আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

সুস্থ্য হয়ে যেন আবার রংপুর ফিরে আসেন সাংবাদিক আলী আশরাফ

শনিবার, ১৭ জুন ২০১৭, বিকাল ০৫:১৩

সরকার মাজহারুল মান্নান

শনিবার, দুপুরে ১২ টা ৩৩ মিনিটেরংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালের আইসিইউ থেকে ঢাকায় নিউরোসাইন্স হাসপাতালে উন্নত চিকিত্সার জন্য একটি বেসরকারী এয়ার এম্বুলেন্সে এ করে নেয়া হয়। তাঁকে যখন এয়ারে উঠাচ্ছিলাম। তখন তিনি চোখ চাইছিলেন এপাশ ওপাশ। কিন্তু তখনও কথা বলতে পারছিলেন না। একটু শরীররা আগের দিনের চেয়ে ভালো লাগছিল। যখন হেলিকপ্টারটি আকাশে উড়ছিল তখন ওই মাঠে তার শত শত ভক্ত। সবার চোখে জল। উপরে হাত নেড়ে বিদায় জানালো। সবাই চোখ মোছামুছি করছে। একে অপরের দিকে চাওয়া চাউয়ি করছে। বুকের পাজর ভেঙ্গে যাচ্ছিল সবার।

রংপুর তথা উত্তরাঞ্চলের আলোকিত মানুষ, মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সৈনিক বর্ষিয়ান সাংবাদিক বাংলাদেশ টেলিভিশনের রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি, দৈনিক বায়ান্নোর আলোর নির্বাহী সম্পাদক এবং বাংলাদেশ বেতার রংপুরের নগর সংবাদদাতা আলী আশরাফ। আমার সাথে সাংবাদিক আলী আশরাফের ছিল হৃদয়িক সম্পর্ক। আমি যখন ২০১৪ সালেল সেপ্টেম্বর মাসে সাংবাদিকতার চাকরি নিয়ে রংপুর আসি। এই শহরে আমার কোন আপনজন ছিল না । একজন মানুষ মাত্র আমার পরিচিত ছিলেন তিনি হলেন দৈনিক পরিবেশনের চীফ রিপোর্টার মমিনুল ইসলাম রিপন। তার সাথে আমার ঢাকায় পরিচয় হয়েছিল। এরপর কয়েক দিনের মধ্যেই বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে আমার পরিচয় ও হৃদ্যতা হয়। এরমধ্যে অন্যতম হলেন সেই সময় দৈনিক ইত্তেফাকের রংপুর(দক্ষিণ) সংবাদদাতা সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী, ডেইল স্টার বর্তমানে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার রফিক সরকারের সাথে। বাপ্পী ভাইয়ের মাধ্যমেই মাধ্যমেই আমার পরিচয় হয়েছিল সাংবাদিক আলী আশরাফের সাথে। বাপ্পী তাকে মামা বলে ডাকতেন। আমিও সেই সুবাদে তাকে পরিচয়ের পর থেকেই মামা বলে ডাকি। এরপর হৃদয়িক সমপর্ক বাড়তে থাকে। ক্রমেই হয়ে যায় একেবারেই পারিবারিক। মামির স্নেহটা ছিল হৃদয়িক। আমি তাকে শাশুড়ী বলে ডাকি। তিনিও আমাকে জামাই বলে ডাকেন। রংপুরে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে, শিখতে গিয়ে যে কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক আমাকে অলিগলি, ভালোমন্দের পার্থক্য শিখিয়েছেন। সাংবাদিক আলী আশরাপ তার অন্যতম। আমার একজন পরম অভিভাবক। কতদিন তার বাসায় আমি খেয়েছি। তার ইয়ত্তা নেই। গভীর রাতেও তাঁকে বাসায় পৌছে দেয়ার পর মামি না খেয়ে আসতে দেন না। কি যে স্নেহভরা যে মুহুর্তেগুলো বোঝানো যাবে না কাউকে। মামা নানান বিষয়ে আমার সাথে শেয়ার করতেন। তার সাথে আমার প্রতিদিন ফোনে কথোপকথন হতো। তিনি যদি কখনও আমার ফোনটা ওয়েটিং পেতেন। খুব রেগে যেতেন। ফোন ঘুরালেই বলতেন, বদমাইশ, ফোন ওয়েটিং থাকে কেন। তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। কোথায় আছো। ক্লাবের সামনে আসো। বায়ান্নোর আলোতে আসে। অথবা অন্য কোন জায়গায় ডাকতেন। অথবা বলতেন, আমি তোমার অফিসে আসছি। ইত্যাদি।

