আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: দিনাজপুরে ছিনতাইকৃত মালামাল উদ্ধারসহ ছিনতাইকারী চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার        জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবাকে কবর দিতে ছেলের বাঁধা ॥ পুলিশের হস্তক্ষেপে দাফন       নীলফামারীতে স্বামীর প্রথম বিয়ের খবরে নববধূ দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মহত্যা ॥ স্বামী গ্রেপ্তার       রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে      

 width=
 

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়: পদ, পদোন্নতি অত:পর দুর্নীতি

সোমবার, ১৯ জুন ২০১৭, রাত ১০:৫৭

তপন কুমার রায়

পদ বঞ্চিতের তুষের আগুন এবং পদোন্নতির লালিত শিখা না পাওয়ার ব্যর্থতাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক উপাচার্যের দূর্বলতা দুর্নীতিকে পুজি করেই একে পর এক অন্তরায় তৈরি হয়েছে রংপুরে জন্মগ্রহনকারী নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার নামকরণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।

কেমন ছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে ফেলে আসা দিনগুলো? উত্তরটা বিগত বছরের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নবীন এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা থেকেই অবগত হওয়া যেতে পারে। দুই উপাচার্যের সময়ে গণমাধ্যমে চোখ রাখতেই দেখতে হয়, ভিসি বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল, সংকট আর অস্থিতিশীল বেরোবির খবর। সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. একএম নূর-নবীর সময়ে গণমাধ্যমগুলোতে যে শিরোনামটি শোভা পেত তা হলো- “আবারো উত্তপ্ত/উত্তাল রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।” কতবার উত্তাল ছিলো এই বিশ্ববিদ্যালয়? নেপথ্যে কি ছিলো? ইতিহাস কি বলে? উত্তরটা সাদামাটা ভাবে বললে হবে, অসংখ্যবার। নেপথ্যে ছিলো পদ, পদোন্নতি এবং দুর্নীতি। ইতিহাস তাই বলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের প্রথম ধাক্কাটা লাগে ২য় উপাচার্য দুর্নীতির দায়ে অপসারিত অধ্যাপক ড. মু. আব্দুল জলিল মিয়ার বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালে ৫ জানুয়ারি ১০-১২ জন শিক্ষক উপাচার্য আব্দুল জলিল মিয়ার বিরুদ্ধে লাগামহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগে আত্মীয়করণসহ একাধিক অভিযোগ এনে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাধারণ মানসিকতা, নৈতিকতা ও সততাকে উৎসাহিত করে দুর্নীতি পরায়ণ ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলনের জোয়ার নামে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে হল চালু এ্যাম্বুলেন্স চালু, নীডস বাতিল সহ ১২ দফা দাবি দেয়া হয় হয়। সকলের সমন্বয়ে গঠিত হয় দুর্নীতি বিরোধী মঞ্চের উপাচার্য হটাও আন্দোলন। উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে ১০ জানুয়ারি বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়। শুরু হয় বন্ধ ঘোষণার রীতি। প্রায় ৬ মাস নানা টানাপোড়ানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা উপহার পায় একগুচ্ছ সেশনজট। শেষে অপসারিত হয় দুর্নীতি পরায়ণ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু. আব্দুল জলিল মিয়া। অধ্যাপক ড. মু. আব্দুল জলিল মিয়া দুর্নীতি পরায়ণ ছিলো এটি দেশের মানুষ অস্বীকার করতে পারবেনা। দুদকে সেই অভিযোগে মামলাও চলমান। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, সেসময়ে প্রায় ৯০ জন শিক্ষক থাকলেও কেন শুধুমাত্র ১০-১২ জন শিক্ষক দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন? শুধু কি দুর্নীতিই প্রধান কারণ? নাকি এর অন্তরালে উপাচার্যের দুর্নীতি পরায়ণের দুর্বলতাকে পুঁজি করে অন্যকিছুর ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটানোই ছিলো প্রধান? বলা হয়ে থাকে, সেসময়ের উপাচার্যের দুর্নীতির দুর্বলতাকে পুঁজি করে যেসব শিক্ষক আন্দোলন শুরু করেছেন তারা ছিল পদবঞ্চিত। প্রক্টরিয়াল বডি, ডিন, বিভাগীয় প্রধানের পদ সহ সবকিছুই ছিল এই শিক্ষকদের বাইরে তথা উপাচার্যের পক্ষ নেয়া শিক্ষকদের হাতে।

সর্বোপরি দুর্নীতি বিরোধী মঞ্চের জয় হলো। আসলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবী। তৃতীয় উপাচার্যের অর্ধেক সময় পার না হতেই ২০১৪ সালের ২৭ অক্টোবর ২৭ জন শিক্ষকের পদোন্নতি, বকেয়া বেতন-ভাতাদি সহ নানা দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে ঘনিয়ে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকে আরেকটি কালো অধ্যায়। নানা অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতাসহ একাধিক অভিযোগে উপাচার্যকে বয়কট, ক্রমান্বয়ে ২০ জন শিক্ষকের বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগ, অবস্থান কর্মসূচি থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আবারো অচল হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়। কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের একাংশের সহযোগে সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে চলতে থাকে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন। বন্ধ হয় একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন। পিছিয়ে যায় ২০১৪-১৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষাও। দীর্ঘদিন অচল থাকার পর ২০১৫ সালের ২৩ মার্চ অনেকটা সমস্যার সমাধান না করেই দ্বার খুলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের। তবে নানা দিক থেকে বহুগুণে পিছিয়ে পড়ে এই উচ্চবিদ্যাপীঠ। পদ, পদোন্নতি আর দুর্নীতি এই তিনটি শব্দই বার বার পিছনে ঠেলে দেয় এই বিশ্ববিদ্যালয়কে।

বলা বাহুল্য, ২০১৪ সালের আন্দোলনটি সূচনা হয়েছিলো সকল শিক্ষকদের সর্বসম্মতিক্রমে। তবে যেই শিক্ষকরা এই আন্দোলন শুরুর মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিলো তারাই মাঝপথে সরে গিয়ে উপাচার্যের পক্ষে অবস্থান নেন। শুরু হয় প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ এবং নীল দল নামের দুটি শিক্ষক সংগঠনের প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব। নীল দলের আধিপত্যে চলে যায় প্রশাসনিক ও একাডেমিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ। তৃতীয় উপাচার্য বিদায় পর্যন্ত চলে এই পদের নীরব কোন্দল। তবে কতক্ষণ নীরব থাকতে পারবে এই কোন্দল?

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে গত ১৪ জুন যোগদান করেছেন অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। উপাচার্যের যোগদানের পরপরই শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন উপাচার্যের কাছে গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। নয়া উপাচার্যকে ভেবে চিন্তে পা ফেলে এগিয়ে যেতে হবে, সুস্থ মস্তিষ্কে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে হবে। তবে কতদূর এগোতে পারবেন উপাচার্য? পদ, পদোন্নতি কিংবা দুর্নীতির ভয়াল থাবা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন কি? তিনি চাইলেও শিক্ষকদের অন্ত:কোন্দল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রুপিং আদৌ সঠিক পথে চলতে দিবে কি? যোগদানের পরপরই বর্তমান উপাচার্য দুইটি বিভাগে বিভাগীয় প্রধান এবং তিনজন সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে রদবদল করেছেন। গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে অনেকেই সাধুবাদ দিয়েছেন। তবে সবাই নয় বৈকি? সহজ করে বলি, যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা সবাই প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের বলে জানা যায়। তার মানে নীল দলে অসন্তোষ বাড়তে পারে। প্রকাশ্যে যে অসন্তোষ দেখা দেবে শুধু তা নয়, নীরবেও হতে পারে। অন্যদিকে, পি.এ হিসেবে যেই ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেই ব্যক্তি বিতর্কিত বলে গণমাধ্যমে খবর বেড়িয়েছে। গণমাধ্যমে বর্তমান উপাচার্য বলেছেন, বিষয়টি জানা ছিলো না। ঈদের পর পরিবর্তন করা হতে পারে। এখানেও পদ, পদোন্নতি এবং দুর্নীতি এই তিনটি শব্দের একটি বিদ্যমান। তাই ক্যাম্পাসের একজন খুদে সংবাদকর্মী হিসেবে বর্তমান উপাচার্যের উদ্দেশ্যে বলা যেতে পারে তিনটি শব্দের বিষয়ে খুব ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখানেই আপনার বিচক্ষণতা ও বুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। তবেই আপনি নীল-হলুদ, কর্মকর্তা-কর্মচারীর গ্রুপিংকে উপেক্ষা করে সকলের কাছে সফল উপাচার্য হিসেবে গ্রহনযোগ্যতা পাবেন।

লেখক: সভাপতি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (বেরোবিসাস)। ই-মেইল: tapanbrur@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied