাহস পায় না বিনোদনপ্রিয় লোকজন। ইকো পার্কের ফটক বন্ধ থাকায় কেউ কেউ বন বিভাগের ফটক দিয়ে ভেতরে ঢোকে। ছয়জন কর্মচারী (বনরক্ষক), একজন করে বিট ও রেঞ্জ কর্মকর্তা দিয়ে চালানো হচ্ছে ইকো পার্কটির কার্যক্রম। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মূলত সামাজিক বন রক্ষার দায়িত্বে নিয়োগপ্রাপ্ত। বন বিভাগের জায়গাটি ইকো পার্ক হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হলেও আলাদা করে সেখানে কোনো জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

বন পাহারাদার নেয়ামুল হক বলেন, ‘বন বিভাগের কার্যক্রম চলে মাটির ঘরে। ইকো পার্ক হিসেবে আলাদাভাবে কোনো লোকবল নিয়োগ হয়নি। আমরা নিয়মিত বনের ভেতরে গিয়ে খোঁজখবর নিই। ইকো পার্ক হিসেবে উদ্বোধনের পর বনের ভেতর তিনটি অজগর সাপ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ’

রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে মিঠাপুকুর উপজেলা সদর থেকে পশ্চিমে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে পার্কটির অবস্থান। পার্কের ন্যূনতম যেসব প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা দরকার, তার কিছুই নেই। নেই জীববৈচিত্র্য। বরং দিনরাত চলে মাদকাসক্তদের আনাগোনা। ভ্রমণপিপাসুদের ক্লান্তি শেষে বসার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে চারটি বেঞ্চ ও ছাউনি। এর ওপর আছে বহিরাগত লোকজনের বাড়তি উত্পাত। এ কারণে দূর-দূরান্ত থেকে যারা বাঘ, সিংহ, হরিণ বা অন্য পশু-পাখি দেখতে আসে তারা হতাশ হয়ে ফিরে যায়। পার্কে কোথাও শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা নেই। কয়েকটি দোলনা তৈরি করা হলেও জরাজীর্ণ অবস্থায় ভেঙে পড়ে আছে।

পার্ক ঘুরে দেখা যায়, ১৯৫১ সালে নির্মিত বন বিভাগের ঘরগুলোর অবস্থা করুণ। মাটির ঘরগুলো বসবাসের অনুপযুক্ত। কিন্তু নতুন আবাসন না থাকায় ৬৬ বছর ঝুঁকি নিয়ে এসব ঘরেই চলছে ইকো পার্কসহ বন বিভাগের দাপ্তরিক কার্যক্রম।

বনের ভেতরে পিকনিক স্পটের জন্য মাত্র একটি ইকো কটেজ নির্মাণ করা হলেও সেখানে পানি সরবরাহ ছাড়া আর কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। রেঞ্জ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কার্যালয় ছাড়া কোথাও নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। তবে পার্কের ভেতর আছে বিশাল এলাকাজুড়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা দৃষ্টিনন্দন বাঁশঝাড়। এর মধ্যে সম্প্রতি ঝড়ে ভেঙে পড়ে আছে অনেক গাছপালা। ফটক থেকে সামান্য পাকা রাস্তা থাকলেও চলাচলের জন্য ভেতরে আর কোনো পাকা রাস্তা তৈরি করা হয়নি। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে পথ চলতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় আগমনকারীদের। দর্শনার্থীদের জন্য গোটা পার্কের ভেতর স্যানিটেশনের জন্য দুটি কক্ষ থাকলেও পানির অভাবে তা তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

পার্কে দুর্লভ জাতের হাজার হাজার শাল রয়েছে। অল্প কিছু নারিকেলগাছ রয়েছে। এ ছাড়া মিনজিরি, গর্জন, তেলশুড়, কড়াই, আকাশমনি, চাপালিশ, রক্ত চন্দনসহ পারুল রয়েছে। ঔষধি গাছের মধ্যে আছে অর্জুন, আমলকী, বহেড়া ও হরীতকী। রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে কিছু অর্কিড রয়েছে। বনের ভেতর কোথাও কোথাও দেখা মিলবে খেঁকশিয়াল, কাঠবিড়ালি, সাপ, বেজি ও ব্যাঙের।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, কাঁঠালিপাড়ায় বন বিভাগের জমিতে যুগ যুগ ধরে অন্তত অর্ধশতাধিক লোক ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছে। উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েও তাদের সরাতে পারেনি বন বিভাগ। গত বছরের নভেম্বরে রাতের আঁধারে পার্কের ভেতরে রংপুর সদরের দর্শনার অটোচালককে এনে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার মাস দুয়েক আগে তারাগঞ্জ উপজেলার আরেক ব্যক্তিকে অপহরণ করে বনের ভেতর হত্যা করা হয়।

কুড়িগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা যুবক আদনান বলেন, ‘ইকো পার্কের কথা শুনে বেড়াতে এলাম। কিন্তু নিরাপত্তার যে হাল, ভয়ে ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। ’

গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘বনের ভেতর পর পর দুটি হত্যাকাণ্ডের পর রাতে পার্কের সামনের রাস্তায় চৌকিদার দিয়ে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ’

রেঞ্জ কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর কিছু কিছু বরাদ্দ দিয়ে পার্ক উন্নয়নে কাজ করার কথা ছিল; কিন্তু তা হচ্ছে না। এর মধ্যে ইকো পার্ক নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রূপে ইকো পার্ক গড়ে তোলা হলে এই অঞ্চলে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সম্ভাবনা সৃষ্টি হতো। ’

খবর-কালের কণ্ঠ

মন্তব্য করুন


 

Link copied