তিনি হচ্ছেন সেই সাংবাদিকদের মধ্যে অন্যতম যিনি দহগ্রাম আঙ্গরপোতা ছিটমহলের বন্দিজীবনের প্রথম তথ্য পত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন।(এই তথ্যটি আমি তার সেই সময়কার সফরসঙ্গি মরহুম সাংবাদিক মোফাজ্জল হোসেন, সাংবাদিক মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের কাছে শুনেছি। সেই বন্দিদশা থেকে ৪১ বছর পর উম্মুক্ত জীবন যাপন করতে পারছেন এখন দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার মানুষ। অসংখ্য ইতিহাস সৃস্টিকারী লেখনি আছে তার ৪৫ বছরের সাংবাদিক জীবনে।

এতো বড় মাপের সাংবাদিক হয়েও তিনি খুব সাধাসিধে সাধারণ জীবন যাপন করতেন। একটি ঘটনায় তা অকাট্য হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ( বিসিএস তথ্য) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোর ছাত্র আমার বন্ধবর মনিরুজ্জামান খান শিশু সাংবাদিকদের একটি প্রশিক্ষণ বিষয়ে একবার রংপুর আসলেন। আমি তাঁকেসহ মামার বাসায় খেলাম কয়েক সন্ধা। ওই তিনদিন মনির আমাকে কয়েকবার একটা কথা বলেছেন। সেটা শুনে আমি আশ্চর্য হয় নি। মুনির বলছিলেন, মাজহার আলী আশরাফ ভাইয়ের জীবন যাত্রা দেখে আমি হতবাক হয়ে গেছি। আমি বললাম কেন। জবাবে মনির বলছিলেন, আমি বিভাগীয় শহরসহ যত জেলায় ট্যুর করেছি বিটিভির সাংবাদিকদের জীবন যাত্রা দেখে আমি রীতিমত হতবাক। তারা এসি গাড়িতে আমাকে চড়িয়েছেন। এসি হোটেলে রেখেছেন। তাদের জীবন স্টাইল আধিপত্য দেখে আমি তাজ্জব বনে গেছি। অথচ একটাই ব্যতিক্রম সেটা হলো আশী আশরাফ ভাই। তিনি এখনও রিকশা দিয়ে যাতায়াত করেন। এখনওিআধাপাকা বিল্ডিংয়ে থাকেন, এত সাধাসিধে জীবন যাপন করেন। আমার কল্পনাতেই আসে না।

গত বছর আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মামা প্রেসক্লাবের ঈদের কার্ড বানিয়ে নিয়েছিলেন। অর্ডারটিই তিনি আমাকে দিয়েছিল ৪ দিন আগে। কার্ড ফয়েল লেমেনেশন করার জন্য ঈদের তিন দিন আগে আমি ঢাকা পাঠাই আমি। যানজটের কারনে একদিনের গাড়ি পরের দিন আসে। সেকারনে গাড়ি আসতে দেরি হওয়া কার্ডটি এসে পৌছায় ঈদের একদিন আগে। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস এ। আসতে আসতে রাত সাড়ে ১১ টা বেজে যায়। আমার অজান্তে মামাই তিনবার গিয়েছিলেন সেদিন সন্ধার পর থেকে কুরিয়ার সার্ভিস অফিসে। কিন্তু আসে নি। বার বার শুধু আমাকে ফোন করছেন, বলছেন, তুই আমার মান সম্মান নস্ট করবি। ক্লাবের ব্যপার। দেখ তারাতারি কর। কাল নিয়ে কি ভর্তা করে খাবো কার্ড। আমি শুধু শুনলাম আর বললাম, আসলেই নিয়ে আসছি মামা। তিনি ধমক দিয়ে বললেন, বদমাইশ, আমাকে মামা বলবি না। তখন আমি বললাম। আচ্ছা মামা বলবো না শশুড়জান। তিনি হাসতে হাসতে বললেন, শশুড় বললেই পার পাবি না। তোর কার্ডের টাকা দিবো না। কার্ডটা আসলে অনেক রাতে সেটি নিয়ে যাই বায়ান্নোর আলো অফিসে। কার্ড দেখে মুগ্ধ হলেন তিনি। হাসিমাখা বায়ান্নোর আলোর সবাইকে আমার নামে বিচার দিয়ে বললেন, দেখো আমার জামাইয়ের কান্ড। আমার চাকরি খাওয়ার পর কার্ড নিয়ে এসেছে। তোমরা থাকো। এখনও ওকে নিয়ে কার্ড বিলি করবো। এটাই ওর শাস্তি। একটু এদিক ওদিক হলেই মামা রেগে যেতেন। কিন্তু সেই রাগের মধ্যে কখনই আমি দেখতে পাই নি কোন ইর্ষা, বিদ্বেষ অথবা শ্লেষ। রাগও যে স্নেহের হয়, সেটি যে শুধু মামাই করতে পারেন, তার সাক্ষি রংপুরের সব মানুষ।

