আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

 width=
 
শিরোনাম: কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা       ২৯ রমজান কি অফিস খোলা?       আজ ঐতিহাসিক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস       লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ হস্তান্তর      

 width=
 

ফরহাদ মজহারকে গ্রেপ্তার করা হোক

সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭, দুপুর ১২:৫৭

প্রভাষ আমিন

ফরহাদ মজহারের দুষিত চিন্তা আর ভিন্নমতের নামে সহিংসতার উসকানি দেয়ার তীব্র বিরোধী আমি। আমি বরাবরই ফরহাদ মজহারের বিচার চেয়েছি। বিচার বহির্ভূত কোন পন্থায় তাকে শায়েস্তা করা হোক, এমনটি কখনো চাইনি, এখনও চাই না।

যে কারণে আমি বঙ্গবন্ধুর খুনী ফারুক-রশীদদের, যুদ্ধাপরাধী নিজামী-মুজাহিদদের ফাঁসি চেয়েছি; ক্রসফায়ার চাইনি। সেই একই যুক্তিতে আমি ফরহাদ মজহারের বিচার চেয়েছি, কিন্তু অপহরণে উল্লসিত হইনি। একজন মানুষ যত খারাপই হোক, আইনের সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার তার আছে। আদালতের বিচারে তার ফাঁসি হোক, জেল হোক, খালাস হোক; আপত্তি নেই।

কিন্তু বিচার বহির্ভূতভাবে কাউকে শায়েস্তা করা হোক, এটা কখনোই কাম্য নয়। সরকারের ইঙ্গিতেই কেউ না কেউ ফরহাদ মজহারকে তুলে নিয়ে গেছে, শুরুতে এমনটা বিশ্বাস করলেও; আমার সে বিশ্বাস টলে গেছে। ফরহাদ মজহারের তথাকথিত অপহরণ নাটক সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে বা দেখা গেছে; তাতে মনে করার যথেষ্ট কারণ এবং যুক্তি আছে যে তিনি স্বেচ্ছায় কাউকে না বলে ভোরে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

এখন একমাত্র ফরহাদ মজহারই পারেন, আমাকে আগের অবস্থানে অটল রাখতে। তিনি আদালতে যা বলেছেন, তার বিষয়ে অসংখ্য প্রশ্ন আছে। সেই প্রশ্নের জবাব তাকেই দিতে হবে। তিনি বিদেশী গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার দিলেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার মত সুস্থ এখনও হতে পারেননি বা সৎসাহস তার নেই।

ফরহাদ মজহার কিভাবে খুলনা গেলেন, সেটা এখনও পরিস্কার নয়। তবে খুলনায় গিয়ে তিনি কী কী করেছেন, সব প্রমাণ জোড়া দিলে তার একটা স্বচ্ছ চিত্র পাওয়া  যায়। নিছক চিত্র নয়, একে চিত্রনাট্য বলাই ভালো। নাটকীয়তা আছে, পুলিশী অভিযান আছে, পরকীয়া প্রেম আছে, মুক্তিপণের দাবি আছে।

এই চিত্রনাট্যের সিনেমা হলে তা সুপার ডুপার হিট হবে। খুলনা গিয়ে তিনি খুলনা থেকে ঢাকা ফেরার জন্য গফুর নামে টিকেট কেটেছেন, বিকাশের দোকানে গিয়ে কাউকে টাকা পাঠিয়েছেন, গ্রিল হাউজে খেয়েছেন, বাস ছাড়ার আগের সময়টুকু খুলনা নিউমার্কেটে ঘোরাফেরা করে কাটিয়েছেন, তারপর বাসে উঠে পেছনের আসনে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।

ভোরে বাসা থেকে বেরিয়ে খুলনা গেলে, সারাদিন ঘোরাঘুরি করলে যে কেউ ফিরতি বাসে উঠে ঘুমিয়ে যাওয়ার মত ক্লান্ত হতেই পারেন। আর সেই ব্যক্তি যদি ৭১ বছরের বুড়ো হন, তাহলে তো ক্লান্তির যুক্তিটা আরো পোক্ত হয়।

পুলিশ ফরহাদ মজহারের কললিস্টের সূত্র ধরে চট্টগ্রাম থেকে অর্চনা নামে ‘উবীনিগ’ এর এক সাবেক কর্মীকে ধরে এনেছে। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ফরহাদ মজহারের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।

অনেকে অবশ্য অর্চনাকে এ যুগের জজ মিয়া বলতে চাইছেন। কিন্তু ফরহাদ মজহারকে যারা চেনেন, তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যারা জানেন; তারা কিন্তু অর্চনার গল্প অবিশ্বাস করেননি। বরং অর্চনার মত আরো অনেকের নাম বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। ফরহাদ মজহার নাকি অর্চনাকে নিয়মিত টাকা দিতেন।

অপহরণের দিনও তিনি অর্চনাকে বিকাশে টাকা পাঠিয়েছেন। বাসার বাইরে থাকা ১৮ ঘণ্টা সময়ে তিনি ফরিদা আখতারের সঙ্গে যেমন ৬ বার টেলিফোনে কথা বলেছেন, অর্চনার সঙ্গেও ৬ বার কথা বলেছেন।

ফরহাদ মজহার কেন এই নাটক করলেন, এই প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব এখনও নেই। তবে বাতাসে নানা কথা। ‘উবীনিগ’ এর নাকি তার নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই শিথিল হয়ে গিয়েছিল। পর্যাপ্ত অর্থও পাচ্ছিলেন না। তাই অর্চনাদের জন্য ফরিদা আখতারের কাছ থেকে টাকা বের করতেই তিনি এই অপহরণ নাটক সাজিয়েছেন।

নইলে সরকারি বাহিনী হোক আর পেশাদার অপহরণকারীই হোক, কেউ তো অপহৃতের ফোন খোলা রেখে নিজেদের অবস্থান চিহ্নিত করার সুযোগ দেবে না। বারবার সেই ফোনে বান্ধবীদের সাথে কথা বলার সুযোগ দিতো না।

যশোরে ঢাকাগামী বাসের পেছন থেকে ধরে পুলিশ ধরে আনার পর আদালতে ফরহাদ মজহার দাবি করেছেন, তাকে অপরিচিত দুর্বৃত্তরা মাউক্রোবাসে তুলে চোখ বেঁধে তাকে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় চোখ খুলে তাকে ছেড়ে দেয়ার দাবি করলেও বিকেলেই তাকে খুলনা নিউমার্কেটে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।

খুলনা নিউমার্কেটের সিসিটিভির ফুটেজ ফরহাদ মজহারের সব আয়োজন বরবাদ করে দিল। দেশ যে ডিজিটাল হয়ে গেছে, এটা বোধহয় ভুলেই গিয়েছিলেন বা বিশ্বাস করতে চাননি ফরহাদ মজহার। উদ্ধার করে আনার পর আনার পর আদালতে ফরহাদ মজহার বলেছেন, সরকারকে বিপাকে ফেলতেই তাকে অপহরণ করা হয়েছিলেন।

আবার পুলিশের আইজিও বলছেন, সরকারকে বিপাকে ফেলতেই ফরহাদ মজহার নিজেই উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। দুজনের বক্তব্যেই সরকারকে বিপাকে ফেলার বিষয়টি কমন। তবে গত কয়েকবছর ফরহাদ মজহার বারবার সরকারকে বিপাকে ফেলতে চেয়ে আসছেন। তাই সরকার বিপাকে পড়লে তার খুশিই হওয়ার কথা।

তারপরও আমি ধরে নিচ্ছি, ফরহাদ মজহারের বক্তব্যই সত্য। তাকে কেউ না কেউ মাইক্রোবাসে খুলনা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। এখন সরকারের দায়িত্ব পুরো বিষয়টি পরিস্কার করা। কারা সরকারকে বিপাকে ফেলতে চেয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনাও সরকারেরই দায়িত্ব।

যদি পুলিশ প্রধানের বক্তব্য সত্য বলে ধরে নেই, তাহলে পুলিশের উচিত অবিলম্বে প্রতারণা করে সরকারকে বিপাকে ফেলা ও জাতিকে বিভ্রান্ত করার দায়ে ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে মামলা করা এবং তাকে গ্রেপ্তার করে পুরো সত্য উদঘাটন করা। ফোনের কললিস্ট, বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজের সাথে ফরহাদ মজহারের খুলনা যাওয়ার কাহিনীটা মিলিয়ে দেয়া।

ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অনেকের গুম হয়ে যাওয়া বা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামীর ফিরে আসা বা সালাউদ্দিনের শিলংএ যাওয়ার মত ফরহাদ মজহারের ঘটনায় যেন কোনো ধোঁয়াশা না থাকে।

ফরহাদ মজহার বহুদিন ধরেই জাতিকে বিভ্রান্ত করে আসছেন। তার বিভিন্ন সময়ের উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে অনেক আগেই তাকে গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল। এ ধরনের দুষিত চিন্তার মানুষের বাইরে থাকা বিপদজনক। তবে আবারও বলছি, ভিন্নমতকে যেন বেআইনিী ভাবে দমন করা না হয়। ব্যবস্থা যা নেয়ার তা আইনগতভাবেই নিতে হবে।

প্রভাষ আমিন : সাংবাদিক, কলাম লেখক; বার্তা প্রধান : এটিএন নিউজ। probhash2000@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied