সংবাদ প্রকাশের পর গত শনিবার এ প্রতিবেদক ঘটনাস্থল উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের দূর্গম চর পূর্ব বালাডোবা গ্রামে প্রসুতি আনোয়ারার বাড়িতে যান। সেখানে তার বাবা চাঁন মিয়ার সাথে কথা হয়। তিনি জানান, বন্যা শুরু হওয়ার আগে তার মেয়ে সন্তান প্রসবের জন্য স্বামীর বাড়ি পার্বতীপুর থেকে এখানে আসেন। গত ৯ আগস্ট তার মেয়ের প্রসব বেদনা শুরু হয়। এ অবস্থায় নদীর পানি বাড়তে থাকে। তিনি নৌকা নিয়ে এলাকার এক ধাত্রীকে নিয়ে আসেন। এরপর রাতে ঘরের ভিতরের উঁচু চোকিতে সন্তান প্রসব করান। এ সময় বন্যার অবনতি হলে পানি আরো বাড়তে থাকায় পরিবারের লোকজন তখন নবজাতকসহ নৌকায় আশ্রয় নেন।
আনোয়ারা জানান, তিনি কখনই অভুক্ত ছিলেন না। দুই বেলা ভাত খেয়েছেন আলুর তরকারি দিয়ে। চুলায় আগুন জ্বালানোর সমস্যা থাকার কারনে কখনও এক বেলা রেঁধে দু’বেলা খেয়েছেন।
এই পরিবারটি মৎসজীবি হলেও তাদের বাড়িতে দেখা যায়, একটি বিশাল আকারের ষাঁড়, যার আনুমানিক মূল্য হবে ৭০/৮০ হাজার টাকা। এছাড়াও ৪ টি ভেড়া ও ১০/১২ টি হাঁস মুরগী রয়েছে। ২টি টিনের ঘর ও একটি ছনের ছাউনি ঘর রয়েছে। তাদের ঘরে সোলার প্যানেলও রয়েছে।
এদিকে এই সংবাদটি যে পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, সেই পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধিরাও জানেন না এ খবরটির সত্যতা প্রসঙ্গে। তারা এই সংবাদটি পাঠাননি বলে স্থানীয় উলিপুর প্রতিনিধি জানান।
অদ্ভুত কাল্পনিক এই সংবাদকে ঘিরে স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কুড়িগ্রাম ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আমজাদ হোসেন তালুকদার। তিনি বলেন, ‘জেলা বিএনপির সভাপতি, সেক্টর কমান্ডার ফোরাম ঘোষিত যুদ্ধাপরাধী কাশেম মিয়ার পুত্র তাসভীর উল ইসলাম এই সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়ার জন্য ওই মহিলাকে তার উলিপুরস্থ বাড়িতে স্থাপিত পার্টি অফিসে এনে মিডিয়া কর্মিদের নিয়ে ত্রাণ দেয়ার নামে ফটো সেশন করেন।
এলাকার দূর্গম চরাঞ্চলে ত্রাণ না দিয়ে ওই মহিলাকে কয়েক হাজার টাকা ও উপহার সামগ্রী দেয়ার ঘটনা রাজনৈতিকভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দেয়ার চেষ্টা বলে অভিযোগ করেছেন, উলিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মতি শিউলী, সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন মন্টু ও পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সরকার।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই প্রসুতি মহিলাসহ পরিবারে কেউ অভুক্ত ছিলেন না। তিনি সরেজমিন ঘটনাস্থল গিয়ে ওই সংবাদের কোনো সত্যতা পান নি। এছাড়াও প্রসবের আগে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে বললেও ভর্তি হন নাই বলে জানান।
আওয়ামীলীগ নেতারা অভিযোগ করেন, উলিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হায়দার আলী মিঞা ও উলিপুর পৌর মেয়র তারিক আবুল আলা সরকারি গাড়িতে বিএনপি’র ব্যানার লাগিয়ে দলীয় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সরকারী গাড়ী ও তেল পুড়িয়ে বিএনপি’র ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করলেও প্রশাসন নির্বিকার ভূমিকা পালন করছেন। সরকারী গাড়ী ব্যবহার প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি।