আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

বিতর্কিত নোবেলের তালিকায় শেখ হাসিনাকে চাই না

বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, দুপুর ১০:৫১

লীনা পারভীন

আলফ্রেড নোবেল ছিলেন একজন কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ার। তাই পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে পুরস্কারের বিষয়টা একদম পরিস্কার। তবে তিনি তার উইলে কেন বিজ্ঞানের এতসব শাখার পাশাপাশি শান্তিতেও নোবেলের ইচ্ছা ব্যক্ত করে গেছেন সে সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা কারও কাছে নেই। মূলত মানব সভ্যতার বিকাশে এবং মানবতা প্রতিষ্ঠার জন্য যারা তাঁদের সৃষ্ট কর্মের মাধ্যমে অবদান রাখবেন এমন লোকদেরকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি ছিলো নোবেলের আসল উদ্দেশ্য।

যেহেতু তিনি শান্তিতে নোবেল দেবার বিষয়টি নিয়ে খুব একটা পরিস্কার কিছু দিক নির্দেশনা দিয়ে যাননি তাই নোবেল কমিটি বরাবরই এই পুরস্কারটি দিয়ে থাকেন তাদের নিজেদের বুঝ অনুযায়ী। তবে মজার বিষয় হচ্ছে এ পর্যন্ত যতজনকে এই শান্তিতে নোবেল দেয়া হয়েছে তার প্রায় বেশীরভাগ পুরস্কারকেই বলা হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতিটা না হলেও বেশীরভাগ পুরস্কারই কোন না কোনভাবে বিতর্কিত হয়েছে।

পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকাটা দেখলেই এর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় বৈকি। একমাত্র এই ক্যাটাগরির পুরস্কারটিতেই নির্বাচন করা হয় সম্পূর্ণ আবেদন এবং কমিটির নিজস্ব বিবেচনার প্রেক্ষিতে। অনেকেই এই ‘আনকোয়ান্টিফায়েবল’ কনটেম্পোরারী মতামতের ভিত্তিতে দেয়া পুরস্কারের বিবেচনাকে অযৌক্তিক এবং অনৈতিকও বলে থাকেন। এখানে যে কাজকে স্বীকৃতি দেয়া হয় তা অত্যন্ত সাময়িক সময়ের ফলাফলের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয় যার কোন সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিশ্ব মানবতার দুনিয়ায় নাও স্থায়ী হতে পারে।

সম্প্রতি সু চি’র নোবেল বাতিলের দাবির প্রেক্ষিতে নোবেল কমিটির ব্যাখ্যা স্মরণীয়। তারা সু চি’কে নোবেল দিয়েছিলো সে সময়ের অর্থাৎ, সে বছরের বিবেচনায়। আজকের সু চি’র কর্মকাণ্ড যতই অমানবিক হোক না কেন তারা সেটাকে বিবেচনায় আনতে রাজি নয়। ধিক্কার জানাই এই বিবেচনাকে।

যেহেতু এই বিশেষ বিভাগের পুরস্কারটি সম্পূর্ণত কমিটির সদস্যদের বিবেচনার উপর ভিত্তি করে নির্বাচন করা হয়। সুতরাং এখানে ব্যক্তিগত প্রভাবের বা বিশেষ বিবেচনার এক ধরণের প্রভাব থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়। কমিটির সদস্য নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। আলফ্রেড নোবেলের ভাই সহ অনেকেই শান্তিতে নোবেল নির্বাচন কমিটির সমালোচনা করেছেন এবং কেউ কেউ নোবেল পুরস্কারকে নরওয়ের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ভিত্তিকে শক্ত করার এক উপায় হিসাবেও আখ্যা দিয়েছেন।

খুব বেশী দূরে যেতে হবে না। সমসাময়িক কয়েকজনের এই শান্তিতে নোবেল পাবার কাহিনী দেখলেই এসব বিতর্কের ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়। মিখাইল গর্বাচেভ, শিমন পেরেজ, হেনরী কিসিঞ্জার, আল গোর, জিমি কার্টার, বারাক ওবামা, ড. ইউনূস, অং সান সু চি’র মত ব্যক্তিদের নোবেল প্রাপ্তি নিয়ে যে পরিমাণ তর্ক বিতর্ক চলছে সেটাই যথেষ্ট আমাদেরকে অনুমান করতে কাদেরকে এবং কোন বিবেচনায় শান্তিতে নোবেল দেয়া হয় এবং হচ্ছে। জানা যায় কিসিঞ্জারকে নোবেল দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সেই কমিটির দু’জন সদস্য পদত্যাগ পর্যন্ত করেছিলেন।

খুব সরল বিবেচনায় গেলেও বলা যায় যে শান্তির ক্ষেত্রে যাদেরকে বিবেচনা করা হচ্ছে তাদের অবদান বিশ্ব মানবতার কোন উন্নতিতে লাগছে সে সম্পর্কে কেউই পরিস্কার নয়। যে যেই নীতির জন্য স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তাদের ক্ষমতাকাল শেষ হবার সাথে সাথেই সেসব নীতি বর্জনের তালিকায় চলে যাচ্ছে আবার কারও কারও বিষয় আরও মারাত্মক হয়ে দেখা দিচ্ছে। বারাক ওবামার কোন নীতিই এখন আর ট্রাম্পের আমেরিকায় রাখা হচ্ছে না। কিসিঞ্জারের নামে তো ডিকশনারীতে নেতিবাচক একটি গালিও যুক্ত হয়েছে।

ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচী নিয়ে আমাদের দেশেই রয়েছে বিরাট বিতর্ক। তার এই কর্মসূচীর আওতায় কয়টি পরিবার বা কতজন মানুষের দরিদ্র অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে? কী তার অনুপাত বা জাতীয় বাজেটে তার অবদান কতটা? সরকারের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচন লক্ষ্যমাত্রায় তার অবদান কতটা বা কত অংশ? এসব প্রশ্নের নেই কোন সমাধান। তাহলে যে ব্যক্তির অবদান তার দেশের জাতীয় উন্নতিতেই স্বীকৃত নয় তেমন কাজ কেমন করে আন্তর্জাতিক মহলে নোবেলের মত স্বীকৃতি পেয়ে যায়? তাছাড়া শান্তির সাথে এর সম্পর্কই বা কতটা?

বিডি নিউজের প্রতিবেদনে জানা যায় ড. ইউনূস শেখ হাসিনার জন্য নোবেলের লবিং করতে গিয়ে শান্তি চুক্তিতে হাসিনার অবদানকে নিজের ঝুলিতে দেখিয়ে শেষে নিজেই পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছেন। কী লজ্জা!! এমন যোচ্চরের গলায় নোবেলের হার। সে একই হার কী শেখা হাসিনা চাইবেন?

সম্প্রতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরেক নোবেল শান্তি বিজয়ী মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চি’কে নিয়েও শুরু হয়েছে একই বিতর্ক। সু চি’কে নোবেল দেয়ার পিছনের যুক্তি ছিলো তিনি ক্ষমতাহীনের ক্ষমতা। অসহায়ের সহায়। দূর্বলের জন্য তিনি লড়াই করে গিয়েছেন সেদেশের সামরিক জান্তার সাথে এবং অবশেষে মানবতাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু হায়!! কোথায় আজ তার সেই টাইটেল? কোথায় তার সে ক্ষমতাহীনের জন্য ক্ষমতা হবার উদাহরণ?

সামরিক জান্তার হাতের পুতুল হয়ে আজকে তিনি মেতে উঠেছেন রক্তের হোলি খেলায়। নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে অসহায় রোহিঙ্গাদের। প্রথমে শুরু হয়েছিলো রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রীয় তালিকা থেকে নাগরিকত্ব বাদের মাধ্যমে। ধীরে ধীরে তাদেরকে সে দেশ থেকে উচ্ছেদের যে প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছিল সামরিক জান্তা সেখানে আমরা সু চি’র মত শান্তির দূতকে দেখি না কোন প্রতিবাদ করতে। বরং তিনি এই হত্যা, উচ্ছেদকে সমর্থন করে যাচ্ছেন নির্লজ্জের মত।

সারা বিশ্বে আজ উচ্চারণ হচ্ছে সু চি’র নোবেল বাতিলের দাবি। আবারও বিতর্কিত হচ্ছে শান্তি পুরস্কার, কারণ সেটা ঝুলছে সু চি’র গলায়। আবারও প্রশ্নবিদ্ধ আলফ্রেড নোবেলের মহতী উদ্দেশ্য। কী চেয়েছিলেন নোবেল আর আজ কী হচ্ছে?

