আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ● ৫ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল       সার্ভার ডাউন: রসিকে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে ভোগান্তি চরমে       রংপুরে ফটোসাংবাদিক ফিরোজ চৌধুরীর একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী       ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নির্বাচনে ৩৫ জনের প্রার্থীতা বৈধ ॥ চেয়ারম্যান পদে ১২ জনের মধ্যে আওয়ামীলীগের ৭ জন প্রার্থী       নীলফামারীতে ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস পালন      

 width=
 

প্লিজ ! ত্রাণ নিয়ে ফটোসেশন থামান।

বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০১৭, বিকাল ০৫:৩৩

মহিউদ্দিন মখদুমী

বন্যাকবলিত নদী ভাঙ্গা এলাকার মানুষকে সরকারের পাশাপাশি বে-সরকারী ভাবে বিভিন্ন সংগঠন,ব্যক্তি ত্রাণ দিচ্ছেন। বেশ ভালো কথা। ত্রাণ দিন। এটি মানবিক দায়িত্ব। কিন্তু বন্যায় ও নদী ভাঙনে সব হারানো মানুষদের কাছে এই এক চিমটি ত্রাণ কতটুকু আশা জাগাতে পারবে? কতটুকু? বিকেটাকে হাতের তালুতে নিয়ে পরিমাপ করুন তো? বাংলাদেশের নদীর সংখ্যা ২৩০ টি। আন্তঃসীমান্ত নদী এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবাহিত শাখা প্রশাখাসহ প্রায় ৮শত নদ নদী বিপুল জলরাশি নিয়ে ২৪,১৪০ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এদের মধ্যে বড় নদী হলো পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলি, শীতলক্ষ্যা, গোমতী,সুরমা,সাঙু, রূপসা, করতোয়া, মাথাভাঙ্গা, মাতামুহুরি, ভৈরব, বুড়িগঙ্গা , বংশী, ফেনী-ডাকাতিয়া, পুনর্ভবা , নবগঙ্গা, ধলেশ্বরী, তিস্তা, চিত্রা, ঘাঘট, গড়াই-মধুমতি,কুশিয়ারা, কুমার , কীর্তনখোলা , কর্ণফুলী , আত্রাই,কপোতাক্ষ ,কংস, আড়িয়াল-খাঁ। সব নদী ভাঙছে এবার। হ্যাঁ আপনি আপনার এলাকায় ত্রাণ দিচ্ছেন। কিন্তু সকলকে দিতে পারছেন কি? না। কিছু দুঃখী মানুষকে দিচ্ছেন। তাও অপ্রতুল্য। এখানে আপনার আতœপরিতৃপ্তির কিছু আছে কি? থাকবার কথা নয়।

বানের পানি নেমে গেছে কিন্তু ভাঙছে তিস্তা নদী। এক সপ্তাহ আগে নিজের বাড়ী হারিয়ে নদী পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন রেবেকা খাতুন। তিস্তার পাড়ে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি হাত দিয়ে দেখালেন, ওই যে দুরে যেখানে জল ঘুরপাক খাচ্ছে, সেখানেই ছিল আমার বাড়ী, আমার সংসার। বাঁশঝাড়,গাছপালা, গোয়ালঘর ছিল, কিন্তু এখন আর তার কিছুই নেই। এখন কোথায় থাকবেন?এমন প্রশ্ন করা হলে ফ্যাল ফ্যাল করে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। পরে জানায় কারো জমি ভাড়া নিয়ে বাড়ী-ঘর তুলতে হবে। নতুন করে তা করতে গেলে অনেক টাকার দরকার।

তিস্তা পাড়ের কামরুজ্জামান তিস্তার বুকে হাত ইশারা করে বলেন, 'ওই যে ওইখানে আমার বাড়ি ছিল। চল্লিশ বছর আগে বাড়িটি করেছিলাম। কিন্তু এখন আর তার কিছুই নেই। সব তিস্তা নদী নিয়ে গেছে। আমরা চাল ডাল চাই না, নদীভাঙ্গন ঠেকাবার ব্যবস্থা করি লেখালেখি করেন বাপ। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

কে ঠেকাবে নদী ভাঙন? কে দেবে নদী ভাঙ্গা মানুষদের স্থায়ী সমাধান? সব নদীর তীর রক্ষা করা বিশাল কাজ। এটি চাইলেও কি সম্ভব? বাংলাদেশে প্রতিবছরই বিস্তীর্ণ এলাকার ৬ হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়। আর ঘরবাড়ি, ফসলের জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে অসংখ্য মানুষ।যদি ত্রাণ দিতে নদী পাড়ে গিয়ে থাকেন তবে হিসেব করুন, ফি-বছর কত পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়? কতো পরিবার নদীর কারণে ভিটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়? ঢাকার কিংবা যে কোন শহরের বস্তিতে কতো নদী ভাঙনের শিকার পরিবারের সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছে? নদীভাঙনের ফলে স্থানচ্যুতির ঘটনায় কতোটি পরিবারই পথে বসে গেছে? নদীতে ঘরবাড়ী ভেসে যাওয়ার দৃশ্য দেখে একজন আবেদ আলী আজ কতোটা অসহায়? অথবা সদ্য রোপন করা আমন ক্ষেত বানের পানিতে পঁচে যাওয়ায় কেমন আছেন কৃষক? বেকার যুবক জমির মিয়ার ব্যাংক লোনের টাকায় লিজ নেয়া পুকুরের স্বপ্নের মাছ গুলো বানের পানিতে ভেসে যাওয়ায় কেমন আছে সে? আপনার ৫কেজি কিংবা ১০ কেজি চালের মূল্য তাদের কাছে কতটুকু মূল্যবান? কয় বেলা পেট পুরে খেতে পারবে? খেতে পারলেও তাদের ভবিষ্যৎ কোন আলোয় দেখা দেবে? এই সব ভাবতে ভাবতে আপনি যদি ত্রাণ কাজে লেগে যান। তবে মানবিক একটি বোধ আপনাকে পিঁড়া দেবে। যে কারণে সেলফি কিংবা ফটোসেশন আপনাকে টানবে না। নদী ভাঙ্গা মানুষদের দুঃখ যদি আপনাকে আঁচড় কাটতে না পারে। স্মার্ট ফোনে হলেও আপনি সেলফি কিংবা ফটোসেশন করবেনই। এবার আপনাকে অনুরোধ করার পালা। প্লিজ! ত্রান নিয়ে ফটোসেশন থামান। বন্যা কবলিত। নদী ভাঙনের শিকার পরিবার গুলোর দুঃখের সাথে সমব্যথি হোন। নিজের নয়। তাদের দুঃখভরা দৃশ্যপট গুলো শেয়ার করুন। তাদের হতাশা, কষ্ট, কান্না, যা ছিল, যা আছে তার কথা লিখুন, ফটো তুলুন। ছড়িয়ে দিন। ষ্টাটাস দিন “দেখে এলাম তিস্তা পাড়ের মানুষের দুঃখ”। অথবা যে বন্ধুটি আপনার সাথে ছিল না, তাকে বলুন শোনা কষ্টের কথা গুলো। পরিবারের সদস্যদের কাছে বলুন। মিলিয়ে নিন। তিস্তা পাড়ের মানুষদের চেয়ে কতোটা স্বাচ্ছন্দে আছেন আপনারা। এবার যদি আপনার বোধিসত্তা জেগে না উঠে তবে চরমব্যর্থ হবে আমার বাংলাদেশ ও আমি। কারণ ৪৬ বছরের বাংলাদেশ ও ৩৬ বছরের আমি সুখ দুঃখের এপিট ওপিট।

লেখক-সাংবাদিক দৈনিক মানবকন্ঠ,রংপুর অফিস।

মন্তব্য করুন


 

Link copied