আর্কাইভ  শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ● ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: লালমনিরহাটে মোবাইল ফোনে কথা বলছিল, হঠাৎ পিছন থেকে ট্রেনের ধাক্কায় কাটা পড়লেন যুবক       ঠাকুরগাঁওয়ে নিখোঁজের ২ দিন পরে ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার       ছুটি বাড়ল সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে       ডিমলা উপজেলা নির্বাচন॥ এমপির ভাই, ভাতিজা ও ভাতিজি বউ প্রার্থী-তৃণমূলে ক্ষোভ       কিশোরী গৃহকর্মীকে খুন্তির ছ্যাকা; রংপুর মেডিকেলে মৃত্যু যন্ত্রণায় পাঞ্জা লড়ছে নাজিরা      

 width=
 

রংপুরে পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে শিক্ষার্থীরা

বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বিকাল ০৫:০০

সরেজমিনে গিয়ে ছাত্রাবাসটির বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখা যায়, কক্ষগুলোর ভেতরে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, নেই পর্যাপ্ত আলো। দেয়াল জুড়ে জন্মেছে নানা আগাছা, পলেস্তার খসে পড়ে উঁকি দিচ্ছে দেয়ালের ইট। কোনো কোনো কক্ষে নেই জানালা। দরজাগুলো আছে নামমাত্র। দূর্ঘটনা এড়াতে কিছু কক্ষে টিনসেট দিয়ে রাখা হয়েছে। বসবাসের অনুপযোগী ওই কক্ষগুলোতে দুই থেকে চারজন করে ছাত্র থাকছেন। এক কথায় বয়সের ভারে ন্যুব্জ এক কালের এই জমিদার বাড়ি যে কোন মুহূর্তেই ধ্বসে পড়ার আশংকা রয়েছে।

ঠিক কবে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল সে সম্পর্কে পরিষ্কার কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, কমপক্ষে দু’শ বছর আগে এক একর জায়গা নিয়ে নির্মিত হয় বামনডাঙ্গা কালীধামের জমিদার গুরু প্রসন্ন লাহিড়ীর এই জমিদার বাড়ি। এক একরের মধ্যে ৫৪ শতক জায়গার ওপর নির্মাণ করা হয় ভবনটি। এক সময় সেখানে ছিল নাইট কলেজ। ১৯৬৩ সালে রংপুর সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার পর এটি কিছুদিন কলেজ ক্যা¤পাস হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে কলেজ বর্তমান অবস্থানে সরিয়ে নেওয়ার পর থেকেই আজ অবধি ওই ভবনটি ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ রংপুর সরকারি কলেজের ছাত্র মোসলেম উদ্দিনের স্মরণে ছাত্রাবাসের নামকরণ করা হয় শহীদ মোসলেম উদ্দিন ছাত্রাবাস। শুরুতে ছাত্রাবাসে ১০০ ছাত্রের থাকার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এখন কিছু কক্ষের অবস্থা এতটাই খারাপ যে সেগুলোতে আর কোনোভাবেই থাকার অবস্থা নেই। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে অন্য কক্ষগুলোতে ঝুঁকি নিয়েই কোনো রকমে বসবাস করছেন ৬০ জন ছাত্র। ২০১১ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর দু’দফায় ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষনা করে দু’টি রুম সিলগালা করে দেয়। ‘ভবনটি বসবাসের জন্য নিরাপদ নয়’ বলে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ভবনের সামনে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

এদিকে গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সারাদেশের মধ্যে রংপুর ভূমিকম্প ঝুঁকির দিক দিয়ে রয়েছে ১ নম্বরে। রংপুর মহানগরীর শতাধিক ভবন ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে। আর এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকার প্রথমেই রয়েছে এই মোসলেম উদ্দিন ছাত্রাবাস।

ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে কেন অবস্থান করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রাবাসে বসবাসকারী ছাত্র মাহমুদুল হাসান বলেন, মেসে থাকার খরচ বেশি। সেই খরচ চালানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় আমরা অন্য জায়গায় যেতে পারছি না। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ভবনে আছি। তিনি আরো বলেন, এখানে প্রতিটি মুহূর্ত কাটে চরম আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার মধ্যে। কখন ঘটে দুর্ঘটনা। কে হারাবে জীবন। কার হবে বড় ধরনের ক্ষতি, সর্বক্ষন এমন চিন্তা আর ভয় ঘিরে আছে সবার মাঝেই। ছাত্রাবাসের অন্যান্য ছাত্ররাও একই কথা বলেন। তারা দ্রুত মানসম্মত ছাত্রাবাস নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। এই ছাত্রাবাসের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো বরাদ্দ দেয় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রাবাসের মনিটরিং এর দায়িত্বে থাকা নাসির উদ্দিন বলেন, ছাত্রাবাসের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনো বরাদ্দ নেই। ছাত্রদের টাকায় এটি পরিচালিত হয়। তবে বিশেষ দিনগুলো পালনে কলেজ কর্তৃপক্ষ অনুদান দেয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জরাজীর্ণ ছাত্রাবাসে থাকতে ছাত্রদের নিষেধ করা হলেও সেখানে যারা থাকছে, তাদের সরিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষ সক্রিয় উদ্যোগ নিতে আগ্রহী নয়। এর মূল কারণ ভবনটি কলেজের দখলে রাখা। প্রতিষ্ঠার শুরুতেই মোসলেম উদ্দিন ছাত্রাবাসের ভবনসহ এক একর জায়গা লিজ নেওয়া হয় রংপুর কলেজের নামে। ১৯৮৪ সালে কলেজটি সরকারি হয়। সে সময় ওই এক একর জায়গা সরকারি কলেজের নামে লিখে দেওয়া হয়নি। ছাত্রাবাসের পাশের সালাফিয়া মাদ্রাসা তখন জায়গাটি নিজেদের করে নিতে চায়। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কলেজকে ১০০ ছাত্রের আবাসন-সুবিধাসংবলিত একটি ছাত্রাবাস করে দেবে। এর বিনিময়ে এক একর জায়গাটি হবে যাবে মাদ্রাসার এই শর্তে মাদ্রাসার সঙ্গে চুক্তি করে রংপুর সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চুক্তির শর্ত পূরণ করেনি সালাফিয়া মাদ্রাসা। এ ব্যাপারে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মামলা করেন। কিন্তু মামলার রায় সালাফিয়া মাদ্রাসার বিপক্ষে যায়। এরপর থেকেই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাসের জায়গাটি দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে।

সার্বিক বিষয় জানতে ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মোঃ হারুন অর রশীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে এখানে থাকতে ছাত্রদের নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও নিজ দায়িত্বে সেখানে থাকছে বেশ কিছু ছাত্র। মানবিকতার দিকটি বিবেচনা করে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে ঝুঁকি এড়াতে ছাত্রদের জন্য টিন সেটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ছাত্রাবাসের জমিটি কলেজের নামে করে নেওয়ার জন্য ২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছিলো। পরবর্তীতে ভূমি মন্ত্রণালয় রংপুর জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। বর্তমানে এ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রংপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কানিজ উম্মে নাজমা নাসরিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ছাত্রাবাসের জমিটি চিরস্থায়ীভাবে রংপুর সরকারি কলেজের নামে করে নেওয়া এবং সেখানে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ইতিপূর্বে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে এবং মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। এমনকি ছাত্রাবাসের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমি নিজে টিম গঠন করে জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করেছিলাম। জেলা প্রশাসক আশ্বাস প্রদান করেছিলেন দ্রুত ছাত্রাবাসের জমি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। তবে এ সমস্যা সমাধাণের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

মন্তব্য করুন


 

Link copied