আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

‘শীতে খুব ঠান্ডা একটা কম্বল দিয়া যান’

মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী ২০১৮, দুপুর ১১:২১

নিয়াজ আহমেদ সিপন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: শীতে কাপছি, দুই মুঠো খাবার জোটে না, আবার শীতের কাপড় কিনবো কেমনে। কেউ খবর রাখে না। মনে হয় এই শীতে মইরা যামু। শীত লাগছে, কেউ শীতের কাপড় দিবেন? ছবি তুইলেন না,শীতে খুব ঠান্ডা একটা কম্বল দিয়া যান।’ সোমবার( ৮ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার বাজারের ৯০ বছরের এক বৃদ্ধ তিনি এ সব কথা বলেন। তিনি ওই সময় বাজারের ময়লা কাগজ পত্র আগুন দিয়ে শীতে গাঁ-গরম করা চেষ্টা করে। তিনি বলেন, স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে একমাত্র ছেলে কোথায় চলে গেছে নিজেও জানি না। সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে খেয়ে চলি। শীতে শেষ হয়ে যাচ্ছি। এতো শীত আর সইতে পারি না। কেউ কি কম্বল দিবে না। লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে,‘হত দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষগুলো শীতে কাঁপছে। রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে। এসব অধিকাংশ হতদরিদ্র মানুষের শীতবস্ত্র কেনার কোন সামর্থ্য নেই। বেড়েছে শীতের প্রকোপ। বাসাবাড়ি, অফিস আদালত কিংবা রাস্তায় বের হলেও শীতের কাপড় সঙ্গে রাখতে হচ্ছে। শুরু হয়ে গেছে তাদের শীতের ভোগান্তি। হেড লাইট জ্বালিয়ে দিনের বেলায় গাড়ি চলাচল করছে। রয়েছে যানবাহনে ধীরগতি। তীব্র ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়েছে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী স্বল্প আয়ের মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে। ছিন্নমুল মানুষের মাঝে রয়েছে শীত বস্ত্রের তীব্র সংকট। বাড়ছে শীত জনিত রোগের প্রকোপ। রাস্তার ওপর কিংবা ফুটপাতে অথবা ভ্যান গাড়ির ওপর শীতের গরম কাপড় ছাড়াই রাত কাটছে ছিন্নমূল মানুষের। অধিকাংশের কাছেই নেই কোনো কম্বল বা গরম কাপড়। শুরু হওয়া শীতে বিষেশ করে ভেগান্তিতে পড়েছে তিস্তার চরঅঞ্চলের মানুষ। তারা বলছেন, শীত আসলেই চরম ভেগান্তিতে পড়তে হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধারণের খোঁজ কেউ নেন না। চরঅঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষরা অভিযোগ করে বলেন, শীতের কাপড় আসলেই দলীয় লোকজনকে দিয়ে শেষ করে দেয়। এখানকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানরা। তাদের স্বজনপ্রতি কারণে নি¤œআয়ের মানুষরা এ সময় কষ্ট থাকে। তিস্তাচর অঞ্চলের সেলেমান মিয়া বলেন,শীত আসায় অনেক কষ্টে আছি। আমি গরীব মানুষ, রাতে ভ্যানের ওপর ঘুমাই। কিন্তু এহন শীতের জ্বালায় বাচি না। কম্বল বা শীতের কাপড় কিনার সামর্থ্যও নাই। চরঅঞ্চলে আরেক ব্যাক্তিকে দেখা যায় তুষভান্ডার রেল লাইনের একদম পাশে জরাজীর্ণ একটি কম্বল গায়ে দিয়ে দুজন শুয়ে আছেন। এই দুজনের নাম আনিছার ও মেক্তার। তারা দু’জন রিক্সা চালিয়ে তাদের সংসার চালায়। গরিব, বৃদ্ধ ও শিশুরা হাড় হিম করা শীতের দাপটে এখন কাবু। ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। থমকে দাঁড়িয়েছে জনজীবন। হতদরিদ্ররা শীতের কাপড়ের জন্য চেয়ে আছেন সরকার ও দানশীল ধনীদের প্রতি। দুদিন থেকে এ অঞ্চলে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। এখনও জোরালোভাবে শুরু হয়নি সরকারি বা বেসরকারি শীতবস্ত্র বিতরণ। স্থানীয় প্রশাসনের কাছেও পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় দুর্ভোগ আরো বাড়ছে। বিশেষ করে চরাঞ্চল ও প্রত্যৗল্প অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। চর ও দুর্গমাঞ্চলে গরিব ও অসহায় মানুষের মধ্যে এখন পযন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি শীতের কাপড়। চলছে সূর্যের লুকোচুরি খেলা। কোথাও বা সূর্যের আলো দেখা গেলে তাও ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য। দিনের বেশিরভাগ সময়ই আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল। সেই সাথে হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীত। শীতের আগমনে বেড়েছে হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যা। এসব শিশুর বেশিরভাগই ভর্তি হয়েছে ঠা-াজনিত কারণে। পাশাপাশি শীতে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে বৃদ্ধরা ভর্তি হচ্ছেন। এদিকে শীতের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে শহর-বন্দর ও হাট-বাজারে শীত নিবারণের পুরনো কাপড়ের মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। এ কারণে অসহায় পরিবারের অনেকের ভাগ্যে জুটছে না শীতবস্ত্র। সেই সাথে শহরের নামিদামি দোকানগুলোতে লেপ, তোষক, কম্বল, জ্যাকেট ও সুয়েটারের মূল্য বাড়ছে। হাতীবান্ধার কৃষক ফিরোজ আহমেদ জানান, জমিতে বোরো চারা রোপণের সময় হয়েছে। কিন্তু অতি ঠা-ায় শ্রমিকরা কাজ করতে চায় না। এতে বোরোর আবাদ পিছিয়ে যাবে। আদিতমারী সাপ্টিবাড়ির বৃদ্ধা মমেনা বেগম বলেন,‘বাবা হামরা বুড়া মানুষ,গাত (শরীরে) দেবার কাপড় নাই। খুব ঠা-া লাগে বাবা। বাইরত বেড়বার পাং না। একটা কম্বল দিবেন বাহে!’ রংপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, গত দুই তিন দিনে লালমনিরহাট জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। এ অবস্থায় শীতকাতর মানুষেরা খর-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। নদী তীরবর্তী এলাকায় শীত বেশি অনুভুত হওয়ায় শীতকষ্টে দিনাতিপাত করছে এখানকার হাজার মানুষেরা। বিশেষ করে গত ৫/৭ দিন ধরে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় নি¤œ আয়ের দুস্থ পরিবার গুলো প্রয়োজনীয় শীত বস্ত্রের অভাবে নিদারুন দুর্ভোগে পড়েছে। হাজারও শিশু এবং বৃদ্ধরা ডায়রিয়া এবং নানা শীতজনিত রোগে কাহিল হয়ে পড়েছে। এদিকে শুধু সরকারিভাবে কিছু শীত বস্ত্র বিতরন করা হলেও জেলার কোথাও বেসরকারীভাবে বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলোর পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরনের কোন খবর পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে জেলা ত্রান শাখাতেও কোন তথ্য নেই। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রানভান্ডার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থপনা অধিদপ্তর দিন দফায় ৩১ হাজার ৯শত ২১ পিচ কম্বল বরাদ্দ দেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যান্ত অপ্রতুল। জেলার ৫টি উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানাযায়, প্রতিটি উপজেলাতেই ইতোমধ্যে প্রায় সবগুলো শীতবস্ত্র বিতরন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বিভিন্ন জনপদে ঘুরে দুস্থদের মধ্যে নিজ হাতে উল্লেখযোগ্য শীতবস্ত্র গত কয়েকদিনে বিতরন করেছেন। তবে জেলায় আরও কিছু শীতবস্ত্র বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল সুত্র জানিয়েছে। তবে স্থানীয় প্রসাশনকে বলেছেন, স্বজনপ্রতি না করে সৃষ্টুভাবে শীতবস্ত্র বিতরন করুন। স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল দুইজন কর্মকর্তা সিভিল সার্জন ডাঃ কাশেম আলী ও সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ আহসান হাবিব বাবু জানান, পরিস্থিতি সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রনে রয়েছে এবং যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা স্বাস্থ্য বিভাগের রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত জেলায় মাত্র তিনটি শিশু শ^াস কষ্ট জনিত রোগে এবং ৯জন ডায়রিয়া রোগে ভর্তি রয়েছে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied