আর্কাইভ  শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ● ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: নীলফামারীতে গোপন বৈঠক থেকে জামায়াতের ৩ নেতা গ্রেপ্তার       পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ       

 width=
 

মাদ্রাসা ছাত্রীর আত্মহত্যা, সুসাইড পত্র নিয়ে এলাকায় তোলপাড়

বুধবার, ২ আগস্ট ২০১৭, রাত ০৯:৪৩

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় শিক্ষকদের অপমান সইতে না পেরে ক্ষোপে গলায় ওড়না দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ৭ম শ্রেণী মাদ্রাসার ছাত্রী। গত সোমবার বিকেলে ময়না তদন্ত শেষে লাশ দাফন করা হলেও মাদ্রাসার কোন শিক্ষককেই সেখানে দেখা যায়নি। মঙ্গলবার সকালে ফাতেমা আক্তার নামের নিহত ওই ৭ম শ্রেণীর ছাত্রীর খাতার ভিতর থেকে পাওয়া একটি সুসাইড পত্র নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। এ ঘটনার নেপথ্যে থাকা নিজ শেখ সুন্দর দাখিল মাদ্রাসার জড়িত শিক্ষকদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানিয়েছেন ফাতেমার পরিবার। নিহত ফাতেমা নিজ শেখ সুন্দর গ্রামের বটতলা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল ওয়াহেদের ২য় কন্যা সন্তান। সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, নিজ শেখ সুন্দর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল হাই- এর পুত্র জিহাদ একই মাদ্রাসার দশম শ্রেনীর ছাত্র। ওই মাদ্রাসায় পড়ালেখার সুবাধে সপ্তম শ্রেনীর সুন্দরী ছাত্রী হিসেবে পরিচিত ফাতেমা আক্তারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে জিহাদ। এটি জানতে পেরে চটে যান জিহাদের বাবা ওই মাদ্রাসার এবতেদায়ী শাখার প্রধান আব্দুল হাই। ফলে মেয়েটিকে গালমন্দ করে মাদ্রাসার থেকে বের করে দেয়ার কথা বলেন তিনি। শুধু তাই নয়, ঘটনার দিন গত শনিবার একই মাদ্রাসার অপর শিক্ষক মিনারুল ইসলাম ওই ছাত্রীকে ডেকে এনে অপমান জনক কথা বলেন। এরই জের ধরে ফাতেমা কাঁদতে কাঁদতে বই পুস্তুক রেখে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি চলে আসেন। কিছুক্ষণ পর ওই মাদ্রাসার সুপার আব্দুর রাজ্জাক ও মিনারুল নামে দুই শিক্ষক ফাতেমার বাড়িতে আসেন। পরে তারা এসে বাড়িতে ফাতেমাকে না পেয়ে আবার মাদ্রাসায় ফিরে আসার পথে ফাতেমাকে প্রতিষ্ঠানের আসতে দেখেন। কিন্তু এরই ফাঁকে যে ফাতেমা নিজের খাতায় একটি সুসাইড পত্র লিখে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে তা প্রায় সকলেরই অজনা। পরে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। সোমবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে ফাতেমার লাশ দাফন করা হয়। আর মঙ্গলবার পাওয়া ফাতেমার সুসাইড নোট নিয়ে এলাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আদরের মেয়েকে হারিয়ে প্রায় নির্বাক হয়েছেন ফাতেমার মা বুলবুলী বেগম। আর বাবা আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘আমার মেয়ে ছোট মানুষ। তাই সে ভুল করতেই পারে। তাই বলে তাকে সবার সামনে অপমান করে বের দেয়ার ঘোষণা হয়তো মানতে পারেনি ফাতেমা। ফলে জীবন দিয়ে সে এমন ঘটনার প্রতিবাদ জানালেও আমি এর বিচার চাই- বলতে বলতে চোখের পানি ঝড় ঝড় করে ছেড়ে দিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন বাবা আব্দুল ওয়াহেদ। ওই ছাত্রীর বড় বোন রুপালী বলেন, ফাতেমার লেখা সুসাইড নোট দেখে স্পষ্ট প্রমান হয় যে, মাদরাসার শিক্ষকরা শুধু তাকে প্রচন্ড রকম অপমান আর অপদস্ত করে মাদরাসা থেকে বের করে দিতে চেয়েছিল। আর তাই ফাতেমা শিক্ষকদের এমন আচরণ সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা পদ বেঁচে নিয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছেও বলে জানান তিনি। এদিকে ফাতেমাকে দাফনের আগে নিয়ামানুয়ায়ী গোসল করাতে যাওয়া কয়েকজন মহিলার মধ্যে জরিনা খাতুন জানিয়েছেন, লাশের দুই উরুতে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন তারা। এদিকে সোমবার বিকেলে ফাতেমার জানাযা ও লাশ দাফনের সময় মাদরাসার কোন শিক্ষককেই দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন পরিবার ও স্থানীয়রা। জানতে চাইলে নিজ শেখ সুন্দর দাখিল মাদরাসা শিক্ষক আব্দুল হাই দাবি করেন বলেন, ‘আমি ওই ছাত্রীকে চিনি না। মাদরাসার এবতেদায়ী প্রধান হওয়ার সুবাধে আমি তার ক্লাসও নেই না। তবে ফাতেমাকে মাদরাসার  সুপার টিসি (বাধ্যতা মুলক ছাড়পত্র) দিতে চেয়েছিল বলে তিনি স্বীকার করলেও অপর শিক্ষক মিনারুল ইসলামের মারধরের বিষয়টি তিনি জানেন না বলে দাবি করেন আব্দুল হাই নামে ওই মাদরাসা শিক্ষক। অন্যদিকে নিজ শেখ সুন্দর দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ফতেমা খুব ভালো মেয়ে । তাই তাকে টিসি ( বাধ্যতামুলক ছাড়পত্র) দেয়ার মত কোন ঘটনাও ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি। এবং তিনি আরও জানান, আমার অজান্তে কোন শিক্ষক বা শিক্ষিকা যদি ফাতেমাকে নির্যাতন করে থাকে তাহলে ্ওই শিক্ষক/শিক্ষির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি সুসাইড পত্রটি দেখে ন্বীকার করেন বলেন এটি তারই নিজ হাতের লেখা। আর পরিবার থেকে না জানানোর কারণে তিনি জানাযা অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি বলে স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাতীবান্ধা থানার ওসি রেজাউল করিম বলেন, এনিয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে সুসাইড নোট পাওয়া গেলে- তা আত্মহত্যার কারণ হিসেবে মেয়ের পরিবার আদালতে মামলা করতে পারেন। ফাতেমা আক্তারের নিজ হাতে লেখা সুসাউড পত্রটির হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘প্রথমে আমার সালাম নিবেন। আমি এই কারণের জন্য সবাই ভালো থাকবেন। আমি কোনোদিন ভাবিনী এই বাজে কাজ করবো। কিন্তু পরিস্থিতি আজ আমাকে এই পথে আনতে বাধ্য করল। আমি কোনদিন কাউকে কিছু ফাসাইনি, আমাকে দিয়ে করানো হয়েছিল। জিহাদের সাথে সম্পর্ক আমাকে ওর মানুষ দিয়েই করিয়েছিল। আর আমি কোনো অন্যায় করিনি। যা এইসবের জন্য হল। আমি অনেকবার বলেছি, কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেনি। আমি কী এতোই খারাপ হয়েছিলাম যে আজ আমাকে এই পথে জীবন দিয়ে তার মাসুল দিতে হল। আমার আব্বু এতো পরিশ্রম করে আমাকে লেখাপড়া করিয়েছিল তার বিনিময়ে আমি তাকে এই শিক্ষা দিলাম, শুধুমাত্র ১টা ভুলের কারণে। কী করবো কোনো পথ ছিল না। আমার মতো যেন আর কেউকে এই রকম ভাবে না কওে কেউ। অনুরোধ করে আমার স্যার ম্যাডাম সবাইয়ের কাছে অপমান হলাম। আমার আব্বুকে আর কেউ যেন মাথাটা হেট না করে। আব্বু তোমার কাছে একটাই অনুরোধ। তুমি আমার ভাইয়ের সাথে এরকম কখনো হতে দিয়না। আমাকে ক্ষমা করবে। সবাই আমাকে ক্ষমা করবেন যদি ভুল করে থাকি। আব্বু তোমাকে আর কষ্ট দিতে চাই না।

মন্তব্য করুন


 

Link copied