আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

সাকিবের ক্লান্তি, মুশফিকের ভ্রান্তি

শনিবার, ৭ অক্টোবর ২০১৭, রাত ১১:২৫

প্রভাষ আমিন

ব্লুমফন্টেইনে সাকিবকে মিস করাটা হাহাকারে পরিণত হয়েছে। ইনজুরির কারণে যে খেলতে পারছেন না ব্যাটিং ভরসা তামিম ইকবালও। সাকিব-তামিম না থাকা মানে দলের সেরা তিনজন খেলোয়াড়ের না থাকা।

গত কয়েকবছর বাংলাদেশ দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে, বিশেষ করে দেশের মাটিতে। আমি নিজেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাপোর্টার নাম্বার ওয়ান বলে দাবি করি। ক্রিকেটের জন্য হৃদয়ে প্রায় যুক্তিহীন আবেগ লালন করি। কিন্তু তবুও আমি বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে খুব আশাবাদী ছিলাম না। আশাবাদী না হলেও এক্সাইটেড ছিলাম।

কারণ আমি জানি দক্ষিণ আফ্রিকার পিচ, কন্ডিশন, বোলিং শুধু বাংলাদেশ নয়; যে কোনো প্রতিপক্ষের সামর্থ্যের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়। নিজেদের মাটিতে নিজেদের মত উইকেট বানিয়ে একের পর এক প্রতিপক্ষকে কাবু করায় আনন্দ অবশ্যই আছে, তবে তৃপ্তি নেই। বিরুদ্ধ কন্ডিশনে সেরাদের বিরুদ্ধে সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারলেই মেলে পরিপূর্ণ তৃপ্তি। পচেফস্ট্রুম টেস্টে ব্যাটিং বোলিং কোনো বিভাগেই সেই তৃপ্তি মেলেনি।

ব্লুমফন্টেইনে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ টেস্ট জিতে যাবে, এমন আশা আমি করি না। তবে সামর্থ্যের ঝলক দেখিয়ে একটা দুইটা সেশনে আধিপত্য দেখাতে পারলেও খারাপ লাগার অনুভূতিটা কমবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ওপর আমার আস্থা আছে। তবে সত্যি বলতে সাকিব-তামিম ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলতে নামতে একটু ভয় ভয়ই লাগছে।

আশা করি ক্রিকেটাররা সে ভয় কাটিয়ে দেবেন। সাকিবের ক্লান্তির মত ভ্রান্তি যেন পেয়ে না বসে। তবে প্রথম দিনেই ৩ উইকেটে ৪২৮ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা এই টেস্টের পরিণতি প্রায় নিশ্চিত করে দিয়েছে। এখন অপেক্ষা একটা দুইটা সেশন বা কারো ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ঝলকের।

বলছিলাম ভ্রান্তির কথা। খেলোয়াড়দের যাই হোক, অদ্ভুত এক ভ্রান্তি ভর করেছে মুশফিকের মাথায়। টেস্টে নিয়ম হলো ১০ বার টস জিতলে চোখ বন্ধ করে ব্যাটিং নাও। সেখানে মুশফিক পরপর দুই ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিং স্বর্গে পাঠিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। আর এই সুযোগে রানের পাহাড়ের নিচে চাপা পড়েছে বাংলাদেশের সকল আশা-আকাঙ্খা।

কিন্তু প্রায় নির্বিষ বোলিং অ্যাটাক নিয়ে মুশফিক কোন সাহসে তাদের ব্যাটিংয়ে পাঠানোর ভ্রান্তিবিলাসে মাতলেন, বোঝা মুশকিল।

যে সফর নিয়ে আমার এমন এক্সাইটমেন্ট, সেই সফর থেকে ছুটি চেয়েছেন দেশের সেরা খেলোয়াড় সাকিব। আসলে ক্রিকেট নিয়ে আমাদের যত দেশপ্রেম, আবেগ, এক্সাইটমেন্ট; ক্রিকেটারদের ততটা নেই, থাকা সম্ভবও নয়। কারণ এটা তাদের প্রতিদিনের কাজ। সাকিব ক্লান্তির কথা বলে ছুটি নিয়েছেন। ক্লান্ত সাকিব হতেই পারেন।

বাংলাদেশের সব ম্যাচ তো বটেই, ঘুরে ঘুরে বিপিএল, আইপিএল, বিগব্যাশ, সিপিএল, পিএসএল, ইংলিশ কাউন্টি খেলতে হয়। এছাড়া বিজ্ঞাপনের শ্যুটিং, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, সামাজিকতা ইত্যাদি ইত্যাদি তো আছেই। তারপরও শুরু থেকেই সাকিবের ছুটি নিয়ে আমার একটু আপত্তি ছিল।

