রাত সাড়ে ১০টা দিকে যখন সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকে উঠছিল তখন বা-মাকে ফোন করে এভাবে মা মঞ্জুআরা বেগমকে জানান মুঠো ফোনে আনোয়ার(২২) ও মহাসিন(১৯)। তারা আরো বলেছিলেন বাবা তোমাদের জন্য নতুন কাপড় কিনেছি। আমাদের দুভাইয়ের কাপড় তোমাদের কাছে নিবো মা।
শনিবার(২৪ জুন) দুপুরে তাদের গ্রামের বাড়ি গেলে মা ছেলের মোবাইলের সর্বশেষ কথন জানা যায়।
শনিবার (২৪ জুন) সকাল ৬টায় ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কলাবাগান কালিবাড়ি এলাকায় ট্রাক উল্টো ১৭ জন নিহত হন। তাদের সাথে মৃত্যু মিছিলে যুক্ত হন দু’ভাই মোহসিন ও আনোয়ার।
মোহসিন ও আনোয়ার লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার উত্তর বালাপাড়া গ্রামের শাহজামালের ছেলে। দুই ভাই স্থানীয় চন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্র।
এক সাথে দুই সন্তানকে হারানো শোকাতুর মা মঞ্জুআরা বেগমকে শান্তনা দেয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন গ্রামবাসী। দুস্থ হলেও উত্তম চরিত্রের মোহনসিন ও আনোয়ারকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান গ্রামবাসী। পুরো গ্রামে বৈছে শোকের মাতম। কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে উত্তর বালাপাড়া গ্রাম।
স্থানীয়রা জানান, অভাবের সংসারে লেখা পড়ার পাশা পাশি ঢাকায় মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে কাজে যায় মোহসিন ও আনোয়ার। গত মাসে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ করে গ্রীস্মকালিন অবকাশে বাড়িতে না থেকে ঈদের খরচ যোগাতে ঢাকায় পাড়ি জামান দুই ভাই।
মোহসিনের মা মঞ্জুআরা বেগম জানান, বাসের টিকিটে দাম বেশি তাই ট্রাকে উঠে মাকে মোবাইলে ছুটির খবরটি জানায় মোহসিন। সেহরী খাওয়ার সময়ও ছেলেদের খবর নেন মঞ্জুআরা বেগম। সেহরীর সময় তারা বগুড়া অতিক্রম করছিল। এসময় ফোন ধরে আনোয়ার। মাকে তিনি বলেন ‘সবার জন্য ঈদের নতুন কাপড় কেনা হয়েছে। দামি চিকন চিকন সেমাইও কিনেছি মা। চিন্তা করো না আমাদের এলাকার অনেকেই সাথে আছেন। সবাই এক সঙ্গে বাড়ি যাচ্ছি। তুমি ঘুমাও দুপুরের মধ্যেই পৌছে যাব মা।’
এ ভাবে মাকে ঘুমাতে বলে চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়ল আনোয়াের ও মোহসিন। দুপুর নয় সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ি ফিরছে ঠিকই তবে তাদের নিথর দেহ।
দুই সন্তানকে হারিয়ে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন বাবা শাহজামাল। পাগলের মত প্রলপ বখছেন-‘অভাব আমার ধনকে কেড়ে নিল। যাদের নিয়ে বাঁচতে চাইলাম তারাই ছেড়ে গেল। আমি কাকে নিয়ে বাঁচব। প্রলপ বখতে বখতে সজ্ঞাহীন হয়ে পড়ছেন বার বার।
আনোয়ার ও মোহসিনই নয় পীরগঞ্জের সড়ক দুর্ঘটনায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ২জন ও কালীগঞ্জ উপজেলার ১০জন নিহত হন। আহত অনেকেই রংপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।