আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ● ৩ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৬ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: কুড়িগ্রামে অষ্টমীর স্নান করতে এসে মারা গেলেন পুরোহিত       বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ১১ জন নিহত       উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: রংপুরে ৩০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল        ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ডোমার ও ডিমলায় মনোনয়ন জমা দিলেন ৩৫ জন       নীলফামারীতে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষন -গ্রেপ্তার ৬      

 width=
 

রংপুর সিটি নির্বাচন: ভোটারদের প্রধান প্রশ্ন; রংপুরের উন্নয়ন কোন্ পথে

রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৭, দুপুর ০৪:৩২

আশাফা সেলিম আর মাত্র কটা দিন বাকি। ২১ ডিসেম্বর ২০১৭। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচন অনুষ্ঠান। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে চলছে আশা-নিরাশা, জল্পনা-কল্পনা আর পাওয়া-না পাওয়ার বহুমুখী দোলাচল। সবকিছু ছাপিয়ে, রংপুরবাসীর মনে এখন একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে- কে হচ্ছেন রসিক মেয়র? সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, নাকি অন্য কেউ? ঝন্টুর বিপরীতে কোনো নাম বললাম না কারণ ব্যাপারটা এরকমই দাঁড়িয়েছে। একদিকে সদ্য সাবেক মেয়র ঝন্টু, অপরদিকে অন্য সব। তবে মূল প্রতিযোগিতা যে আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টির মধ্যে হবে সেটা বলাই বাহুল্য। বিভিন্ন মহলে, বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে রসিক নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনা, প্রার্থীদের লিফলেট ইত্যাদি সুত্র ধরে এই লেখা। আলাপের মানুষগুলোর মধ্যে সব প্রার্থীরই পক্ষ-বিপক্ষের ব্যক্তিরা ছিলেন। এ কথা সবাই জানেন, রংপুরের মানুষ আবেগপ্রবণ। ভালোবাসাপ্রবণ। এই মানুষগুলোর মনে একবার জায়গা করতে পারলে, একটু বাসা বাঁধতে পারলে, ব্যস! আর সে বাসা ভাঙে, সাধ্য কার? যেমন জায়গা করে নিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান! একসময় এমন কথাও শোনা যেত, ‘এরশাদ একটা কলা গাছ দাঁড় করিয়ে দিলেও সেটা পাশ করবে’! রংপুরের মানুষের এই আবেগের কারণে, দেশের সবখানেই রংপুরবাসীকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। সমস্ত ভালো গুণকে ছাপিয়ে উপরে উঠে আসে তাদের আবেগ আর হুজুগের সমালোচনা। আর অতি মাত্রায় আবেগ যে কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনে না, তা জেনেও তারা আবেগপ্রবণ। তবে, সময় বদলেছে। রংপুরের মানুষ আজ আর কলাগাছকে ভোট দিতে প্রস্তুত না। ভোটটি তারা দেবেন অনেক হিসাব কষে। দেখেশুনে বুঝেসুঝে। একটি প্রশ্ন মাথায় রাখতেই হবে ‘রংপুরের উন্নয়ন কোন্ পথে’? আর এর উত্তরটাও তাকেই খুঁজে বের করতে হবে। রসিকবাসীর মধ্যে বিরাট একটা অংশ জুড়ে আছে গ্রামীণ সহজসরল জনসাধারণ। এ অংশটা পড়েছে সাবেক পৌর এলাকার সম্প্রসারিত রসিক এলাকায়। রসিকের প্রায় ৪ লাখ ভোটারের মধ্যে ভোটারসংখ্যা ঐ অংশেই বেশি। তাদের মধ্যে মেয়র নির্বাচন নিয়ে দুরকম গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ‘মেয়র পদে কে জিতবে’ প্রশ্নের উত্তরে কেউ বলছেন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী, কেউ বলছেন জাতীয় পার্টির লাঙলের প্রার্থী। তবে, যে যেই মার্কার সমর্থক, সে সেই মার্কার বিজয়ের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন। যদিও মার্কা দেখেই তারা ভোটটি দেবেন। তবে, প্রার্থীর যোগ্যতা নিয়েও সুধী মহলে ব্যাপক বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আর মহাজোট সরকারের প্রধান দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর যোগ্যতা নিয়ে দুপক্ষ যা বলছেন, তার একটি তুলনামূলক আলোচনা ছক আকারে দিলাম। প্রসঙ্গত, এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে রংপুরে মোটেও জনপ্রিয় ছিলেন না। ছিলেন সারাদেশের মতোই, ‘স্বৈরশাসক’। তার ৯ বছরের (১৯৮২-১৯৯০) রাষ্ট্র পরিচালনাকালীন শুধু তার দলের লোক ছাড়া, রংপুরের সুধী সমাজ কখনোই তাকে বন্ধু ভাবেনি। কারণ, তিনি তখন কেবলই নিজের মসনদ আঁকড়ে রাখতেই ব্যস্ত ছিলেন। চির অভাগা রংপুরের উন্নয়ন নিয়ে ভাবার সময় পাননি। তাই রংপুরের মানুষও স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের দাবিতে সেই ৯ বছর রাস্তায় আন্দোলন করেছেন। কিন্তু ৯০-এ, স্বৈরশাসনের পতনের পর, এরশাদ যখন জেলখানায়, তখন হঠাৎ করেই রংপুরবাসীর মনে ‘জাগার ছাওয়াল’ এরশাদ প্রীতি জেগে ওঠে। রংপুরের সচেতন মহল মনে করেন, স্বৈরশাসকের প্রতি হঠাৎ সৃষ্ট মমতা দীর্ঘকাল টিকিয়ে রাখার মতো আবেগ বদলানো দরকার। দরকার সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে, উন্নয়নের সঠিক পথে যাত্রা করা। ১৯৯০-এর পর ২৭ বছর গত হয়েছে। এই সময়ে এরশাদ বার বার মানুষের দ্বারে ভোট ভিক্ষা চেয়েছেন। রংপুরের মানুষও খালি হাতে ফেরাননি তাঁকে। কিন্তু, বিনিময়ে তিনি রংপুরের মানুষের জন্যে কী করেছেন? সে হিসাব নেয়ারও সময় এসেছে। এই ২৭ বছরে তিনি রংপুরের জন্য একটি অসম্পূর্ণ চিড়িয়াখানা আর অকার্যকর সোডিয়াম বাতি ছাড়া উল্লেখ করার মতো কিছুই করেননি। ফলে, এখানকার জনগণই বা আর কতদিন তার জন্যে একতরফা ভাবে করে যাবে? জানা গেছে, এসব কথা বিবেচনায় রেখেই, শেখ হাসিনা ‘জাতীয় পার্টির দুর্গ’ খ্যাত রংপুর সিটিতে একজন ‘শক্ত প্রার্থী’র হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছেন। মনোনয়ন ঘোষণার আগে, নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী প্রার্থীদের ও তাদের সমর্থক আওয়ামী লীগারদের মধ্যে অনেকেই প্রকাশ্যে ঝন্টুর বিরোধিতা করেছেন বলে শোনা যায়। স্থানীয় আওয়ামীলীগের কাউকে কাউকে এমনও বলতে শোনা গেছে, ‘ঝন্টুকে নৌকায় মনোনয়ন দেয়া হলে, সেটা হবে ভুল সিদ্ধান্ত। আমরা তখন নৌকার পক্ষে কাজ করবো না।’ তবে, আওয়ামীলীগের যা বৈশিষ্ট্য, তাতে দলের চেয়ে, নেত্রীর সিদ্ধান্তের চেয়ে বড় তো আর কিছু হতে পারে না। তাই, ঝন্টু মনোনয়ন পাওয়ার পর, তারাসহ সকল আওয়ামীলীগার স্থির হয়েছেন। প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন, নৌকা মার্কাকে জেতাতে আদাজল খেয়ে নামবেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগরের নেতারা, প্রার্থীকে সাথে নিয়ে নৌকা মার্কার পক্ষে প্রতিদিন সভা করে তা প্রমাণ করছেন। রংপুরের একটি মহল মনে করেন, সারাজীবন বৈষম্যের শিকার রংপুরের উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনার চেয়ে দরদি আর কাউকে পাওয়া যায়নি। গত অর্ধ যুগেরও বেশি সময়ের মধ্যে রংপুরে যা কিছুই উন্নয়ন হয়েছে, তা শেখ হাসিনার বদৌলতেই। তিনি ক্ষমতায় এসেই রংপুরের বঁধু হিসেবে এই সিটির উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। আর তারই ফলশ্রুতিতে আজকের রংপুর। এবং শেখ হাসিনা চাইলে রংপুরকে একটি আদর্শ নগরি হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। কিন্তু তাঁর সেই চাওয়াকে বাস্তবরূপে দেখতে চাইলে, তাঁর দেখানো পথেই রংপুরবাসীকে হাঁটতে হবে। এইসব হিসাবও রংপুরের মানুষকেই করতে হবে। ‘আমি কই কী, আর আমার সারিন্দায় বাজায় কী’ এমন হলে তো আর দুইয়ে দুইয়ে চার হবে না; উন্নয়নের যোগফলও মিলবে না। দেশের অন্যান্য সিটির দিকে তাকালে সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়। ‘ভালো লোক/জনপ্রিয় লোক’, আর ‘যোগ্য লোক/সুযোগ্য প্রশাসক’ এক কথা নয়। একই ব্যক্তির মাঝে এই দুই ধরনের গুণ/বৈশিষ্ট্য সমানভাবে নাও থাকতে পারে। তাই, আবেগের বশবর্তী হয়ে লাভ নেই। নিজেকেই প্রশ্ন করতে হবে, প্রকৃত অর্থেই কি আমি রংপুরের উন্নয়ন চাই, নাকি আবেগের গড্ডল প্রবাহে গা ভাসাবো? সিটি মেয়র নির্বাচনে রংপুরবাসীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে খুবই হিসাব করে, ভেবেচিন্তে। দেখে- শুনে-বুঝে, সচেতনভাবে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied