দিনাজপুর প্রতিনিধি: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দিনাজপুর জেলা কোচ ও দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য আবু সামাদ মিঠুর বিরুদ্ধে কিশোরী ক্রিকেটারদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে এক কিশোরীর বাবা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন।
মীর খায়রুল আলম মিঠুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক জানান, এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে কিছুই জানাননি জেলা প্রশাসক।
এদিকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক বিসিবিকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। এ কথা স্বীকার করে বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান সোমবার বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। হয়তো নিষিদ্ধ করা হতে পারে মিঠুকে।’
যৌন হয়রানির শিকার কিশোরী ক্রিকেটারের বাবা ১৪ জুন লিখিত অভিযোগ করেন। এতে তিনি জানান, তার মেয়ে দিনাজপুর বড়মাঠে অন্যদের সঙ্গে কোচ আবু সামাদ মিঠুর কাছে ক্রিকেট অনুশীলন করে আসছে।
গত ১ জুন অনুশীলনের সময় বলের আঘাতে তার মেয়ে আহত হয়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য মিঠু স্পোর্টস ভিলেজে নিয়ে যান।
তারপর অন্যদের মাঠে পাঠিয়ে দিয়ে চিকিৎসার নামে মিঠু তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। এ সময় তার চিৎকারে মিঠু তাকে ছেড়ে দিলেও ঘটনা প্রকাশ না করার জন্য হুমকি দেন।
মেয়ের বরাতে কিশোরীর বাবা বলেন, এর আগেও কিশোরী ক্রিকেটারদের সঙ্গে মিঠু একই আচরণ করেছেন। তারা ভয়ে ও লজ্জায় মুখ খোলেনি।
তিনি জানান, তার মেয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ে। বয়স ১৫ বছর। বর্তমানে মেয়ের মানসিক অবস্থা নিয়ে সংশয়ে আছেন। পাশাপাশি কোচ মিঠু বিভিন্নভাবে গালাগাল ও হুমকি দিচ্ছে।
নির্যাতিতা কিশোরী ক্রিকেটারের বাবা জানান, দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নেতাদের তিনি প্রথমে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানালে মিঠুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেননি। উল্টো তাকেই গালাগাল করেন।
তিনি জানান, বিষয়টি ক্রীড়াঙ্গনের অনেক মানুষকে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। এ অবস্থায় তিনি লিখিত অভিযোগ করেন।
দিনাজপুর ক্রীড়াঙ্গনের একাধিক ব্যক্তি জানান, বিসিবির কোচ ও ‘প্রচেষ্টা ক্রিকেট কোচিং সেন্টার’ নামের ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক মিঠুর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ অনেক আগে থেকেই রয়েছে।
কিশোরী ক্রিকেটারদের সঙ্গে সে একই আচরণ করেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ করা হলেও ক্রীড়া সংস্থার নেতারা অজ্ঞাত কারণে মিঠুকেই প্রশ্রয় দিয়ে এসেছেন।
অন্যদিকে মিঠু কিশোরীর বাবার অভিযোগকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন। মিঠু বলেন, ‘এটি আমার ও আমার ক্রিকেট একাডেমি ‘প্রচেষ্টা ক্রিকেট কোচিং সেন্টারের’ বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র।
এদিকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি কানিজ রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফা বেগম এক বিবৃতিতে আবু সামাদ মিঠুর বিরুদ্ধে কিশোরী ক্রিকেটারদের যৌন হয়রানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন।
মানবিক মূল্যবোধের এ অবক্ষয় রোধে মহিলা পরিষদের নেতারা অপরাধীকে দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।