আর্কাইভ  শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ● ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: নীলফামারীতে গোপন বৈঠক থেকে জামায়াতের ৩ নেতা গ্রেপ্তার       পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ       

 width=
 

প্রসঙ্গ: রংপুরের উন্নয়ন।। প্লিজ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রাত ১০:৫৮

মহিউদ্দিন মখদুমী

রাত শেষে ভোরের আলো ফোটার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ সত্যিই একটি আবেগময় কান্নার সৃষ্টি করেছিল আমার মনের গহীন-তলে। ঘুমহীন চোখে সকালে শরতের শিশিরে পা ভিজিয়ে হেঁটেছি আর ভেবেছি মানুষের কষ্টের রকম কতো ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশের একমাত্র সফল প্রধানমন্ত্রী ও একজন সংবেদনশীল মানুষ। সব হারানোর দুঃখ বোধ তাকে দগ্ধ করে,তাড়িত করে এখনো। ছোট বোনকে নিয়ে ৬ বছর উদ্বাস্তু জীবন কাটানোর দুঃখময় স্মৃতি জমে আছে তাঁর জীবনে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্ব নেতাদের উপস্থিতিতে সেই দুঃখময় স্মৃতি কি অবলীলায় বলে গেলেন ? যারা জীবন ও কর্মে সফল তাদের দুঃখ বোধ গুলো সংক্রামিত হয় মানুষ থেকে মানুষে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুঃখী জীবনের ব্যথা এখন দেশের কোটি কোটি প্রজন্মকে সমব্যথী করে ফেলেছে। বিরোধীরাও স্বীকার করেন ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট একটি জঘন্যতম দুঃখের ঘটনা ঘটেছিল। তাই রোহিঙ্গাদের কষ্ট-উপলব্ধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই তো ছুঁয়ে যাবে, এটি সত্যতায় মিলে যায়। মানুষের সংক্ষিপ্ত জীবনে কষ্ট জমে জমে পাথর হয়। সেই পাথর আবেগ হয়ে গলে যায় মাঝে মাঝে।

যেমন রংপুরবাসীর নীরব কষ্ট গুলো। দীর্ঘদিনের উন্নয়ন বঞ্চনা। কর্মসংস্থানের অভাব। শিল্পকারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তাদের অনীহা। নানান মুখী কষ্ট গুলো বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়ে তৎকালীন সরকার প্রধানকে জানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা? দেশের গৌণ নাগরিক আমরা। সব দাবি হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছিল। ক্ষমতার পট পরিবর্তনে এখন রংপুরবাসীর আশার প্রদীপ, দীপশিখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই আপনাকেই বলে যাই নীরবে। রংপুর উন্নয়নের মৌলিক স্বীকৃতির দাবি রাজনৈতিক লাভ লোকসানের হিসেবের কারণে বাস্তবায়ন করেনি আগের কোন সরকার। রংপুর ছিল এক চক্ষু রাক্ষুসী আচরণের শিকার। তা না হলে রংপুরকে অবজ্ঞা করে, উপেক্ষা করে, পাশ কাটিয়ে কি ভাবে দিনাজপুরে শিক্ষা বোর্ড স্থাপন করা হতে পারে? কোন উদ্দেশ্যে চিকন পাইপ লাইনের মাধ্যমে বগুড়ায় গ্যাস নিয়ে আসা হয়? চিকন পাইপ লাইন এজন্যই করা হয়েছে, যাতে কোন সরকার রংপুরে গ্যাস সরবরাহ করতে না পারে। রংপুরের উন্নয়ন নিয়ে ভূতপূর্ব সরকার গুলোর ন্যক্কারজনক প্রতিহিংসা রংপুর উন্নয়ন কর্মীদের বুকে বারবার দুঃখের চপেটাঘাত করেছে। স্বাধীনতার পর আওয়ামীলীগ সরকার ছাড়া কোন সরকার রংপুর উন্নয়নে এগিয়ে আসেনি। আমরা স্বীকার করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরবাসীর মৌলিক দাবি গুলো জেনে রংপুর বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন, বিশ্ববিদ্যালয়, ফোরলেন সড়কসহ প্রভূত উন্নয়ন কাজ করেছেন। উন্নয়নের মূল স্রোতে ফিরে এনেছেন রংপুরকে। রংপুরবাসীর জন্য তোলপাড় করা সংবাদ হলো, রংপুর উন্নয়নে মেগা প্রকল্পের রোডম্যাপ করা হয়েছে। বাস্তবায়ন এখন সময়ের ব্যাপার। এ জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে জয়লাভ করাতে হবে। রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে একাট্টা হতে হবে বিভাগের জনগণকে। তবেই রংপুর উন্নয়নের গতি মূল স্রোতে থেকে যাবে। নইলে উন্নয়ন কষ্টের দীর্ঘতা বাড়বে।

এ ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের সাতটি সিটির নির্বাচন হবে। সবার আগে রংপুর সিটির নির্বাচন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ বলেছেন, নারায়গঞ্জ সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামীলীগ প্রার্থী জয়লাভ করেছে। কুমিল্লা সিটিতে পরাজিত হয়েছে আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী। কুমিল্লা সিটির ছিটকে যাওয়া পরাজয়ের গ্লানি মুছে ফেলতে রংপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থীকে অবশ্যই বিজয়ী হতে হবে। রংপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মেয়র প্রার্থীর বিজয় কিংবা পরাজয় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে এবং অন্য ছয় সিটির নির্বাচনে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারকগণকে রংপুর সিটির মেয়র পদ নিজ ঘরে রাখার ব্যাপারে কঠিন অংক কষতে হবে। যোগ্য ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দিতে হবে। এটি সময়ের গণদাবী। এটিই বাস্তবতা। নইলে পরে পস্তাতে হবে আওয়ামীলীগকে।

রংপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী পরাজিত হোক। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে প্রভাব সৃষ্টি করুক। এটা রংপুরের জনগণ চায় না। জনগণ মনে করে, মেয়র পদে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হেরে গেলে রংপুরের উন্নয়ন প্রক্রিয়া থেমে যাবে। জনগণ এটাও মনে করে, রংপুর এখন আওয়ামীলীগের জন্য উর্বর। রংপুরের সন্তান দাবি করে যারা রংপুর উন্নয়ন আমড়ার মতো কামড়িয়ে খেয়েছে তাদেরকে আর প্রয়োজন নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড.তুহিন ওয়াদুদ যথার্থই বলেছেন, লাঙ্গল ইমেজ এখন রংপুরবাসীর কাছে অকেজো। রংপুর উন্নয়নে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রংপুরের সব উন্নয়ন তাঁরই। তাই রংপুর সিটিতে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পরাজয় হলে রংপুরের চলমান উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে। এ জন্য কোন কেস স্টাডি নয়। যোগ্যকে এড়িয়ে দুর্বল প্রার্থী নয়। রংপুর সিটিতে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করার জন্য জন-সম্পৃক্ত, জনপ্রিয়, নিজস্ব ভোট ব্যাংকের অধিকারী ও ভোটের রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেয়া প্রয়োজন।

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ রংপুরের শঙ্কু সমজদার। দেশের প্রথম ছাপাখানা রংপুরেই ছিল। দেশের প্রথম সংবাদপত্র রংপুর থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল। ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ আমাদের রংপুর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরকে উন্নয়নে আরও সমৃদ্ধ করার দায়িত্ব নিতে হবে আপনাকেই। কারণ রংপুর উন্নয়ন প্রক্রিয়া আপনার হাতেই শুরু হয়েছে। শেষটা করার দায়িত্বটাও আপনার। আপনি দুঃখ বোঝেন। অনুধাবন করেন গভীর উপলব্ধিতে। রংপুরবাসীর উন্নয়ন বঞ্চনার দুঃখ আপনাকে স্পর্শ করেছে বলেই রংপুর উন্নয়নে এগিয়ে এসেছেন। তাই আমরা মনে করি আপনি ছাড়া রংপুরবাসীর কোন অভিভাবক নেই। বর্তমান রংপুর সিটি মেয়র বীর-মুক্তিযোদ্ধা সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু আপনার উন্নয়ন এজেন্ডা দিন রাত বাস্তবায়ন করে চলছেন। রংপুর সিটির উন্নয়ন ধারা চলমান রাখতে আবার প্রয়োজন আপনার দল আওয়ামীলীগের মেয়র। আপনার দলের বাইরে মেয়রের আসনটি গেলে রংপুর সিটির উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে যাবে। রংপুরের উন্নয়ন বঞ্চনার পুরনো দুঃখ মাঝে মাঝে আমাদের ভাবিয়ে তোলে। তাই রংপুর উন্নয়নের নির্ভরতার প্রতীক আপনাকেই অনুরোধ করে বলি-প্লিজ ! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রংপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বিজয় ধরে রাখতে যোগ্য, দক্ষ, উন্নয়ন বান্ধব, জনপ্রিয়তার মানদণ্ডে সেরা প্রার্থীর হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিন। কারণ নৌকা প্রতীক এখন শুধু আপনার কিংবা আওয়ামীলীগের নেই। নৌকা প্রতীক বঙ্গবন্ধুর, নৌকা প্রতীক মুক্তিযুদ্ধের, নৌকা প্রতীক বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের, নৌকা প্রতীক দেশবাসীর। নৌকা প্রতীক রংপুর উন্নয়নের আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে। বিশ্ব স্বীকৃত মানবতার মাতা ! আমাদের ছোট রংপুরের উন্নয়ন প্রক্রিয়া ছেড়ে দেবেন না প্লিজ !

লেখক: সাংবাদিক, দৈনিক মানবকন্ঠ, রংপুর অফিস।

মন্তব্য করুন


 

Link copied