আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ● ৫ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কান্নাভেজা প্রধানমন্ত্রী

বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ ২০১৮, বিকাল ০৫:২৫

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পাকিস্তান আমলে পূর্ববঙ্গের মানুষদের বঞ্চনা, বৈষম্যের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর লড়াই, দেশ স্বাধীনের পর তার বিভিন্ন চেষ্টা ও উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার ৪৩ বছর পর গত ১৫ মার্চ জাতিসংঘের পক্ষ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতিপত্র পায় বাংলাদেশ। আর বঙ্গবন্ধু এই অর্জনের কথা জানতে পেরেছেন কি না, সেটা বলতে গিয়েই গলা ধরে আসে প্রধানমন্ত্রীর।

বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীকে এই সংবর্ধনা দেয়া হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশের উন্নয়নের বিষয়ে একটি ভিডিওচিত্র উপস্থাপন করা হয়। এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পুরো প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে জাতিসংঘের স্বীকৃতিপত্র তুলে দেন অর্থমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রী একটি স্মারক ডাক টিকিট এবং পরে ৭০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক নোট উদ্বোধন করেন।

এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বিরোধীদলীয় নেতা, ১৪ দল, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, শিল্পী, সাহিত্যিক খেলোয়াড়, তিন বাহিনীর প্রধান শিশু, প্রতিবন্ধী, শ্রমজীবীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব, দাতা সংস্থা এডিবি, জাইকা, ইউএসএআইডির প্রধানরা বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে ভিডিওবার্তা পাঠান।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে দেশের উন্নয়নের বঙ্গবন্ধুর চিন্তা, তার রাজনৈতিক দর্শন, সপরিবারে জাতির জনককে হত্যার পর বাংলাদেশের উন্নয়ন থমকে যাওয়া নিয়ে কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না, আমার এটাই মনে হয়, আজকে যে বাংলাদেশের মানুষের অর্জন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) কি দেখতে পারেন? তিনি কি জানতে পারেন?’

‘আমি এখানে আসার আগে আমার ছোট বোনের সাথে কথা বলছিলাম, আব্বা যেটা চেয়েছিলেন, তার বাংলার দুখি মানুষের মুখে হাসি ফুটবে, বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে, বাংলাদেশের মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে। আজকে সে সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে। আমরা একটা ধাপ এগিয়ে গেছি।’

পরে নিজেক সামলে নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, হয়ত আমরা ১০ বছরের মধ্যে এই অর্জন করতে পারতাম। সেটা সেটা পারিনি, বহু বছর লেগে গেল, অনেক সময় লেগে গেল।’

‘নিশ্চয় আমার বাবার আত্মার শান্তি পাবে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা, লাখো মানুষের আত্মত্যাগ, নিশ্চয় তাদের আত্মা শান্তি পাবে।’

যেভাবে গ্রাম সাজাতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু

১৯৬৯ সালে লন্ডন সফরে গিয়ে গ্রামের মডেল দেখে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের গ্রামকেও সেভাবে সাজাতে চেয়েছিলেন বলে জানান তার কন্যা।

আগরতল ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের পর বঙ্গবন্ধুর লন্ডন সফরের সময় তার সঙ্গে সেখানে কথোপকথন তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

‘অক্টোবর মাসের ২৩ তারিখ তিনি লন্ডন গিয়েছিলেন। আমি এপ্রিল মাসে আমার স্বামীর কর্মস্থল ইতালিতে গিয়েছিলাম। আমি সেখান থেকে ২২ অক্টোবর লন্ডন চলে আসি।’

‘লন্ডন আসার পর তিনি প্রবাসী বাঙালিরা যে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য সংগ্রাম করেছিল তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, সেই সঙ্গে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়েও কিছু কাজ তিনি করেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই সময় আমরা একবার লন্ডনের বাইরে বেড়াতে যাই। তখন আমি দেখলাম, লন্ডনের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট মডেল ভিলেজ করা আছে। তিনি দুই জায়গায় নামলেন দুটো মডেল ভিলেজ দেখারর জন্য। ছোট ছোট বাড়িঘর, সুন্দর করে সাজানো, তিনি খুব ভালোভাবে ওটা দেখছেন।’

‘আমি তখন বললাম, আব্বা আপনি ছোট ছোট বাড়িঘর করে ভিলেজ করা, আপনি এটা দেখতে চান কেন?’

“আমাকে বললেন, ‘আমাদের দেশটাকে আমরা ঠিক এইভাবে সুন্দরভাবে সাজাব, এইভাবে গড়ে তুলব। খুব পরিকল্পিতভাবে গ্রামকে প্রতিটি গ্রামকে আমরা গড়ে ‍তুলব।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘তার ভেতরে যে আকাঙ্ক্ষাটা ছিল, এটা থেকেই তার এটা প্রতিফলিত হয়। কাজেই স্বাভাবিকভাবে কার কাছাকাছি থেকে তার যে চিন্তাভাবনা যেটা জানার আমার সৌভাগ্য হয়।’

‘আব্বার কাছে রাজনীতি শিখেছি’

বঙ্গবন্ধুর শেখানো আদর্শে রাজনীতি করে যাওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। আর এর ফলেই বাংলাদেশের আজ অর্জন এসেছে বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য ছিল, আব্বার কাছ থেকে নানা সময় জানতে পারতাম তার আকাঙ্ক্ষার কথা। তিনি গল্প করতেন, বলতেন তিনি বাংলাদেশকে কীভাবে দেশ গড়ে চান।’

‘যে রাজনীতি বাবার কাছ থেকে শিখেছি, জনগণের কল্যাণ, জনগণের উন্নয়ন, জনগণের স্বার্থে কাজ করা।’

‘নিঃস্বার্থভাবে, নিজের ভাগ্য রচনা না, নিজের ভোগ বিলাস না, জনগণ যেন ভালো থাকে, সুখী থাকে, সেটাই লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি বলেই আজকে এই অর্জনটা করা সম্ভব হয়ে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে অনেক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাজনীতি করে। কেউ নেতা হবে এবং নিজেদের ভাগ্যটা গড়বে, নিজের আর্থ সামাজিক উন্নতিটা হবে, উচ্চাভিলাস চরিতার্থ হবে, ক্ষমতাটা উপভোট করবে।’

‘কিন্তু আমার কাছে রাজনীতি, যে রাজনীতি আমি শিখেছি বাবার কাছ থেকে, আমার মায়ের কাছ থেকে, সে রাজনীতি হলো জনগণের জন্য কাজ করা, জনগণের কল্যাণ করা, নিজের ভাগ্য উন্নয়ন না, জনগণের ভাগ্য উন্নয়ন করা। জনগণের স্বার্থ দেখা, জনগণকে একটা সুন্দর জীবন দান করা।’

জনগণকে ধন্যবাদ, আওয়ামী লীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময় বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা।

সে কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে বলেন, ‘সেই বাঁচা যে কত বিষন্নের, কত কষ্টের, সেটা যারা আপনজন হারিয়েছে, শুধু তারাই উপলব্ধি করতে পারবে।’

‘এই কষ্ট, দুঃখ, ব্যাথা নিয়েও ছয়টি বছর আমাদেরকে রিফিউজির মতো বিদেশে কাটাতে হয়েছে।’

‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই জনগণের প্রতি, আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই আমার সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি যারা আমার অবর্তমানেই ১৯৮১ সালে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের সমর্থন যখন অর্জন করি, তখন সেই সময়েল সামরিক জান্তা শত বাধা দিয়েও আটকে রাখতে পারেনি, আমি দেশে ফিরে আসি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতটুকু অর্জন, আমি মনে করি, বাংলার জনগণের। এই জনগণের কাছ থেকে যদি আমি সাড়া না পেতাম, সাদের সমর্থন যদি না পেতাম, তারা যদি ভোট দিয়ে আমাদের বিজয়ী না করত, তাহলে আমি তো ক্ষমতায়ও আসতে পারতাম না।’

মন্তব্য করুন


 

Link copied