রংপুরের এমন কোন ক্ষেত্র নেই। আলী আশরাফ নামের এই মহান সাংবাদিককে কেউ চিনতো না জানতো না। তিনি একজন সফল বাবা। তার বড় মেয়ে আমিনা লাবিব অমি উচ্চ শিক্ষত। বড় জামাই শামীম জামান। বাংলাদের একজন প্রখ্যাত পরিচালক ও নাট্যাভিনেতা। তার ছোট মেয়ে আদিবা লাবিব বনি এখনও পড়াশুনা করছে। ছোট জামাই কাজী শুভ। বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট সঙ্গিত শিল্পী। তার শব্দ এবং পুর্নতা দুই নাতি নাতনি আছে। তার স্ত্রী জেনিফার আলী। তিনি সেই নারী যিনি ১৯৭২ সালে ১১ মে রংপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় জাতীয় জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রংপুর সফরে আসলে সার্কিট হাউজে তাঁকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বারান্দার ক্ষোপ ক্ষোপ বেয়ে বেয়ে উঠে বঙ্গবন্ধুর হাতে ফুল দিয়েছিলেন।

সাংবাদিক আলী আশরাফ। তিনি একজন আগাগোড়া সাংবাদিক। তাঁর সাংবাদিকতার বয়স আমার সাংবাদিকতার চেয়েও ১৬ বছর বেশী। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর তার সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা। গত ৯ জুন শুক্রবার সকালে তিনি নিজ বাসায় স্ট্রোক করেন। সাথে সাথে তাকে নেয়া হয় কছির উদ্দিন মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে দুই দিন পর তাকে নেয়া হয় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে। তার ব্লাড প্রেসার ছাড়াও ডায়াবেটিসসহ অন্য রোগও আছে। এখন তিনি জীবন মৃত্যুর সাথে সন্ধিক্ষণে। উন্নত চিকিত্সার জন্য তাঁকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হলো। হয়তো তার নিউরো বিষয়ক অস্ত্রপাচার করা হবে।

রংপুরে হাসপাতালে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, স্থাণীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর সিটি মেয়র সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টুসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার শতশত মানুষ। অনেকেই তার চিকিত্সার জন্য স্বত:স্ফুর্ত ভাবে সহযোগিতা করেছেন, করছেন। রংপুরের সবখানে তার সুস্থ্যতার জন্য দোয়া মোনাজাত করা হচ্ছে। সাংবাদিকসহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষের কাছে আমি তার জন্য দোয়া চাই আল্লাহ যেন তাঁকে সুস্থ্য করে দেন। তিনি যেন আবার রংপুর ফিরে আসেন।

[caption id="attachment_135154" align="alignleft" width="150"] লেখক[/caption]

তিনি যেন বলতে পারেন, কোথায় রে, তুই তুই বড় বদমাইশ, ফোনটা ওয়েটিংয়ে কেন তোর ??

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন

মন্তব্য করুন


 

Link copied