আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ● ৩ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৬ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: কুড়িগ্রামে অষ্টমীর স্নান করতে এসে মারা গেলেন পুরোহিত       বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ১১ জন নিহত       উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: রংপুরে ৩০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল        ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ডোমার ও ডিমলায় মনোনয়ন জমা দিলেন ৩৫ জন       নীলফামারীতে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষন -গ্রেপ্তার ৬      

 width=
 

রংপুরের কোটিপতি অফিস সহকারীকে খুঁজছে দুদক

সোমবার, ২৯ মে ২০১৭, সকাল ০৮:৫৭

তাকে ধরতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জাল বিছানো হয়েছে। ১৮ মে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় একাধিক রাঘববোয়াল জড়িত রয়েছে এমন সন্দেহে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়, দুদক ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, জিএম শাখা থেকে জেলা প্রশাসকের সই জাল করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে প্রায় চারশ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাইয়ে দেন সামসুল। ১৯৮৭ সাল থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে এসব লাইসেন্স দেওয়া হয়। এ ঘটনায় জিএম শাখার অফিস সহকারী সামসুল ইসলাম ও পিয়ন পান্নু মিয়ার নামে গত ১৮ মে মামলা করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাস। মামলাটি দুদকে স্থানান্তরের পর পরই সামসুলকে গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।

জানা যায়, সামসুল ইসলাম লাইসেন্সপ্রতি কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা করে নিতেন। এভাবে তিনি শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ঘটনার সঙ্গে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকজন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীসহ প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অত্যাধুনিক এসব আগ্নেয়াস্ত্র কেনা হলেও বেশিরভাগ অস্ত্রের হদিস মিলছে না বলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে।

মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে দুদক অভিযান চালাচ্ছে। ওই দিন সামসুল ইসলামের বাসভবনের আলমারি থেকে নগদ ১১ লাখ টাকা, পুরনো স্ট্যাম্প, পুরনো পাসপোর্ট ও ১৫টি ভুয়া লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও উদ্ধার করা হয়।

সামসুলের হাত দিয়ে জাল কাগজের মাধ্যমে দেওয়া লাইসেন্স পেয়েছেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের ব্লক-ই এর ৭/১ নং রোডের ২নং বাড়ির মালিক শেখ গিয়াসউদ্দিন আহম্মেদের পুত্র শেখ জহুরুল ইসলাম। তাকে দেওয়া হয়েছে একটি ৩২ বোর পিস্তল, ইতালিতে তৈরি এফ ৯৯৭৯৯ ডব্লিউ ২৫ রাউন্ড কার্তুজসহ অস্ত্রের লাইসেন্স, যার নং-০৪/২০০০। অস্ত্রটি কেনা হয়ে দিনাজপুরের গণেশতলার মেসার্স মাহবুব আর্মস কোং লিমিটেড থেকে। তবে লাইসেন্স নেওয়ার সময় রংপুর মহানগর শালবন এলাকার সোনালি এন্টারপ্রাইজের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়। একইভাবে ২০০৬ সালে রংপুরের বদরগঞ্জের দামোদরপুর এলাকার রাজু আহমদের ছেলে সুমন আলীকে ১০ রাউন্ড বন্দুকসহ একটি একনলা বন্দুকের লাইসেন্স দেওয়া হয়, যার লাইসেন্স নং-০২/২০০৬। ওই অস্ত্রটি কেনা হয় বগুড়া খান মার্কেটের খান আর্মস কোং লিমিটেড থেকে। এই লাইসেন্সটি নবায়ন করা হয় ২০১৫ সালে। রংপুরের তারাগঞ্জের ইকরচালী গ্রামের মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের পুত্র মনোয়ারুল ইসলামকে ২০০৯ সালে একটি একনলা বন্দুকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। লাইসেন্স নং ০৯/২০০৯। এই তিনটি লাইসেন্সই দেওয়া হয় রংপুরে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের সই জাল করে। এভাবে চারশর বেশি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। এসব লাইসেন্সের বিপরীতে দেওয়া ঠিকানাও ভুল। লাইসেন্স পাওয়ার আগে গোয়েন্দা ও পুলিশের ক্লিয়ারেন্সও জাল ছিল।

২৭ মে দুপুরে নগরীর সয়রাতল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি বিলাসবহুল তিনতলা বাড়ি আছে সামসুলের। বাড়িটির মূল্য কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা। এলাকাবাসী জানান, কিছু দিন আগে সামসুল ইসলাম রংপুর মহানগরীর খোর্দতামপাট মধ্যপাড়া এলাকায় ১ কোটি টাকা দিয়ে ১ একর জমি ক্রয় করেছেন। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে।

এলাকবাসী আরও জানান, সামসুল যে বাথরুম ব্যবহার করেন, সেটি কোটি টাকার। বিদেশ থেকে মালামাল ক্রয় করে বাথরুম বানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া তার ছেলের নামে বসুমতি ট্রেনিং কোম্পানির টাইলস ক্লিনারের ডিলারশিপ রয়েছে। তার বাড়ির পাশে রয়েছে মসজিদ। এই মসজিদের নিচতলায় তিনি তার ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

সামসুলের পিতা সফিলউদ্দিন জানান, তার ছেলে নির্দোষ। তাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত চান। তিনি জানান, তার ৬ ছেলে ও ৭ মেয়ের মধ্যে সামসুলই সবচেয়ে বড়।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান ডিসির স্বাক্ষর জাল করে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় সামসুলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পিয়ন মিন্টুর বিষয়েও তদন্ত হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় অফিসের আর কেউ জড়িত আছে কিনা? জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অফিসের অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাকেও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

দুদক রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক মোজাহার আলী সরকার জানান, আদালতে আবেদন করে সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে সামসুল ইসলামের বাড়িতে তল্লাশি করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied