আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

ফলোআপ-অন্তঃসত্বা গৃহবধুকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়ের

সোমবার, ৭ আগস্ট ২০১৭, রাত ০৮:০৪

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর কোলনঝাড় গ্রামে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধু শেফালী বেগমকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় গতকাল রবিবার (৬ আগষ্ট) গভীর রাতে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে (মামলা নম্বর ০৬/১৭)। মামলার বাদী করা হয়েছে নির্যাতনের শিকার শেফালীর মামা সহিদুল ইসলাম। মামলার ১৯ জন নামীয় ও অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন রয়েছে। আসামীদের মধ্যে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে । গ্রেফতারকৃতদের আজ সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন রফিকুল ইসলাম, অপিয়া বেগম ও গ্রাম পুলিশ রশিদুল ইসলাম। নির্যাতনের শিকার শেফালি চিকিৎসা নিচ্ছেন রংপুর চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে। এদিকে ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে নিয়ে তদন্ত করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা। সেদিনের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী নির্যাতীত শেফালি বেগমের ছোট বোন শিউলি আক্তার মুন বলেন, যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবার কথা নয়। গাছে বেধে লাত্থি, ঘুষি, কিল মারা হলো। স্থানীয় আ’লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের ওরফে নারিয়া কাদেরও অকথ্য ভাবে নির্যাতন চালান আমার বোনের উপর। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সেলিমুর রহমান জানান, ঘটনাস্থলে কেউ এগিয়ে আসেনি শেফালীকে বাঁচানোর জন্য। সকাল ১০টা হতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গাছে বেঁধে রাখা হয়েছিলো শেফালীকে। পুলিশ আসার আগে গাছ থেকে দড়ি খুলে দেয়া হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তামজিদার রহমান, ইউনিয়নের শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক শিমুল ইসলাম, সদ্য বিএনপি হতে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী মোসলেম উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ও সামছুলের ছেলে বিএনপি কর্মী মজনুর রহমান মঞ্জু। তারা শেফালীকে গরু চুরির ঘটনা সাজিয়ে পুলিশকে ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। সুত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার স্বামী রফিকুলের সাথে ছোট বোন আকলিমার ঝগড়া হলে শেফালির বাড়িতে আসে আকলিমা। পরদিন(শুক্রবার) সকালে তিনজন মিলে আকলিমাকে রাখতে গেলে রফিকুলের বাড়িতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হন শেফালি। একপর্যায়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলে পথিমধ্যে রফিকুলের মামা দবির উদ্দিনের উঠানে মিমাংসার জন্য বসলে সেখানে রফিকুল ও তার মা অপিয়া বেগম নির্যাতন শুরু করেন। একপর্যায়ে গাছে বেধে রেখে নির্যাতন চালানো হয় বিকেল পর্যন্ত অন্তসত্বা শেফালিকে। প্রথমে জলঢাকা হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও অবস্থার সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে স্থানান্তরিত করা হয় রংপুর চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে। ভয় আর হুমকীর কারণে মামলা করতে না পারলেও রবিবার রাতে ভাই সহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন ডিমলা থানায়। এদিকে নির্যাতনের ঘটনার সাথে জড়িত নন বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল কাদের। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। তবে সেখানে ছিলেন তিনি বলে জানিয়েছেন। খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের কোজার পাড়ার ওই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, আমি সে সময় ছিলাম না। নির্যাতনের চিত্রটি খুবই খারাপ হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। তবে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের শাস্তি দাবী করেন আতাউর রহমান। আজ সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এলাকার মানুষদের আড়ালের চিত্র। কেউ সহসা মুখ না খুললেও নির্যাতন করা হয়েছে এটি বলতে পারছেন অনেকে। তবে কারা নির্যাতন করেছে সেটি জেনেও যেন না জানার ভান করছেন স্থানীয়রা। নির্যাতনের শিকার শেফালির খালা নাজমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ওমরা হামাক ভয়ভীতি দেখায় ছে, কিছুই বলে হইবে না। পুলিশ বলে কিছুই করিবার পাইবে ওমার। হামরা এ্যালা কি করিমো। দ্যাশোত কি আইন নাই? প্রশ্ন তুলেন নাজমা খাতুন। এদিকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনাটি কোনভাবে করা ঠিক হয়নি মন্তব্য করে নীলফামারী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান । তিনি বলেন জানান, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। মামলা নেওয়া হয়েছে। তিনজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। যারাই জড়িত থাকুন না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান। এদিকে এই মামলায় খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তামজিদার রহমান, ইউনিয়নের শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক শিমুল ইসলাম, সদ্য বিএনপি হতে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী মোসলেম উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ও সামছুলের ছেলে বিএনপি কর্মী মজনুর রহমান মঞ্জুকে আসামী না করায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেফালী বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। শেফালী আরো জানায় আমি জানতে পেরেছি ডিমলা থানার ওসি ওদের নাম বাদ দিয়ে উল্টো খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তামজিদার রহমানকে মামলার এক নম্বর সাক্ষি করেছে। মামলার বাদী শেফালীর সহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি জানান, ঘটনার দিন আমি সকালে গ্রামের বাহিরে ছিলাম। আমাকে খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তামজিদার রহমান মোবাইলে ডেকে আনে ঘটনাস্থলে। সেখানে আমার ভাগনিকে গাছে বেধে নির্যাতন করা হচ্ছিল সেখানে মাটিতে শেফালী পড়ে ছিল। আমার হাতে শেফালীকে তারা তুলে দিয়ে চিকিৎসা করতে বলে। কিন্তু আমি ওই অবস্থায় আমার ভাগনিকে আমরা জিম্মায় নেইনি। আমি তাদের বলেছি তোমরা চিকিৎসা করে ওকে সুস্থ্য করে দিলে আমি নিবো। এরপর আমি ঘটনাস্থল হতে চলে আসি। খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তামজিদার রহমানকে মামলার সাক্ষি করার বিষয়ে তিনি বলেন ওই নেতাইতো আমাকে মোবাইলে ডেকে আনে ঘটনাস্থলে। তিনি সব জানেন তাই তাকে সাক্ষি করেছি। এদিকে শেফালীর মামা মামলার বাদী সহিদুল ইসলামের দায়েরকৃত মামলায় ক্রমিকনুসারে আসামীদের নামের তালিকায় দেখা যায় খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর কোলনঝাড় গ্রামের দেবারু মামুদের দুই ছেলে অপিয়ার রহমান (২৩) ও রফিকুল ইসলাম (৪২), দবির উদ্দিনের তিন ছেলে আলী হোসেন (৩৫), আবু বক্কর সিদ্দিক (৩০) ও মনোয়ার হোসেন (২৮), মৃত. আলাপু মামুদের দুই ছেলে দবির উদ্দিন (৫৫) ও আহেদুল ইসলাম (৩৮), হামিদুর রহমানের ছেলে আতাউল রহমান (১৯), আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী তহমিনা বেগম (২৩), আলী হোসেনের স্ত্রী রূপালী বেগম (২৮), মনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মনছুরা বেগম (২৪), অপিয়ার রহমানের স্ত্রী তুলি বেগম (২১), হামিদুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৪০), মাহাবুর রহমানের স্ত্রী সুলতানা বেগম (২৪), দেবারু মামুদের স্ত্রী অপিয়া বেগম (৬০), মৃত. খটেয়া মামুদের ছেলে খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের (৬০), মৃত. আবুল হোসেনের ছেলে ওই ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ রশিদুল ইসলাম (৪০), সফিয়ার রহমানের স্ত্রী রাজিয়া বেগম (২৭) ও দবির উদ্দিনের স্ত্রী খালিকুন বেগম (৫০) সহ ৪/৫ জন অজ্ঞাত। উল্লেখ যে, একটি পারিবারিক ঘটনাকে পুঁজি করে এলাকার কিছু প্রভাবশালী মহল শেফালীকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে গত শুক্রবার গ্রামে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেছিল। পুলিশ গিয়ে শেফালীকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেয়। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত খবর উত্তরাবাংলা ডটকম সহ বিভিন্ন অনলাইন ও দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ পায়। উল্লেখ যে, উক্ত গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত এক বিবাদে শেফালীর বাবা মবিয়ার রহমানকে ২০১২ সালের ২৯ জুলাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে প্রতিপক্ষরা হত্যা করেছিল। মামলায় এলাকার ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পুলিশ চার্জশীট প্রদান করেন। মামলাটি বর্তমানে নীলফামারী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ২২ আগষ্ট হত্যার মামলা সাক্ষ্য রয়েছে। প্রভাবশালীরা ওই মামলা মিমাংসার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। তারা পিতার হত্যা মামলা আপোষ না করায় প্রতিপক্ষরা সম্প্রতি ডিমলা থানায় একটি মিথ্যা মামলা করেছে । ফলে শেফালীর একমাত্র ভাই রমজান পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এলাকায় কোন ঘটনা ঘটলেই শেফালী ও তার ভাইয়ের উপর নির্যাতনে খড়ক নেমে আসে। শেফালী ওই গ্রামের লালন মিয়ার স্ত্রী। তার স্বামী ঢাকায় রিক্সাচালায়।

মন্তব্য করুন


 

Link copied