আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

সামনে ফয়জুর নেপথ্যে কারা?

সোমবার, ৫ মার্চ ২০১৮, সকাল ০৭:৩৫

 ডেস্ক: পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একাধিক দফায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাস রেকি করেই জনপ্রিয় লেখক জাফর ইকবালকে হত্যার জন্য টার্গেট করা হয়েছিল। তাকে হত্যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই ক্যাম্পাসসংলগ্ন এলাকা টুকেরবাজারের শেখপাড়ার বাসিন্দা ২৪ বছরের যুবক ফয়জুর রহমান ওরফে ফয়জুর ওরফে ফয়জুল হাসান শনিবার ছুরি নিয়ে তার ওপর নৃশংস হামলা চালায়। হাতেনাতে ধরা পড়ার পর ফয়জুরকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব-পুলিশের একাধিক টিম। ফয়জুর স্বীকার করেছে, হামলা চালাতে গিয়ে ধরা পড়লে নিজের প্রাণও যেতে পারে- এটা জেনেশুনেই জাফর ইকবালকে হত্যা করতে যায় সে। উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী হলেও জঙ্গিদের কোনো সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা গতকাল পর্যন্ত স্বীকার করেনি সে। তবে হামলা করে সে মোটেও বিচলিত বা অনুতপ্ত নয়। কারণ তার ভাষায়, 'জাফর ইকবাল ইসলামের শত্রু। তিনি নাস্তিক।' তাই তাকে প্রাণে মেরে ফেলতে চেয়েছে ফয়জুর। পুলিশ-র‌্যাবের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ হামলাকে 'অনাকাঙ্ক্ষিত' উল্লেখ করে বলেন, হামলাকারী কারা, তা আক্রমণের ধরন থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। যারা এ ঘটনাগুলো ঘটায়, তারা ধর্মান্ধ হয়ে গেছে। তারা মনে করে, একটা মানুষ খুন করলেই বুঝি তারা বেহেশতে চলে যাবে। তারা কোনোদিন বেহেশতে যাবে না। এদিকে বিকেলে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের বিক্ষোভ সমাবেশে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, অন্যায়ের বিচার না হওয়ার ধারাবাহিকতায় হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎ রায়সহ ১৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। মুক্তমনা মানুষদের ওপর হামলা ও হত্যার বিচার না হওয়ায়, সরকার কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ড. জাফর ইকবালের ওপরও আক্রমণ হয়েছে। এর দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক বলেছেন, গত দুই বছর নয়, অনেক বছর ধরেই নানাভাবে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কাফনের কাপড় পাঠানো হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা তাদের সঙ্গে পুলিশ থাকে। তিনি অনুভব করেন না হামলার জন্য সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে বা পুলিশকে ব্লেইম করা ঠিক হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বলছেন, হামলাকারী ফয়জুর একজন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে এ হামলার নেপথ্যে অন্য কুশীলব রয়েছে। তারাই প্রশিক্ষণ দিয়ে তাকে হামলার জন্য প্রস্তুত করে তুলতে পারে। তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। হামলাকারী ফয়জুর আনসার আল ইসলাম (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-এবিটি) সদস্যও হতে পারে। শাবিপ্রবি ও আশপাশ এলাকায় এই উগ্রপন্থি সংগঠনের সদস্যদের সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। গত এক বছরে এবিটির সঙ্গে সংশ্নিষ্টতার অভিযোগে শাবিপ্রবির ১২ ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় এই সংগঠনের পক্ষ থেকে জাফর ইকবালকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। অতীতে ড. অভিজিৎ রায়সহ অন্যান্য ব্লগার ও লেখককে এবিটির জঙ্গিরা যে কায়দায় হামলা করেছে, তার সঙ্গে জাফর ইকবালের ওপর হামলার পুরোপুরি মিল রয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী রোববার বলেন, হামলার ধরন বলছে এটি জঙ্গি হামলা। সেটা না হলে কীভাবে এই পরিবেশে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাফর ইকবালের ওপর আক্রমণ করা হলো? দীর্ঘদিনের প্রশিক্ষণ ছাড়া এটা অসম্ভব। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র‌্যাব-৯-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ বলেন, ফয়জুরকে ধরার পর গণধোলাই দেওয়া হয়েছিল। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামলার ব্যাপারে সে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে। এসব যাচাই-বাছাই চলছে। র‌্যাব এ ঘটনার ছায়াতদন্ত শুরু করেছে। ফয়জুরকে পরে পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, হামলার ধরন ও অন্যান্য তথ্য বিশ্নেষণ থেকে এটি জঙ্গিদের কাজ বলে মনে হচ্ছে। সব সন্দেহ সামনে রেখেই তদন্ত চলছে। আগে থেকেই রেকি করে হামলা : দায়িত্বশীল উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, ফয়জুর স্বীকার করেছে, জাফর ইকবালকে টার্গেট করে হামলা করতে কিছুদিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রেকি করে সে। জাফর ইকবাল কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে মিশছেন- তা জানতে অনেক দিন ক্যাম্পাসে যায় সে। এমনকি শনিবার জাফর ইকবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আয়োজনে 'ইইই ফেস্টিভ্যালে' উপস্থিত থাকবেন, তা আগেই জানত সে। ঘটনার দুপুর থেকেই সে ক্যাম্পাস এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে থাকে। বাসা থেকে হেঁটে হেঁটে ক্যাম্পাসে যায় সে। ছুরিটি কোথায় পেয়েছে- এমন প্রশ্নে নিরুত্তর ছিল ফয়জুর। কেউ তাকে হামলার জন্য নির্দেশ দিয়েছে, নাকি অর্থ দিয়েছে? এমন প্রশ্নে সে জানায়, 'পত্রিকায়, টেলিভিশনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে জাফর ইকবালের লেখালেখি ও কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রেখে আসছিল। তার মনে হয়েছে, জাফর ইকবাল ইসলামের শত্রু। সে নাস্তিকতা প্রচার করে। তাই তার প্রতি তার ঘৃণা জন্মায়।' এই ঘৃণা থেকেই জাফর ইকবালকে টার্গেট করে সে। তবে তার অন্য কোনো সহযোগী ছিল কি-না এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হয়নি ফয়জুর। কারও কাছ থেকে অর্থ নিয়ে হামলায় অংশ নেয়নি বলে জানায়। পুলিশের ধারণা, ফয়জুরের সঙ্গে ঘটনাস্থলের আশপাশে তার অন্য সহযোগী থাকতে পারে। সাধারণত জঙ্গিদের একেকটি স্লিপার সেলে তিন থেকে সাতজন সদস্য থাকে। আবার অনেক সেলফ রেডিকালাইজড উগ্রপন্থি এককভাবে হামলা চালায়। শনিবারের হামলার পর ফয়জুরের কাছ থেকে আরও কিছু আলামত পাওয়া গেছে, সেসব পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর ফয়জুর হাসছিল। তখনও তার মাথায় ছিল ব্যান্ডেজ। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মানসিকভাবে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, এত বড় ঘটনার পরও তার চোখে-মুখে চিন্তা বা অপরাধের বিন্দুমাত্র ছাপ নেই। জঙ্গি হলেও তার সঙ্গে আর কারা জড়িত, একজন বহিরাগত হয়েও কার পরিকল্পনায় ক্যাম্পাসে গিয়ে একটি বিভাগের অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে গিয়ে সে ওই হামলা চালাল, সে প্রশ্নের উত্তর এখনও দেয়নি ফয়জুর। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, সামনে ফয়জুর থাকলেও এ হামলার নেপথ্যে রাঘববোয়াল থাকতে পারে। তদন্তে সেটা বের করাই এখন পুলিশের চ্যালেঞ্জ।

মন্তব্য করুন


 

Link copied