আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

সস্ত্রীক অভিযুক্ত হচ্ছেন ফরহাদ মজহার

বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৭, দুপুর ১০:৩৮

দণ্ডবিধির ২১১ ও ১০৯ ধারায় সস্ত্রীক ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে পুলিশ। ডিবির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকার বুধবার সমকালকে এসব তথ্য জানান।

ডিবির পশ্চিম বিভাগের ডিসি সাজ্জাদ হোসেন গতকাল সমকালকে বলেন, 'ফরহাদ মজহার অপহরণ হয়েছেন; তদন্তে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এখন ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

গত ৩ জুলাই ভোরে শ্যামলীর বাসা থেকে বের হন ফরহাদ মজহার। এরপরই তার স্বজনরা জানান, তাকে অপহরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আদাবর থানায় মামলা করেন ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার। ১৮ ঘণ্টার নাটকীয়তা শেষে ওইদিন মধ্যরাতে যশোরের অভয়নগরে ঢাকাগামী একটি বাস থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে খুলনায় তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরের দিন তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হলে তিনি আদালতে জবানবন্দি দিয়ে নিজে অপহৃত হওয়ার দাবি করেন। আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড শেষে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় ফরহাদ মজহারকে নিজ জিম্মায় বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

এরপর পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক জানান, 'তদন্তে ফরহাদ মজহারের অপহরণ হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি স্বেচ্ছায় বাসা থেকে বের হয়েছেন।'

'অপহরণের' ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের কোনো গণমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেননি ফরহাদ মজহার। তবে বিদেশি একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, 'সব সত্য খুলে বলবেন।' এরপর তিন মাসের বেশি সময় পার হলেও ফরহাদ মজহার মুখ খোলেননি।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ফরহাদ মজহারের অপহরণ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ডিবি চলতি মাসে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। দণ্ডবিধি অনুযায়ী সেখানে লেখা হবে 'এফ আর অ্যাজ ফলস'। বাদী উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় ২১১ ধারায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হবে।

তদন্তসংশ্নিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, মিথ্যা অভিযোগে ফরহাদ মজহার অপহরণ ঘটনায় তার স্ত্রী ফরিদা আখতার মামলা করলেও পরে বিষয়টি পরিষ্কার হলে তিনি মামলা তুলে নেননি। এমনকি আদালতে গিয়ে বলেননি, তিনি যে অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন তা সঠিক নয়। তাই ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত থেকেও অপরাধে সহায়তা করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় তাকে অভিযুক্ত করছে পুলিশ।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, ফরহাদ মজহারের 'অপহরণ' রহস্য উদ্ঘাটনে অন্তত ২০ জনের বক্তব্য নিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ফরহাদ মজহার ও তার স্ত্রী রয়েছেন। কারও বক্তব্যে প্রমাণ পাওয়া যায়নি কেউ তাকে অপহরণ করেছে। পুলিশের তদন্তে দেখা যায়, ঘটনার দিন বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ফরহাদ মজহারের সঙ্গে ৪টি মোবাইল সিমকার্ড ছিল। খুলনায় হানিফ কাউন্টার থেকে গফুর পরিচয়ে টিকিট কাটার সময় যোগাযোগ নম্বর হিসেবে ০১৭১৩-০৪৪৮৫৪ নম্বরটি দেন ফরহাদ মজহার। সিসিটিভির ফুটেজে ফরহাদ মজহারকে গাড়ির টিকিট কাটতেও দেখা গেছে। পৃথক একটি নম্বর থেকে অপহরণের পর ৬ বার এক নারীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাকে টাকাও পাঠান ফরহাদ মজহার। পরে ওই নারীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এমনকি কথিত অপহরণের পর ফরহাদ মজহারের সঙ্গে থাকা ব্যাগের মধ্যে রাখা ১৫ হাজার টাকা অক্ষত ছিল।

দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, আদালতে ফরহাদ মজহারের জবানবন্দির সঙ্গে তদন্তে পাওয়া আলামতের কোনো মিল নেই। ঘটনার পর স্ত্রীর উপস্থিতিতে পুলিশ ফরহাদ মজহারকে পৌনে ২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় বাসের টিকিট কাটা, খুলনায় মার্কেটে ঘোরাঘুরির ভিডিও ফুটেজ তাকে দেখানো হয়। এক পর্যায়ে গোয়েন্দারা জানতে চান, অপহরণকারীদের কাছে থাকা অবস্থায় কীভাবে পৃথক একটি মোবাইল নম্বরে ৬ বার কথা বললেন? কীভাবে দুই দফায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অন্য একজনকে টাকা পাঠালেন? এসব প্রশ্নে নিশ্চুপ ছিলেন ফরহাদ মজহার।

শুরুতে ফরহাদ মজহার দাবি করেন, ঘটনার দিন ভোরে লিখতে লিখতে তার চোখ শুকিয়ে আসছিল। তখন চোখের ড্রপ কিনতে ভোর সোয়া ৫টার দিকে আদাবরের বাসা থেকে বের হন তিনি। শ্যামলীতে ২৪/৭ নামে একটি ওষুধের দোকানে তার যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে শ্যামলী মোড়ের অদূরে ক'জন তাকে মাইক্রোবাসে টেনে তোলেন। তারা সংখ্যায় ৫-৬ জন হবে। কারও বয়স অল্প, কেউ বয়সী। মাইক্রোবাসে তুলেই তার চোখ বেঁধে ফেলা হয়। দু'জন তাদের পা দিয়ে তাকে চেপে ধরে সিটে বসিয়ে রাখে। এরপর মুক্তিপণের জন্য দুই কোটি টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে তারা ৩৫ লাখ টাকা চায়। পরে টাকার অঙ্ক কমিয়ে ২৫ লাখে নামিয়ে আনে। মাইক্রোবাসে তার মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই বাসায় স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়।

মন্তব্য করুন


 

Link copied