আমরা বছরে একটা দুইটা টেস্ট খেলার সুযোগ পাই। ১০ বছরে সাকিব খেলেছেন মাত্র ৫১টি টেস্ট। যেখানে সাকিবের মাপের প্রতিভার একটা খেলোয়াড় অন্য দেশে জন্মালে অনেক রেকর্ড থাকতো তার মুকুটে। বাংলাদেশ এখনও দুর্বল দল।

বাংলাদেশের একজন খেলোয়াড় হয়তো জীবনে একবারই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সুযোগ পাবেন। তাই এই সফর বাংলাদেশ দলের জন্য যেমন, ব্যক্তি সাকিবের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যত খেলবেন, তত তার পরিসংখ্যান সমৃদ্ধ হবে। তাছাড়া সেরারা পারফর্ম করবে সেরাদের বিপক্ষে, বিরুদ্ধ কন্ডিশনে।

যেহেতু আমরা টেস্ট খেলার সুযোগ কম পাই, তাই সেটাই থাকার কথা প্রায়োরিটি লিস্টের টপে। কিন্তু বেদনার সাথে দেখলাম বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডারের প্রায়োরিটি লিস্ট আমাদের ভাবনার সমান্তরাল নয়। সাকিব টেস্ট থেকে ছয় মাসের ছুটি চেয়েছিলেন। বোর্ড চলতি সিরিজের জন্য ছুটি দিয়েছে। পাশাপাশি এও বলে দিয়েছে, দরজা খোলা, সাকিব চাইলে দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে পারবেন।

কিন্তু তামিম অনিশ্চিত এটা জানার পরও সাকিব সেই খোলা দরজায় নক করেননি।

নিজের বা পরিবারের কারো অসুস্থতা বা কোনো অপরিহার্য পরিস্থিতিতে যে কেউ ছুটি চাইতে পারেন। কিন্তু বোর্ডের বেতনভূক্ত একজন খেলোয়াড় চাইলেই ‘ক্লান্তি’র মত একটা বায়বীয় কারণে ছুটি চাইতে পারেন কিনা, পাইতে পারেন কিনা; সে প্রশ্ন তোলাই যায়। কারণ সাকিব শখের বশে ক্রিকেট খেলেন না, তিনি একজন পেশাদার ক্রিকেটার।

কিন্তু একটু মনে হয় বেশিই ‘পেশাদার’, তাই তো বাংলাদেশটা তার কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায় না। আমরা ভুলে যাইনি, সাকিব এর আগেও বাংলাদেশের হয়ে না খেলার হুমকি দিয়েছিলেন। এত আপত্তি, এত প্রশ্ন সব গিলে আমি সাকিবের ছুটিটা মেনেই নিয়েছিলাম। যদি জানতাম ক্লান্তি দূর করতে সাকিব শিশির আর রাজকন্যাকে নিয়ে কোনো দ্বীপে নিরিবিলি সময় কাটাচ্ছেন, তাহলে তার ছুটিটা যৌক্তিক মনে হতো।

কিন্তু যখন দেখি ‘ক্লান্তি’ দূর করতে ছুটি নিয়ে সাকিব অন্তত দুজন আওয়ামী লীগ নেতার নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দেন, তখন মন খারাপ হয়। হায়, আমাদের দেশের সবচেয়ে ভালো ক্রিকেটারের ক্রিকেট খেলতে ক্লান্তি আসে। কিন্তু রংপুরে, মানিকগঞ্জে উড়ে উড়ে, ঘুরে ঘুরে নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা দিতে ক্লান্তি নেই।

যখন শুনি সাকিব টেকনাফে শরণার্থী ক্যাম্পে ছুটে গেছেন বা দুর্নীতি দমন কমিশনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে তাদের বিজ্ঞাপনে মডেল হচ্ছেন; ভালোই লাগে। একজন ক্রিকেটার তার জনপ্রিয়তাকে দেশ ও দশের কল্যাণে কাজে লাগাবে। কিন্তু সবকিছু করার আগে তো মূল কাজটা করতে হবে।

সাকিবের ঘুরে ঘুরে নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা দিলে মন খারাপ হয়। কিন্তু সেই মন খারাপটা ক্ষোভে পরিণত হলো, যখন দেখি সাকিব আল হাসান বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে ভাষণ দেন।

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যখন দক্ষিণ আফ্রিকার কঠিন পরিবেশে রীতিমত খাবি খাচ্ছে, তখন বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারকে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের উজ্জীবিত করতে দেখলে আমার খারাপ লাগে, কষ্ট হয়। আপনার?

প্রভাষ আমিন: সাংবাদিক, কলাম লেখক; বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ। probhash2000@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied