ডেস্ক: উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উত্তরবঙ্গে পানিবন্দি হয়ে পরেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য নিয়ে ডেস্ক রিপোর্ট:
লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, ত্রান বিতরণ

লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
নিয়াজ আহমেদ সিপন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্তিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তিস্তা নদীর পানি হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের কাছাকাছি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রশীদ। অপরদিকে ধরলা নদীতে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানিপ্রবাহিত হয়েছে। ধরলা কাছ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া রত্নাই নদীরও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এসব নদীর দুইপাড়ে বসবাসকারী শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিস্তার পানির তোড়ে হাতীবান্ধার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের ধুবনী এলাকায় বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লালমনিরহাটের সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ধরলা ও রত্নাই নদীর মাঝে একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। সোমবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার(১১-জুলাই) দিনভর পানি উন্নয়ন বোর্ড সেই বাঁধটি বালুর বস্তা দিয়ে তৈরি করছেন। প্রায় তিন হাজার বস্তা দিয়ে এ বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল সরকার।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্তরা পাচ্ছেন না। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ তৎপরতা চালানোর দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মোঃ আলাউদ্দিন খান হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ রয়েছে। তিস্তা বিধৌত অঞ্চলের মধ্যে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের ৯ হাজার ২৫৮টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ২৮ মেট্রিকটন জিআর চাল, নগদ ৪ লাখ টাকা, ৭শ শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও তিস্তা পাড়ের আদিতমারী উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩ হাজার পরিবারের মাঝে ১২ মেট্রিকটন চাল, ১ লাখ টাকা, ১৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা, ধরলা ও রত্নাই নদীতে ক্ষতিগ্রস্ত ৫ হাজার পরিবারের মাঝে ১৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ১২ মেট্রিকটন চাল ও ১ লাখ নগদ টাকা বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি; দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসীদের

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি
সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ৫৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে তিস্তা ও দুধকুমারসহ অন্যান্য নদীর পানি।
বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের চর ও দ্বীপচরসহ প্রায় আড়াই শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ। বানভাসী মানুষজন ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাঁধ ও উচু জায়গা আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। টানা ৫দিন ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা এলাকা গুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট। অনেক পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে উচুঁ স্থানে আশ্রয় নিলেও তাদের হাতে কোন কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে অতিকষ্টে দিন যাপন করছে। বন্ধ রয়েছে জেলার দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান।
জেলা ত্রান শাখা সুত্রে জানা গেছে, বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ২শ ৫০ মেট্রিকটন চাল ও ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক বন্যা কবলিত মানুষের জন্য তা অপ্রতুল।
জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, জেলায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের তথ্য মতে বন্যার পানিতে জেলায় ৭শ ৭১ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে উঠতি আউশ ৭৪ হেক্টর, বীজতলা ১শ ১৩ হেক্টর, সবজি ৩শ ৪৪ হেক্টর, পাট ২শ হেক্টর এবং আখ ৪২ হেক্টর।
গাইবান্ধার ৪ উপজেলার ৭৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী
খায়রুল ইসলাম গাইবান্ধা থেকে: গাইবান্ধার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মঙ্গলবার আরও অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ি গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ১১ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদসীমার ৩৮ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসময় ঘাঘট নদীর পানি ১৬ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা, যমুনা ও করতোয়া নদীর পানি এখন বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
ইতোমধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ চরাঞ্চল বেষ্টিত ৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে বন্যার পানি উঠায় পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে।
অপরদিকে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় জেলার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৪ উপজেলার প্রায় ৭৫ হাজার পরিবার এখন পানিবন্দী।
এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরীভাবে ১শ’ ২৫ মে. টন চাল ও ১০ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে বিতরণ করা হয়েছ ৫০ মে. টন চাল ও ২ লাখ টাকা।
নীলফামারীতে ২০টি গ্রাম প্লাবিত
ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ১১ জুলাই॥ উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তা নদী বেষ্টিত নীলফামারী জেলার দশ ইউনিয়ন এবং ২০টি চর গ্রামে দেখা দিয়েছে বন্যা। বৃষ্টি ও নদীর বন্যার কারনে তিস্তা পাড়ের পরিবারগুলোর ঘরে চাল ডাল মজুদ থাকলেও তা রান্না করে খাওয়ার কোন অবস্থা না থাকায় পরিবারগুলো খাদ্যাভাব, স্বাস্থ্য সেবা এবং নানা সংকটে পড়েছে। তিস্তাপাড়ের ইউনিয়নগুলোতে অবস্থিত কমিউিনিটি ক্লিনিকগুলো প্রতিনিয়ত বন্ধ থাকছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে।
এদিকে তিস্তা অববাহিকা সহ গোটা নীলফামারী জেলায় বৃষ্টিপাত চলছিলো। গত ২৪ ঘন্টায় ডালিয়া তিস্তা অববাহিকায় ৮২ মিলিমিটার (গতকাল এখানে বৃষ্টি ছিল ১৩২ মিলিমিটার)। এ ছাড়া জেলা সদরে ৪২ মিলিমিটার, ডিমলায় ৩৫ মিলিমিটার,জলঢাকায় ২৫ মিলিমিটার, কিশোরীগঞ্জে ২০ মিলিমিটার, ডোমারে ৭০ মিলিমিটার ও সৈয়দপুরে ৪২ মিলিমিটার।
জেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি, ঝুনাগাছ চাপানি, খালিশা চাপানি, পুর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারী ও ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন টেপাখড়িবাড়ি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের মানুষরা। ক্ষতিগ্রস্ত দশ ইউনিয়নে জনসংখ্যা ৮লাখ ৫৪হাজার ৬৫৬জন। আর বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ১লাখ ৫২হাজার ৭০৬টি পরিবার।
তিস্তা ছাড়াও পানি বেড়েছে জেলার উপর দিয়ে বহমান বুড়ি তিস্তা, চারালকাটা, বুড়িখোড়া, যমুনেশ্বরী, খড়খড়িয়া, দেওনাই, খেড়ুয়া, শালকি, নাউতারা, কুমলাই, ধুম, ধাইজান, চিকলি নদীতে।
এদিকে বিকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
কাউনিয়ায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে বন্যা হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দি
সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি: প্রবল বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দি হে পড়েছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘরে দেখা গেছে উপজেলার চর গদাই, গুপিডাঙ্গা, প্রাননাথচর, চর ঢুসমারা, হয়বত খাঁ, চর গনাই, টাপুর চর, আজম খাঁ, হরিচরন শর্মা গ্রামে তিস্তা নদীর পানি ঢুকে বন্যা কবলিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। সেই সাথে বিভিন্ন ইউনিয়নের রাস্তা ঘাট ভেঙ্গেগেছে, তলিয়ে গেছে বীজতলা। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব।
তিস্তা সেতু পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও ১সেন্টি মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। টেপামধুপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান নদীর পানি বৃদ্ধিপেয়ে ইতি মেধ্যে বেশ কিছু গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে, সেই সাথে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী জানান ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রাম গুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান তিস্তা সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ১ সেন্টি মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।