এই যখন অবস্থা তখন আমাদের দেশে দাবি উঠেছে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেবার। যুক্তি অকাট্য। তিনি যে প্রকৃতই একজন নোবেলের দাবিদার সে নিয়ে কোন তর্ক হতে পারে না। কারণ আজকের শেখ হাসিনার রোহিঙ্গা সমস্যায় যে অবদান সে অবদান কখনই হারিয়ে যাবার নয় বরং অন্যদের চেয়ে অনেক বেশী জোরালো। তার এই নীতি হারিয়ে যাবার নয়।

শেখ হাসিনা যে দক্ষতায় আমাদের আরেকটি জাতীয় সমস্যা ছিলো সেই পাহাড়ে শান্তি স্থাপনের মাধ্যমে শান্তিতে নোবেলের দাবিদার তিনি আরও কয়েকবছর আগেই হয়ে উঠেছেন। আরেকবার প্রমাণ করলেন আলফ্রেড নোবেলের শান্তিতে নোবেলের যথার্থ দাবিদার এই শেখ হাসিনাই।

কিন্তু একজন বাংলাদেশী হিসাবে শেখ হাসিনার জন্য আমি এই বিতর্কিত পুরস্কারের দাবি করতে চাই না। শেখ হাসিনা সেই বাংলাদেশের প্রতিনিধি যারা চোরাগুপ্তা পথে স্বাধীন হয়নি। সরাসরি লড়াই করে নিজেদের অধিকার আদায় করেছিল পাকিস্তানী সামরিক শাসকদের হাত থেকে। এই বাংলাদেশ জানে কেমন করে মানবতাকে সবার উপরে রাখতে হয়। ছোট একটি দেশ যা মিয়ানমারের তুলনায় অর্ধেকেরও কম সে দেশের একজন নেতা হয়ে তিনি সাহস করে বলেছেন ১৭ কোটির দেশে আরও বাড়তি ৭ লাখের দায়িত্বও আমরা নিতে পারি।

কিন্তু কথা হচ্ছে পারা না পারায় নয়। বিষয়টি হচ্ছে যৌক্তিকতার, বিষয়টি হচ্ছে মানুষের অধিকারের। আর রোহিঙ্গাদের সে অধিকার প্রতিষ্ঠায়ও তিনি লড়ে যাবেন। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। বঙ্গবন্ধু যেমন ক্ষমতার লোভে দেশকে স্বাধীন করতে যাননি তার কন্যাও তেমন কোন পুরস্কারের লোভে মানবতার সেবায় নামেননি। তাই শেখ হাসিনার জন্য এ বিতর্কিত পুরস্কারের দাবি হবে তাকে খাটো করার শামিল। তার মহান অবদানকে বিতর্কিত পুরস্কারের তালিকায় তুলে দেয়া।

তাই একজন গর্বিত বাংলাদেশী হিসাবে, জাতির পিতার উত্তরসূরী হিসাবে এবং একজন অহংকারী বাংলাদেশী হিসাবে আমি চাই শেখ হাসিনাকে নোবেল কমিটির স্বার্থের কাছে বিক্রি করাটা কখনোই সুবিবেচনাপ্রসূত হবে না। বরং নোবেল কমিটি যদি তাকে আগামীতে এই পুরস্কারের জন্য ঘোষণাও করে তাহলেও আমার চাওয়া হবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে এর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে যাবেন যাতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমার মত নোবেলের ইতিহাস ঘাঁটতে গয়ে বিতর্কের মাঝে শেখ হাসিনার নামটি দেখেও সন্দেহ না করে।

লিখতে গিয়ে আমার মত বিদ্রুপের বাণী না ছুড়ে দেয়। মানবতার লড়াইয়ে তিনি হবেন বিশ্বের সকল নিপীড়িতের জন্য সহায়ক এক বিশ্ব নেতা। শেখ হাসিনার নাম লেখা থাকবে সত্যিকারের ‘Power of the powerless’ হিসাবে জনমানুষের হৃদয়ে, এই হোক আমাদের কাম্য।

লেখক: কলাম লেখক ও সাবেক ছাত্রনেতা।

মন্তব্য করুন


 

Link copied