সম্প্রতি দেশের রাজনীতিতে যখন আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে, ঠিক তখন আকস্মিক ভারত সফর করে দেশে ফিরেই এককভাবে নির্বাচনের জোরালো ঘোষণা দিয়েছেন এরশাদ। আগের মতো সকালে এক কথা আর বিকেলে আরেক কথা বলাও অনেকটা কমিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধেও কড়া কথা বলছেন একের পর এক। ছেড়ে কথা বলছেন না বিএনপিকেও। গতকাল নীলফামারি জেলার সৈয়দপুরে ত্রাণ বিতরণকালে এরশাদ বলেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোনো দলকেই জনগণ ক্ষমতায় দেখতে চায় না। কিন্তু ভারত সফরে হঠাৎ কি শক্তি সঞ্চয় করেছেন-তা গোপনই রাখছেন।
জানা যায়, ঘরোয়াভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার বিষয়ে বিভিন্ন দিক-নিদের্শনা দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। মহাজোট থেকে বের হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত বলে জানান দলীয় এক সংসদ সদস্য। যেকোন সময়ই তারা জোট থেকে বের হয়ে কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকায় আসবে।
এদিকে, ৫৮ দলীয় জোট গঠন করেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ জোট জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে জোট গঠনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে সম্প্রতি দেশের মানুষ পরিবর্তন চায় উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টিই পারে ক্ষমতায় গিয়ে লুটপাট, দুঃশাসন থেকে দেশবাসীকে মুক্তি দিতে।
এইচ এম এরশাদ আরো বলেন, আমাদের জোটকে আরো বড় করতে পারতাম। অনেকেই ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিল। কিন্তু সরকার মনে করল, আমাদের দল শক্তিশালী হলে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তাই বাধা দিয়েছে। বন্যার পানিকে কি বাধা দিতে পারে? জনগণ চাচ্ছে মুক্তির সংগ্রাম। জনগণ দেখছে মুক্তির স্বপ্ন। জনগণ বুঝতে পারছে, মুক্তির স্বপ্ন দেখাতে পারে একমাত্র জাতীয় জোট। বাংলাদেশ জাতীয় জোট। তাই কোনো বাধা আমাদের সামনে বাধা নয়। দলটির তৃণমূলে এরশাদের ঘোষণা স্বাগত জানিয়ে এককভাবে নির্বাচনের প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন একাদশের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মন্ত্রিপরিষদে থেকে বিরোধী দলের ভূমিকা রাখতে পারেনি জাতীয় পার্টি।তাই পার্টির চেয়ারম্যান বরাবরই মন্ত্রিসভা থেকে বের হওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অদৃশ্য কোন কারণে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বের হতে পারছে না পার্টি তা জানা নেই। তবে আগামী একাদশ নির্বাচন জাতীয় পার্টি এককভাবে করবে বলেই জানান।
সূত্র বলছে, সরকারে থাকলেও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। বিভিন্নভাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কাছে জিম্মি হতে হয়েছে তাদের। এ ধরনের নানা ইস্যুতে আগামীতে এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটির নেতাকর্মীরা। ভারত থেকে সবুজ সংকেত নিয়ে এসেছে বলে অনেক নেতাকর্মীর ধারণা থাকলেও দায়িত্বশীল কোন নেতাই এ ব্যাপারে মুখ খুলছে না। সবুজবাগ থানা জাতীয় পার্টির আলমগীর হোসেন নামে এক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি দেশকে তেমন কিছুই দিতে পারেনি। সন্ত্রাস-দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিকল্প নেই। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাদেশিক বিষয়ক সম্পাদক ও বগুড়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো.নুরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, বিদেশি কারো হস্তক্ষেপে আমাদের দেশের নির্বাচন হবে না। কারো হস্তক্ষেপও আমরা মেনে নেব না।
নুরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, আমরা এককভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত পার্টির চেয়ারম্যানই নেবেন। রাজনীতির মাঠে শেষ বলতে কোনো কথা নেই। সময়ের প্রয়োজনে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। তবে জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী বলেও দাবি করেন তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আরো শক্ত অবস্থানে থাকবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জনগণ চায় জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করুক। জাতীয় পার্টি জনগণের জন্য রাজনীতি করে দাবি করে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি পারে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ উপহার দিতে।