আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

কুড়িগ্রামে কেন দরিদ্রতা?

শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭, দুপুর ১২:৩৬

নাহিদ হাসান নলেজ

আসাম ও পূর্ববঙ্গের দরজাখ্যাত চিলমারী নদীবন্দরসহ রৌমারী ও সোনাহাট স্থলবন্দর এই জেলাতেই অবস্থিত। মোগল ও ব্রিটিশ আমলে চিলমারীতে জাহাজ তৈরির কারখানা ছিল। আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের হেডকোয়ার্টার ছিল কুড়িগ্রামেরই সাবেক উপজেলা লালমনিরহাট। আসাম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত কুড়িগ্রাম জেলা সংলগ্ন। কুড়িগ্রাম জেলার সীমানায় জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জে গ্যাস পাইপলাইন ও দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন আছে। ব্রহ্মপুত্রের পূর্বপাড় ধরে অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য সৃষ্টি করে প্রাচীরের মতো বেয়ে আসামের পর্বতমালাসহ বিশের অধিক নদনদী এখানে বহমান। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মিঠা পানির মাছ বাঘাড় মাছের এলাকা এখানেই। এ ছাড়াও বিরল প্রজাতির মাছ ও মসলার জন্য তিস্তা-ধরলা-ব্রহ্মপুত্রের চরগুলো তো বিখ্যাতই।

অথচ দারিদ্র্যের শীর্ষ হওয়ার তকমা পেল কুড়িগ্রাম! ২০১৪ সালের জরিপে ছিল ৬৩.৬৭ ভাগ। এবার ৭০.৮৭ ভাগে উঠেছে। চিলমারীর মতো উপজেলায় তা ৭৭ ভাগ। কিন্তু গোটা দেশে দারিদ্র্যের হার ২০১৪ সালের ৩১.৫ ভাগ থেকে চলতি বছর তা ২৪.৩-এ নেমেছে। তবে কুড়িগ্রামের কেন এই উল্টো যাত্রা? কেন কুড়ির অধিক নদনদীর জেলা কুড়িগ্রামে মাছ ভোগের হার অন্যান্য জেলার চেয়ে কম? কেন হিমালয়বাহিত খনিজ উপাদানে উর্বর এই মাটির সন্তানরাই বৈচিত্র্যহীন ও কম খাদ্য গ্রহণে বাধ্য হয়? কেন অপুষ্টি, ধার-দেনা-কিস্তি, অসুখ-বিসুখ, সড়ক দুর্ঘটনা, রাষ্ট্রীয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে অধিক মৃত্যুর হার এখানেই? তবুও নাকি কুড়িগ্রাম আধুনিক? কেউ কেউ তার আবার রূপকার!

ব্রিটিশ আমলে ফকির-সন্ন্যাসীদের হেডকোয়ার্টার রৌমারীর জাফরগঞ্জ, ভূরুঙ্গামারীতে সরাসরি যুদ্ধ হয়েছে রমানন্দ গোঁসাইয়ের সঙ্গে লেফটেন্যান্ট মরিসনের। মুক্তিযুদ্ধে রৌমারী ছিল একমাত্র মুক্তাঞ্চল; যেখানে চালু ছিল প্রথম বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৬৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা, যা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার মতো উদাহরণ। চিলমারী, উলিপুর, ভূরুঙ্গামারী, টগরাইহাট ও তিস্তার যুদ্ধ ছিল মুক্তিযুদ্ধের গতি-প্রকৃতি পাল্টে দেওয়ার যুদ্ধ। কুড়িগ্রাম জেলার এমন কোনো গ্রাম নেই, যেখানে শহীদদের রক্ত ঝরেনি। তারপরও কুড়িগ্রামের এই দুর্দশা!

দুই বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের মধ্যে এত ভেদ কেন? কেন ভূতের ময়দানের নাম আজ কুড়িগ্রাম? দুই দুইবার স্বাধীনতা পেয়েও মোগল ও ব্রিটিশ আমলের চেয়ে অবস্থা খারাপ হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর নারায়ণগঞ্জ ধনী জেলা, আর আন্তর্জাতিক নৌ ও স্থলবন্দর নিয়েও কুড়িগ্রাম দারিদ্র্যের শীর্ষে! নারায়ণগঞ্জ যেখানে শিল্পায়নের মাধ্যমে উৎপাদনক্ষেত্রে পরিণত, সেখানে কুড়িগ্রাম পণ্য পরিবহনের রুটমাত্র। আমাদের জেলার নেতারা করাচি ও ঢাকার গোলাম হয়ে ছিলেন ও আছেন। ফলে নিজস্ব শক্তি ও সম্ভাবনা তুলে ধরেননি। জামালপুরের বকশীগঞ্জ পর্যন্ত গ্যাসলাইন ও রেললাইন আসতে পারে, রৌমারী পর্যন্ত আসে না। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস আসে না। মুক্তিযুদ্ধের মুক্তাঞ্চল রৌমারী ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। দুর্গমতার কারণে আমাদের কৃষকরা কৃষিপণ্যের দাম পান না। গাইবান্ধার বালাসীঘাট থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের মধ্যে বহুমুখী টানেল নির্মাণের ঘোষণা এসেছে। তাই চিলমারী-সুন্দরগঞ্জ তিস্তা সেতুর নকশায় রেলপথ যুক্ত করার কথা বলেছেন গণকমিটির নেতৃবৃন্দ এতকাল। তাহলে চিলমারী থেকে ঢাকার দূরত্ব এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসত। রংপুর/লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম-চিলমারী-বালাসীঘাট-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা নামে সংক্ষিপ্ত নতুন রুট তৈরির মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলা যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল রুটে চলে আসত। এ কথা রেলমন্ত্রীকে বলেছিলেন তারা। কিন্তু তিনি তাদের কথা রাখেননি। গত ২৬ নভেম্বর তারিখে এসব কথা বিস্তারিত তুলে ধরতে গণকমিটি কুড়িগ্রাম শহীদ মিনারে গণসমাবেশের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি। উন্নয়নের জোয়ারের কালে দারিদ্র্য শব্দের ব্যবহার সরকারবিরোধী!

প্রধান সমন্বয়ক, রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি, কুড়িগ্রাম nahiduttar@yahoo.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied